আপডেট : ১৬ February ২০১৯
রাজধানীতে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে দইয়ের দামটা বেশিই থাকে। তাই অনেকে রাস্তার পাশে ভ্যানে করে নেওয়া বিক্রেতার কাছে দই কেনে। এসব দই আবার বিকিকিনিও হয় বেশ। রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেট সন্ধ্যা থেকেই জমজমাট হতে শুরু করে। মার্কেটের পেছনের রাস্তায় ভ্যানে বসা এক দই বিক্রেতার সামনে ভিড়। ছোট মাটির কাপে দই আর এক কেজি দইয়ের হাঁড়ি। অনেকেই আবার সেখানেই কাপের দই খাচ্ছে। দই বিক্রেতার নাম আবু সাঈদ। বাড়ি বগুড়ার শেরপুরে। দুই খাঁচা দইয়ের হাঁড়িতে ভর্তি। সাঈদকে পুরো সপ্তাহে দেখা যায় না। সপ্তাহে দু’দিন ঢাকায় থাকে সে। বাকি পাঁচ দিন বাড়িতেই থাকে। সেখানে জমিতে চাষ করে। আবার বাসায় দই বানায়। মনে কৌতুহল জাগে সাঈদকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সকালে বাসে করে সে বগুড়া থেকে ঢাকায় আসে। শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত থেকে রাতের বাসে আবার বগুড়ায় চলে যায়। এর মধ্যে সব দই বিক্রি হয়ে যায় বলে জানায় সাঈদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে তালতলা মার্কেটের পেছনে দই বিক্রি করে। আর শুক্রবার তালতলা শাহী মসজিদের সামনে সকাল থেকে জুমা পর্যন্ত দই বিক্রি করে। বগুড়া থেকে এতদূর আসার কারণ সম্পর্কে সাঈদ বলে, ‘ঢাকায় আসলে দই বিক্রি করলে ভালো একটা লাভ থাকে। তাই এতদূর আসি যতই কষ্ট হোক।’ ছোট মাটির কাপের দই একটু চেখে দেখলাম। খেতে ভালোই লাগে। জিজ্ঞেস করলাম, বানাও কীভাবে? সাঈদ বলল, ‘প্রথমে আমরা গ্রাম থেকে গরুর দুধ সংগ্রহ করি। এই দুধ প্রথমে ছয় ঘণ্টা জ্বাল করি পাতিলে। ভালোমতো জ্বাল হওয়ার পর সেই দুধের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে আরো প্রায় দেড় ঘণ্টা জ্বাল করি। এভাবে জ্বাল করার পর দুধ চুলা থেকে নামাই। তারপর পুরো দুধ ছেঁকে ফেলি, যাতে কোনো ময়লা না থাকে। সেই দুধ চুলার পাশে সাজানো মাটির হাঁড়িগুলোতে ঢালি। তবে পাতিলে এক থেকে দেড় কেজি দুধ আলাদা রাখি। এই দুধের মধ্যে আগের বানানো দই পরিমাণমতো দেই। যাকে আমরা বীজ দই বলে থাকি। এবার সেই বীজ দই পাতিলে থাকা জ্বাল দেওয়া দুধের মধ্যে ঢালি। বীজ দই হিসাব করে পরিমাণমতো দিতে হয়। কমও দেওয়া যাবে না, আবার বেশিও দেওয়া যাবে না। এ মাপটা দই বানাতে বানাতে আপনা আপনি হয়ে যায়। তারপর লাকড়ির চুলার নিভু নিভু জ্বালে চারপাশের দইয়ের হাঁড়িগুলোসহ পুরোটার ওপর বাঁশ-পেপার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এভাবেই দই তৈরি হয়।’ সাঈদের কাছে পুরো প্রক্রিয়া শুনে বোঝা গেল, দই বানানো নেহাত সহজ নয়। পরিবারে একটিমাত্র সন্তান তার। বয়স কেবল ছয়। দই বানানোটা পৈতৃক সূত্রে পেয়েছে সাঈদ। দামও হাতের নাগালে। কাপ দই ২০ টাকা আর হাঁড়ির দই (এক কেজি) ১২০ টাকা। দোকানের তুলনায় দামটা কম। এর কারণই বা কী? জবাবে সাঈদ বলল, ‘আমার এত লাভের দরকার নেই স্যার। যা পাই তাতেই খুশি। আমার বগুড়ার ঐতিহ্য ঠিক থাকলেই হয়। আমাগোর দই পুরা দেশ না বিদেশেও বিখ্যাত।’ এরই মধ্যে আরো খদ্দের ভিড় করল দই কেনার জন্য। সাঈদ আবার দই বিক্রি করতে শুরু করল। খুশিতে বলতে লাগল- ‘লন, লন, বগুড়ার দই, এক নাম্বার দই, দই...
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১