বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৩ December ২০১৮

তারুণ্যের প্রিয় আড্ডার জায়গা ক্যাম্পাস


আড্ডা মানুষের কর্মব্যস্ত জীবনে একমাত্র মজাদার অবসর। কর্মক্ষেত্র আর পরিবেশ অনুযায়ী প্রত্যেকের আড্ডার স্থান ভিন্ন হয়ে থাকে। অফিস পাড়ায় কেউ, চায়ের দোকানে কেউ, আবার কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। কমবেশি সব বাঙালিই আড্ডা ভালোবাসেন। ক্যাম্পাসে বন্ধুত্ব থেকেই আড্ডা। এখান থেকে শুরু হয় স্বপ্ন দেখা। স্মৃতিময় হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস-জীবন। ছাত্রজীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে থাকে আড্ডা। আর সেই আড্ডা যদি হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, তা হলে তো কোনো কথাই নেই, চলবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ক্যাম্পাস-জীবনে আড্ডা ছাড়া অলস ও অসাড় মনে হয়। বিকেলের আড্ডায় দারুণ এক প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে ক্যাম্পাসে। দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসের বিকালের আড্ডা সম্পর্কে পাঠকদের জন্য আজকের এই আয়োজন।

ঢাবির প্রিয় আড্ডাস্থান : প্রাচীন অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সবসময় মুখর থাকে ক্যাম্পাস। যুগের পর যুগ ঢাবি তার আপন গতিতে ছুটে চলেছে। দিনের সব কর্মব্যস্ততা শেষে ক্যাম্পাসে দেখা মেলে তারুণ্যের আড্ডা। অবসর বিকালে এই আড্ডায় প্রাণবন্ত হয় ঢাবির ক্যাম্পাস। ক্লাস আর পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে দিনের বেশিরভাগ সময় শিক্ষার্থীরা। দিনের শেষভাগে বা গোধূলিলগ্নে অবসরে আড্ডায় মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। ঢাবির প্রিয় আড্ডার জায়গাগুলোতে আড্ডা দিতে চলে আসেন রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

ক্যাম্পাসের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র, মধুর ক্যান্টিন, ডাকসুর ক্যাফেটেরিয়া, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, অপরাজেয় বাংলা, কার্জন হল, হাকিম চত্বর, মল চত্বর বা ভিসি চত্বর জায়গাগুলোতে বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটি আর আড্ডা চলতে থাকে। সন্ধ্যায় যেন বন্ধুত্বের মিলনমেলায় পরিণত হয় ক্যাম্পাসের এই আড্ডার জায়গাগুলো। দুষ্টুমি আর আড্ডাবাজির মধ্যে ভুলে যায় দিনের সব ক্লান্তি। চায়ের কাপে চুমুক দিতেই শুরু হয় জীবনের গল্প। সফলতা-ব্যর্থতা, পাওয়া না পাওয়ার গল্প, গান-বাজনা, তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ক্যাম্পাসের এই আড্ডা চলে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত।

জাবি ক্যাম্পাসে আড্ডাপ্রিয়দের পসরা : বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আড্ডার পসরাও বাড়তে থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। বিকালে যেন আরো প্রাণময় হয়ে ওঠে। সূর্যটা ডুবে যাওয়ার আগে একটু আড্ডা না দিলেই যেন সারাটা দিন মাটি। জাবির প্রিয় আড্ডার জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম বটতলা, টারজান, ক্যাফেটেরিয়া, মেডিকেল, মুক্তমঞ্চ, সপ্তম ছায়ামঞ্চ, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। কোথাও দলবেঁধে গান গাওয়া, কোথাও ক্যারিয়ার নিয়ে কথা আবার কোথাও শুধুই আড্ডা। পেঁয়াজু, বেগুনি, গরম গরম শিঙাড়া, সমুচা জাবির বটতলার বিকালের নাশতা। স্বাদটাও ঠোঁটে লেগে থাকার মতো। জাবির শিক্ষার্থী খাদেমুল হাসান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব আর আড্ডা দেব না এটা ভাবতে পারি না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে কোনো সময় আড্ডা চলবে। সেটা হোক ক্যাম্পাস চত্বরে বা ক্যাম্পাসের পাশের চায়ের দোকানে।

মতিহার চত্বরে আড্ডার পসরা : ক্যামব্রিজ খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। শিক্ষার্থীদের হাসি, আড্ডা, নাচ, গান-বাজনাসহ নানা আড্ডায় সারা বছর মুখর থাকে ক্যাপাস। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আড্ডা চলতেই থাকে। সময়ভেদে আড্ডার পসরার জায়গাগুলো পরিবর্তন হয়। কখনো জোহা চত্বরে, কখনো শহীদ মিনারে আড্ডা না বসলেই যেন ক্যাম্পাস-জীবনটা মাটি মনে করে শিক্ষার্থীরা। আর প্যারিস রোডে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে হাঁটা মিস করতে চায় না কেউই। রাবির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া রহমান জানান, আড্ডাবাজিতে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই রাবির ছাত্রীরা। টুকিটাকি চত্বর, লিচুতলা, কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে শিক্ষার্থীরা বেশি আড্ডা দেয়। তাই আমরা রোকেয়া হল ও রহমতুন্নেসা হলের মাঠে আড্ডা জমায়। আড্ডায় বসে মন মাতানো সব গল্প। এসব গল্পে পড়াশোনাসহ গান-বাজনা, কবিতা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।

অনুষদের খুপরি প্রিয় : চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান তৌহিদ বলেন, আড্ডা ছাড়া অসম্ভব। আড্ডা থেকে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারি। এজন্য ক্যাম্পাসের বাইরেও চলে বন্ধুদের আড্ডাবাজি। বিভিন্ন অনুষদের খুপরি প্রিয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে। আনন্দ-বেদনার কাব্য বলা হয় খুপরিগুলোকে। বিকাল বেলায় খুপরিগুলোতে গানের আসর বসে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজাদ। আড্ডায় মাতিয়ে রাখেন বন্ধুদের। প্রতিদিনের আড্ডায় কেটে যায় জীবন। আমি ভুলে গেলেও ক্যাম্পাস আড্ডার জায়গাগুলো হয়তো আমায় ভুলবে না। খুঁজে পাওয়া শুধু মুশকিলই নয়, এক কথায় অসম্ভবই বলা যায়। ক্যাম্পাসের আড্ডার স্থানগুলোতে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে আড্ডার ফুলঝুরি। আড্ডাবাজদের কাছে প্রিয় আড্ডার জায়গা হলো ক্লাস ও একাডেমিক কাজের ফাঁকে বা পড়ন্ত বিকেলে ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবন ‘বি’ ও ‘ই’ এর টং, ক্যাফেটেরিয়া, ফুডকোর্ট, মুক্তমঞ্চের পেছনে, একাডেমিক ভবন ‘ডি’ এর পেছনে। এছাড়া অর্জুনতলা, কদমতলা, ফুলগাছের ছায়ায় বা লাইব্রেরি ভবনের নিচে চলে দু’দণ্ড জিরিয়ে নেয়ার কাজ আর চটপটি-ফুচকার পার্টি।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যবসায় ছাড়াও আড্ডাবাজি আর আনন্দ বিনোদনে জমজমাট থাকে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তারুণ্যের এ আড্ডা থেকে বেরিয়ে আসে সৃজনশীল নানা মতামত। আর এই আড্ডাপ্রবণ মানুষগুলোই একসময় জীবনের প্রয়োজনে হারিয়ে যায়।

 

জুনায়েদ আলম


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১