আপডেট : ২৪ February ২০১৯
পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এতদিন হুমকি-ধমকির মধ্যে তা সীমাবদ্ধ থাকলেও দুই দেশের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলমান উত্তেজনার মধ্যেই গতকাল শনিবার জম্মু-কাশ্মিরে আধাসামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত একশো কোম্পানি সদস্য পাঠিয়েছে ভারত। হামলার পর থেকে সীমান্তবর্তী ওই রাজ্যে সাঁড়াশি অভিযান চলার মধ্যেই অতিরিক্ত এসব সেনা পাঠানো হলো। গত শুক্রবার রাতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, অতিরিক্ত একশো কোম্পানি (প্রায় ১০ হাজার) সেনা শ্রীনগরে পৌঁছেছে। সেখানে আগে থেকেই কয়েক লাখ সেনা মোতায়েন থাকার পরও নতুন করে কেন এত সেনা পাঠানো হলো সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি বিবৃতিতে। খবর ডন, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি ও বিবিসি। পাকিস্তান-ভারত নিয়ে শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, চিন্তিত সারা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশ দুটির কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বিপজ্জনক পর্যায়ে আছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমরা চাই এটা থামুক। এই দুই দেশের মধ্যে যা চলছে, তা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। এর ফল ভোগ করতে হবে সবাইকে। জঙ্গি হামলায় কতগুলো মানুষ মারা গেলেন। এটাকে কেন্দ্র করে আবার হামলা-পাল্টাহামলা হলে আরো অনেক প্রাণ যাবে। আমরা চাই এটা বন্ধ হোক অবিলম্বে। শুক্রবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, হামলায় ভারতের প্রায় ৫০ জন মারা গেছে। আমি এই অনুভূতিটা বুঝতে পারি। ভারত এখন অত্যন্ত শক্তিশালী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা দুই দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছি, এই বিষয়ে কথা হচ্ছে। শুধু আমরাই নই, অসংখ্য মানুষ এ নিয়ে কথা বলছেন। সবাই চান এ ব্যাপারটির একটি ইতিবাচক নিষ্পত্তি হোক। দুই পক্ষেরই ভারসাম্য রেখে চলা দরকার। চিরবৈরী সম্পর্কের দেশ দুটির মধ্যে পুলওয়ামা হামলাকে কেন্দ্র করে নতুন করে বহু সমস্যার জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে ২৫ শতাংশ সিট খালি করতে বলেছে। অন্যদিকে ভারতও কাশ্মির সীমান্তে ২৭ গ্রাম খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কাশ্মির ইস্যুতে ইতোমধ্যে দুটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে পাকিস্তান ও ভারত। এছাড়া সীমান্তে নিয়মিত হামলা-পাল্টাহামলা চলতে থাকে। পুলওয়ামাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের প্রস্তুতি নিয়ে তৃতীয় যুদ্ধ বাধা সময়ের ব্যাপার বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। সীমান্তের কাছে ২৭ গ্রামে গোপন নির্দেশিকা জারি করেছে ভারত। নোটিশে ওই গ্রামগুলো খালি করার জন্য সব প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সীমান্তে ব্যাপক শেলিং হয়েছে। এরপরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামবাসীকে বলা হয়েছে, তারা যেন শুধুই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে স্কুল বা কোনো সরকারি ভবনে আশ্রয় নেয়। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার সীমান্ত (এলওসি) এলাকা পরিদর্শন করেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। এ সময় তিনি ভারতকে সতর্ক করে বলেন, যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের সমুচিত জবাব দেবে তার সেনারা। খবরে বলা হয়, ভারতীয় যেকোনো পদক্ষেপের জবাব পূর্ণ শক্তি দিয়ে দিতে সেনাবাহিনীকে অনুমতি দেওয়ার পরদিনই সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি এবং সেনাদের মনোবল পর্যবেক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করলেন জেনারেল বাজওয়া। এ থেকেই বোঝা যায়, প্রতিপক্ষের জন্য কতটা প্রস্তুতি নিয়েছে পাকিস্তান। চিরিকট ও বাগসার সীমান্তে সেনাদের উদ্দেশে বাজওয়া বলেন, পাকিস্তান একটি শান্তিকামী দেশ। আমরা কারো হুমকি বা আতঙ্কের কারণ হব না। তবে যেকোনো আগ্রাসন বা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার যথোচিত জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। এর আগে একই দিন পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) মুখপাত্র মেজর জেনারেল আফিস গফুর বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে প্রাণ হারান নিরাপত্তা বাহিনীর ৪৪ সদস্য। পরে হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে নয়াদিল্লি। তবে শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইসলামাবাদ। এমন প্রেক্ষাপটে জইশ-ই-মোহাম্মদের সদর দফতরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১