আপডেট : ০৫ January ২০১৯
জাল টাকা দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট হুমকি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে এই জালিয়াত চক্র বর্তমানে ব্যাপকহারে তাদের জাল বিস্তার করেছে। অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে তারা টাকা জাল করে বাজারে ছাড়ছে। দেখতে হুবহু আসল টাকার মতোই; কিন্তু পুরোটাই নকল। সারা দেশে অনেক জাল টাকা তৈরির কারখানার খবরও ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। সম্প্রতি তেমনই একটি কারখানার সন্ধান পেয়েছে র্যাব-১০। গত বৃহস্পতিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর পোস্তগোলার রাজাবাড়ী এলাকায় জাল টাকা তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে র্যাব সদস্যরা নারীসহ দুজনকে আটক করে। সম্পর্কসূত্রে এরা স্বামী-স্ত্রী বলে জানায়। একই সঙ্গে তারা দেশি-বিদেশি জাল নোট তৈরির সরঞ্জামাদিসহ উদ্ধার করে ৯ লাখ দেশি ও ১ লাখ ভারতীয় রুপি। তবে কাজ সম্পন্ন হয়নি এমন আরো ৩ লাখ রুপি পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আটক স্বামী-স্ত্রী জানায়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এগুলো ভারতে পাচার হতো। তাছাড়া এসব জাল নোট বিভিন্ন ব্যাংক, দোকান— বিশেষ করে কাঠের ব্যবসায় লেনদেন করা হয়। ইতোপূর্বে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, টাকা জাল করার প্রতিটি কারখানায় ঘণ্টায় প্রায় দুই লাখ টাকার জাল নোট তৈরি হয়। ব্যাপক হারে এসব নোট বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে অসাধু চক্র। জাল টাকা তৈরি ও বিপণন ফৌজদারি অপরাধ। এতে জড়িতদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে অপরাধী চক্র ঠিকই অপরাধ করে যাচ্ছে। এসব অপরাধীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগাযোগ থাকার তথ্যও রয়েছে। জানা যায়, কিছু জঙ্গি সংগঠনের ব্যয় নির্বাহ হয় এই জাল টাকা দিয়ে। জাল টাকার বিস্তার রোধ করতে না পারলে বিপর্যস্ত হবে সাধারণ মানুষের জীবন। এসব অপরাধীর অনেককে পাকড়াও করা হলেও তারা আবার জামিনে বেরিয়ে এসে একই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আইনের ফাঁক থাকায় এই ঘৃণ্য অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। এদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সাক্ষীর অভাবে তা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। আর এভাবেই জালিয়াত চক্র সহজেই বড় ধরনের অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে— কীভাবে জালিয়াত চক্রের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। যাতে কেউ আর এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সাহস না পায়। জাল নোটের অবারিত বিস্তারে আসল টাকার মূল্য কমে যায়। মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয় এবং মুদ্রার ওপর আস্থা নষ্ট হয়। ফলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। অতীতেও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ পরিস্থিতিতে দেশের কাগুজে মুদ্রার নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো ভাবতে হবে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাংকিংয়ের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ডিজিটালাইজড করা প্রয়োজন। ব্যাংক ব্যবস্থায় জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও কাজ করা জরুরি। আমরা আশা করছি, এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা আরো বেশি উদ্যোগী হয়ে জাল টাকার বিস্তার রোধে যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন। এ ধরনের আটকের ঘটনা স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এই অপতৎপরতা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরো কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখবেন, আশা রাখি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১