বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৭ December ২০১৮

যাত্রা : ২০১৮

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বছর


মিলন কান্তি দে

সাম্প্রতিক যাত্রাশিল্পের অবস্থা খুবই নাজুক। প্রশাসনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রদর্শনীর অনুমতি তেমন মিলছে না; অন্যদিকে অনুমতি-পাওয়া কিছু যাত্রানুষ্ঠান অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছে। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রাশিল্পীদের। নানাবিধ সমস্যায় যাত্রা প্রদর্শনীর ধারাবাহিকতা না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্থকষ্ঠে পড়তে হয় তাদের। এই হতাশা-অনিশ্চয়তার মধ্যে শেষ হচ্ছে বর্তমান বছর ২০১৮। বছরটিকে সংশ্লিষ্ট মহল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বছর হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নিবন্ধনপ্রাপ্ত ১০৬টি যাত্রাদলের মধ্যে এবার সংগঠিত হয় মাত্র ২১টি। তবে ৫ মাসের মধ্যে ১০টি দলের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে। ৯টি দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত কোনক্রমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। এগুলো হচ্ছে যশোরের আনন্দ অপেরা, মাগুরার চৈতালি অপেরা ও মধুছন্দা যাত্রা ইউনিট, খুলনার স্বদেশ অপেরা, সাতক্ষীরার নিউ প্রতিমা অপেরা, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র অপেরা এবং পারুল অপেরা। পারুল অপেরা রাতভর যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্যগীত চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাবনার বেড়া, কাশিনাথপুর এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া- এসব এলাকায় হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কিছু ভুঁইফোঁড় দলের বিকৃত রুচির পরিবেশনা ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে দারুণভাবে।

বছরের গোড়ার দিকে যশোরের সাগরদাঁড়ির মধুমেলায় নিউ প্রতিমা অপেরা, বরিশালের বানারীপাড়ায় সূর্যমণি মেলায় চৈতালী অপেরা এবং নওগাঁর গুদি শহরে আনন্দ অপেরার পালা মঞ্চায়িত হয়। ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় পরিবেশিত হয় শিখা নাট্যগোষ্ঠীর ‘মা-মাটি-মানুষ’। ঢাকা শহরের চারটি যাত্রাদল দেশ অপেরা, লোকনাট্য গোষ্ঠী, চারণিক নাট্যগোষ্ঠী এবং জয়যাত্রা। ২৫ মার্চ সারা বছরে জয়যাত্রা মাত্র একটি পালা মঞ্চায়ন করে শিল্পকলা একাডেমিতে- ‘প্রীতিলতা’। একুশে পদকপ্রাপ্ত যাত্রাশিল্পী জ্যোৎস্না বিশ্বাসের চারণিক নাট্যগোষ্ঠীও একটি যাত্রাপালা মঞ্চায়ন করে। ‘মহীয়সী কৈকেয়ী’ নামে পালাটি মঞ্চস্থ হয় রাজারবাগ বরদেশ্বরী শ্রীশ্রী কালীমন্দিরে, ত্রিনয়নী নাট্যোৎসবে। তাপস সরকারের লোকনাট্য গোষ্ঠী শ্রীশ্রী গীতাসংঘের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মঞ্চায়ন করে ‘কুরুক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণ’ নামে পালাখানি। এটি পুনঃমঞ্চস্থ হয় ২৬ নভেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে। এ দলের গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা মঞ্চায়িত হয় মানিকগঞ্জের বিজয় মেলায় এবং পরে আগারগাঁও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালায়। এদেশের একটি উল্লেখযোগ্য দল দেশ অপেরা। গবেষণা ও সমাজ-সচেতন দল হিসেবে এর স্বীকৃতি আছে। এ বছর ১২টি স্থানে ৬টি যাত্রাপালা পরিবেশন করেছে দেশ অপেরা। ২৬ জানুয়ারি সোনারগাঁ জাদুঘরে লোক ও কারুশিল্প মেলায়, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলি মোস্তফা-হাকীম ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণে, ১৫-১৬ ডিসেম্বর যথাক্রমে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে এবং যশোরের টাউন হল মাঠে মঞ্চায়ন হয় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা যাত্রাপালা ‘বাংলার মহানায়ক’। দুটি নতুন পালা এ বছর মঞ্চে নিয়ে আসে দেশ অপেরা। একটি হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ‘রক্তে রাঙানো বর্ণমালা’, মঞ্চস্থ হয় ১৯ ফেব্রুয়ারি, শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে। আরেকটি হচ্ছে ‘সতী করুণাময়ী’, মঞ্চায়িত হয় রাজারবাগ শারদীয় নাট্যোৎসবে ১৬ অক্টোবর। দেশ অপেরার ২৫ বছর ফূর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ১৪ সেপ্টেম্বর। অনুষ্ঠানে একক অভিনয় প্রদর্শিত হয় ‘আমি অমলেন্দু বিশ্বাস’।

বছরের কয়েকটি আলোচিত ঘটনা : ১৭-৩১ জানুয়ারি ঝিনাইদহ জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও অনিকেত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর যৌথ পরিবেশনায় ১৫ দিনব্যাপী যাত্রা উৎসবের আয়োজন, ১৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষকদের অংশগ্রহণে যাত্রাপালা ‘ঈশা খাঁ’ মঞ্চায়ন, ৯ মে নেত্রকোনায় নেত্রকথন নাট্য সংস্থার উদ্যোগে গুণী যাত্রাভিনেত্রী কৃষ্ণা চক্রবর্তীর স্মরণে সেমিনার, ৩০ ও ৩১ আগস্ট ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে মঞ্চায়িতব্য যাত্রাপালা যাচাই-বাছাই, ৮ ডিসেম্বর প্রবীণ যাত্রাশিল্পী ভিক্টর দানিয়েলের চিকিৎসা সহায়তায় সচেতন যাত্রাশিল্পীদের উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ পালা মঞ্চায়ন, ১০ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে নির্বাচিত ৫টি দলকে ৫টি যাত্রাপালা মঞ্চায়নের দায়িত্ব অর্পণ।

বছরের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ঘটনা : দুস্থ যাত্রাশিল্পী শংকরী হাজারীর পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শিল্পীর চিকিৎসায় পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন।

এ বছর আমরা হারিয়েছি : প্রবীণ যাত্রাভিনেত্রী মানিকগঞ্জের রেখা সিদ্দিকী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের শান্তিলতা দত্ত, বরিশালের এম. আলম, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শিবনগর গ্রামের সুলতান উদ্দিন, একই জেলার গৌরীপুরের সিরাজ, নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার খুরশিমুল গ্রামের ভানু মাস্টার এবং একই জেলার প্রবীণ সঙ্গীত পরিচালক মনিন্দ্র চন্দ্র দাস প্রমুখ যাত্রাশিল্পী-সংগঠককে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১