বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৮ November ২০১৮

আইনী জটিলতায় অরক্ষিত ৯টি সরকারি জলমহাল

ধর্মপাশায় লুট হচ্ছে লক্ষ-লক্ষ টাকার মাছ


আইনী জটিলতার কারণে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার নামীদামী সরকারী ৯টি জলমহাল অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আর এই সুযোগে গত এক মাস ধরে ওইসব জলমহাল থেকে প্রতিদিন জাল দিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকার মাছ লুটে নিয়ে যাচ্ছে এলাকার এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা।

এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উপজেলার ‘রইছ বিল-বৌলার খাল’ নামক জলমহাল থেকে সেলিম আহম্মেদ ও শাজাহান মিয়া নামে দুই ব্যক্তিকে মাছ ধরারত অবস্থায় আটক করা হয়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ওই দুই ব্যক্তির কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়সহ অবৈধভাবে সরকারি আর কোনো জলমহালে জাল দিয়ে মাছ ধরবেনা এই মর্মে মুচলেকা রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

উপজেলার অরক্ষিত জলমহালগুলো হলো, ধারাম বিল জলমহাল, ধানকুনিয়া জলমহাল, সাইডুলি বিল জলমহাল, চিতলিয়ার কুঁড় জলমহাল, বাচাহানী জলমহাল, বিল লুঙ্গা-তুঙ্গা জলমহাল, শ্রীকালী গ্রুপ জলমহাল, কাউনাই নদী চুনাই নদীর অংশ প্রকাশিত কালাপানি জলমহাল ও রইছ বিল বৌলার খাল নামক জলমহাল।

উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল নীতিমালা অনুযায়ী ২০ একর আয়তনের অধিক সকল সরকারী জলমহাল সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কর্তৃক ৩ বছর অথবা ৬ বছরের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে ইজারায় পত্তন দেয়ার কথা রয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে স্ব-স্ব জলমহালের তীরবর্তী নিবন্ধনকৃত যে সকল প্রকৃত মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি রয়েছে দরপত্র আহবানের পর তারাই শুধু ওইসব জলমহালের টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করতে পারবে এবং পরবর্তীতে কমিটি যাচাই-বাচাই শেষে সর্বোচ্চ করদাতা সমিতির কাছ থেকে ইজারার টাকা বুঝে নিয়ে স্ব-স্ব জলমহালের প্রাপ্ত ইজারাদারকে জলমহালের দখল বুঝিয়ে দেয়ার কথা রয়েছে।

কিন্তু উল্লেখিত জলমহালগুলো নীতিমালা অনুযায়ী ১৪২৫ বাংলা সন হইতে ১৪৩০ বাংলা সন পর্যন্ত উন্নয়ন পরিকল্পনায় ইজারায় বন্দোবস্ত দেয়া হলেও এখনো পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রশাসন উক্ত জলমহালগুলো ইজারা প্রাপ্ত সমিতিগুলোর কাছ থেকে ইজারার টাকা বুঝে না নেওয়ায় এমনকি যথা সময়ে ওইসব জলমহালগুলো ইজারা প্রাপ্ত সমিতিকে দখল বুঝিয়ে না দেওয়ায় সব কটি জলমহালই বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। আর এরই সুযোগে এলাকার এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা দিনরাত ছোট-ছোট নৌকা যোগে জাল দিয়ে ওইসব জলমহাল গুলোতে প্রকাশ্যে প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ওইসব জলমহালগুলোর ইজারা প্রাপ্ত মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে সরকারও কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উপজেলার রইছ বিল বৌলার খাল নামক জলমহালের তীরবর্তী লংকাপাথারিয়া গ্রামের সোনারতরী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, গত ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর উক্ত জলমহালটি উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে ইজারায় বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য আমার সমিতিসহ মোট ৪টি সমিতি দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে। তবে আমার সমিতি ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ১৩৪ টাকায় সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে জলমহালটির ইজারা প্রাপ্ত হয়। কিন্তু ইজরা প্রাপ্ত হওয়ার প্রায় ১ বছর পরও কর্তৃপক্ষ আমার সমিতির কাছ থেকে উক্ত জলমহালের খাজনার টাকা বুঝে না নিয়ে এমনকি সমিতিকে এর দখল বুঝিয়ে না দেওয়ায় জলমহালটি দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এরই সুযোগে জলমহালের পানি কমার সাথে সাথে এলাকার একটি অসাধু চক্র দিন-রাত জাল দিয়ে প্রকাশ্যে জলমহালটির মাছ লুটে নিয়ে সরকারের তথা ইজারাপ্রাপ্ত আমার ওই সমিতিরও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত করে যাচ্ছে।

একই ধরনের মন্তব্য করেন, ধারাম বিল জলমহালের তীরবর্তী দূর্গাপুর গ্রামের তেলকাবিল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির লিমিটেডের সভাপতি মো. আব্দুল মালেক ও ধানকনিয়া জলমহাল সংলগ্ন নূরপুর গ্রামের ধানকুনিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মোহন মিয়াসহ অনেকেই।

এ ব্যাপারে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইউএনও মো. ওবায়দুর রহমান জানান, উক্ত জলমহালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট তহসিলদারগণকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয়ের প্রাপ্ত চিঠির আলোকে ওইসব জলমহালের ইজারাপ্রাপ্ত সমিতিগুলোর দেয়া তথ্য যাচাই-বাচাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো জানান, উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি যাচাই-বাচাই শেষে প্রতিবেদন পাঠানোর পর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১