আপডেট : ০৮ January ২০১৯
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসায় বেকার তরুণরা আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে। একটি বিপ্লবের সম্ভাবনায় ৩০ বছর পার করা বেকার যুবকরা আশার দিন গুনছেন এখন। তারা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবেন পরিবারের হাল ধরবেন। পরিবার একটি নতুন ভোরের সূর্যে আলোকিত হবে। সবার মুখে হাসি ফুটবে। আর বেকার ছেলেটিকে বা মেয়েটিকে চাকরি না পাওয়ার হতাশায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে না। নিশ্চিন্তে পড়াশুনা শেষ করে বার বার চাকরি পরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও একটা না একটা চাকরি অবশেষে মিলবেই। মানুষ কত বার আর ব্যর্থ হয়? কেননা একটি ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে এবার— চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ হোক এমনটাই প্রত্যাশা সবার। তবে চাকরিপ্রার্থীরা বয়স তুলে দেয়ার পক্ষে নয় কেউই। এ ধরনের বিষয় পুনঃবিবেচনার দাবি রাখে। এবার আসি আসল কথায় আমরা বাঙালি আমাদের কিছু চারিত্রিক সমস্যা আছে। আমরা অনেক কিছুই গোপন রাখতে চেষ্টা করি, অনেক ক্ষেত্রেই মিথ্যার আশ্রয় নেই। এর একটি প্রতিফলন ঘটাই বয়সের ক্ষেত্রে সচেতনভাবে এবং অবচেতনভাবে। যেখানে একজন শিক্ষার্থীর স্নাতক-স্নাতকত্তোর শেষ করতে ২৫-২৬ বছর লাগার কথা কিন্তু সেখানে অধিকাংশের দেখা যায় ২০-২১ বছর মাত্র। মনে হয় তারা প্রসূত হয়েই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এই যে ব্যাপক পরিমাণ শিক্ষার্থী এদের জন্য যারা সঠিকভাবে আসে তারা পিছিয়ে পড়ে। কেননা এই ২০-২১ বছরদের সাথে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হয়। তারা ব্যর্থ হলেও সমস্যা নেই কেননা তাদের বয়স আছে কিন্তু এরা ব্যর্থ হলে হালে পানি থাকে না। তাই ৩৫ বছর করা যাবে শুধু এদের কে বাঁচানোর জন্য যারা সঠিক বয়স দিয়েছেন সার্টিফিকেটে। কিন্তু তার পরবর্তীতে যে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে সেটি হলো ইউনিয়ন পরিষদের যারা এ বিভাগে দায়িত্বে আছেন তাদের কঠোর নজরদারি করতে হবে। সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। যারা জন্মের পর পরই তার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে বর্তমান এই অভিশপ্ত তরুণ শ্রেণি পার হলেই পরবর্তী প্রজন্ম বেঁচে যাবেন তখন ৩০ কিংবা ৩৫ যে কোনোটাই হবে উত্তম এবং গ্রহণযোগ্য। কেননা এ অভিশপ্ত শ্রেণির অধিকাংশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পাসের সময় তার শিক্ষক ইচ্ছামত বয়স দিয়ে জন্মনিবন্ধন এবং সার্টিফিকেট তৈরি করে দিয়েছেন, অনেকে আরো পরে। অথচ একটি দেশের অন্যতম সম্পদ কিন্তু আগামীর তরুণরাই। এদের সঠিকভাবে ব্যবহার করে বিশ্বের অনেক দেশের আজ উন্নতি হচ্ছে। লাভবান করছে নিজেদের দেশকে। শক্তির দিক দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে তারা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা ভিন্ন। কারণ আমাদের দেশে তরুণদের নিয়ে সাড়া জাগানোর মতো কিছু তৈরি হয়নি। তরুণদের প্রত্যাশা অনেক আছে। কিন্তু প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে বিশাল ব্যবধান। এই ব্যবধান ঘোচাতে এখন নতুন সরকারকে কাজ করতে হবে। কিন্তু সে কাজের পথ মোটেই সহজ নয়। ওই কন্টকাকীর্ণ পথকে সঙ্গী করে সাফল্যের ধারায় এগিয়ে যেতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারকে। আর এ জন্যই দেশের ইতিহাসে প্রথমবার গত নির্বাচনের আগে তরুণদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানতে চেয়েছেন তরুণরা কেমন বাংলাদেশ চেয়েছে। নিঃসন্দেহে খুব ভালো একটি উদ্যোগ বলতেই হয় এটা। তবে তরুণদের চাওয়াটা কতটা পূরণ হবে সেটাও চিন্তার বিষয়। দেশের প্রশাসন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই— আজকের তরুণরা মুখের কথা বিশ্বাস করে না তারা এখন কাজে বিশ্বাস করে। তাদের এখন আশ্বাস দিয়ে কোনো লাভ নেই। বড় কষ্ট লাগে যখন দেখি আমাদের দেশে তরুণ বেকারের সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অধিক। এই বেকার তরুণদের মাধ্যমে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এদের চিন্তা চেতনা আর বুদ্ধি যদি কাজে লাগাতে পারে রাষ্ট্র তবে বাংলাদেশ পরিণত হবে সোনার বাংলায়। বর্তমান তরুণ সমাজ এটাই চায়। বর্তমানে দেশের শিক্ষিত তরুণদের একটা বড় অংশই বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। সুতরাং সদ্য নির্বাচিত সরকারের সর্বপ্রথম কাজ হবে এইসব তরুণক বেকারত্ব নামক অভিশাপ থেকে বের করে এনে কর্মমুখী জীবনে প্রবেশ করানো। এই কাজটি মোটেও সহজ নয়। তবুও সেটা করতেই হবে। দেশে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে প্রকৃতপক্ষে কর্মের কোনো সংযোগ নেই। এজন্য শিক্ষাজীবন শেষ করার পর অনেক তরুণ কর্মজীবনে প্রবেশ করে খেই হারিয়ে ফেলছেন। তারা হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছেন সহজেই। তাদের এই অন্ধকার জগৎ থেকে বের করে আনার জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করে কীভাবে আরো যুগোপযোগী করা যায় সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। লেখক : শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১