আপডেট : ০৭ January ২০১৯
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে দীর্ঘ ২৭ বছর পর বসলেন একজন পুরুষ রাজনীতিবিদ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় বিরোধী দল এখন জাতীয় পার্টি। তাই এবারের বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দীর্ঘদিন পর কোনো পুরুষ বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ায় গর্বিত তিনি। সর্বশেষ চতুর্থ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রব। এরপর থেকে বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ারে নারীরাই দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদেও এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিশাল জয় পেয়েছে। ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পেয়েছে ২৫৭টি আসন। নির্বাচনে ২২ আসন পেয়ে সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় পার্টি। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৩৪ আসন পেয়েছিল দলটি। যদিও ওই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন এরশাদ। কিন্তু তার মনোনয়নপত্র বাতিল না হওয়ায় তিনিও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হলেও তাদের তিনজন সদস্য মন্ত্রী পরিষদের দায়িত্বে ছিলেন। এরশাদ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মহাজোটের অংশীদার জাপার অবস্থান কী হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে ভোটের ফল আসার পর থেকেই। গত বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ ও কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ ২১ জন সংসদ সদস্য শপথ নেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে ওইদিন শপথ নিতে যেতে পারেননি সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ। এ অবস্থায় গত ৪ জানুয়ারি এরশাদ দলীয় নেতাকর্মীদের দেওয়া এক নির্দেশনায় বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে থাকবেন এরশাদ নিজেই, উপনেতা হবেন কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। নির্দেশনায় এরশাদ জানান, জাতীয় পার্টির কোনো সংসদ সদস্য মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হবেন না। আজ নতুন মন্ত্রিসভায় ২৪ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী ও ৩ উপমন্ত্রী শপথ নিতে যাচ্ছেন। এখানে জাতীয় পার্টির কোনো সদস্যের নাম নেই। এদিকে, গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ গ্রহণ শেষে সংসদ ভবনের তৃতীয়তলায় বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ে এবং বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ারে বসেন এইচএম এরশাদ। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে শপথ নিতে পেরে আমি গর্বিত। এইচএম এরশাদ বলেন, বিরোধী দলের নেতার পদকে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও দলের চিফ হুইপের পদকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য নতুন আইন করতে আমরা স্পিকারের কাছে অনুরোধ জানাব। বিরোধী দল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রেখে সংসদকে প্রাণবন্ত করার চেষ্টা করব। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারও বিরোধী দল থেকে নেওয়া হয় সে আবেদনও সরকারের কাছে করা হবে। তিনি বলেন, আমরা সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হতে চাই। এ বিষয়ে সব ধরনের চেষ্টা আমার অব্যাহত থাকবে। সংসদীয় কার্যপ্রণালী মেনে আমরা কাজ করব। কথায় কথায় ওয়াকআউট করব না। এ সময় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা হেসে এরশাদকে উদ্দেশ করে বলেন, স্যার দীর্ঘ ২৭ বছর পর আপনিই কোনো পুরুষ বিরোধীদলের নেতা হলেন। এ সময় জাপা কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ফখরুল ইমাম, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, পীর ফজলুর রহমান ও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে অসুস্থ এরশাদ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে হুইলচেয়ারে করে গিয়ে শপথ নেন। শপথ শেষে তিনি হুইলচেয়ারে করেই সংসদ ভবন ছাড়েন। আবার সিএমএইচে চলে যান। জানা গেছে, দ্বিতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান মিয়া, তৃতীয় জাতীয় সংসদের শেখ হাসিনা, চতুর্থ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রব, ৫ম শেখ হাসিনা, ৭ম খালেদা জিয়া, ৮ম শেখ হাসিনা, ৯ম খালেদা জিয়া এবং দশম সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন বেগম রওশন এরশাদ। ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর এ পর্যন্ত সাতটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছয়টিতেই ধারাবাহিকভাবে কখনো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, আবার কখনো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, ১৯৯৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। সেই সংসদে বিএনপি ২৭৮টি আসনে জয়লাভ করেছিল, একটি আসনে জিতেছিল ফ্রিডম পার্টি। আর ১০টি আসনে জিতেছিল স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনার পর পরই সেই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ১৯৯৬ সালেরই জুনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে তাতে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। সেই সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপি ফের ক্ষমতায় ফেরে আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিরোধীদলের নেতা হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০০৮ সালে। তখন খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। সেই সংসদে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফেরে। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন জাতীয় পার্টির নেতা রওশন এরশাদ। একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সাবেক সেনা প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরপর ১৯৮৬ সালে এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করে, পরে এ দলের মনোনয়ন নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুথানের মুখে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১