বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৩ November ২০১৮

৩৮ বছর ধরে পরিত্যক্ত বিমানবন্দর


অনেক সম্ভাবনা থাকার পরও নানা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর। ৩৮ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিমানবন্দরটি। এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে স্টল ভবনের দরজা-জানালা এবং রানওয়ের কাপের্টিং। চুরি হয়ে গেছে সীমানা পিলারসহ তারের বেড়া। গোচারণ ভূমিতে পরিণত হওয়া এ বিমানবন্দরের রানওয়ে এখন ব্যবহার হচ্ছে খেলার মাঠ এবং ধান, গম ও ভুট্টা শুকানোর কাজে। অথচ বিমানবন্দরটি চালু হলে একদিকে যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হতো, অন্যদিকে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে যোগ হতো নতুন মাত্রা।

জানা যায়, ১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পাশে শিবগঞ্জ এলাকায় ৫৫০ একর জমির ওপর বিমানবন্দরটি স্থাপিত হয়। বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার। রানওয়ের পশ্চিম প্রান্তে ১০টি সাব-রানওয়ে ছিল। এতে কয়েক ডজন যুদ্ধবিমান লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা ছিল। পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে এ বিমানবন্দরের সব জমি ‘আর্মি স্টেট’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে সিভিল অ্যাভিয়েশন বিভাগ ১১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। ওই জমিতে বিমানবন্দরের স্টল ভবন ও রানওয়ে রয়েছে। বিমানবন্দরটি নির্মাণের পর বেশ কিছুদিন চালু ছিল। পাকিস্তান আমলেও ত্রাণসামগ্রী পরিবহনসহ জরুরি কাজে এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করা হতো। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল। সে সময় ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে নিয়মিত বিমান চলাচল করত। তখন থেকেই ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদের সঙ্গে ঢাকার বিমান যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন হয়ে পড়ে। কিন্তু ১৯৮০ সালে লোকসানের অজুহাতে বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে জন্য ১ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে মেরামত, টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও বিদ্যুতায়নের কাজসহ বিভিন্ন সংস্কার কাজ করা হয়।

সিভিল অ্যাভিয়েশন তাদের ১১০ একর জমির মধ্যে ৭০ একর জমি স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে লিজ দেয়। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে রানওয়ে ও স্টল ভবন। সরকারি নজরদারি না থাকায় চুরি হয়ে যায় এর সীমানা পিলার ও তারের বেড়া। ১৯৯৪ সালে মেরামতের পর চালু না হওয়ায় আবারো নষ্ট হয়ে যায় রানওয়ের কার্পেটিং ও স্টল ভবনের দরজা-জানালা। গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয় বিমানবন্দরটি। কার্পেটিং উঠে ঘাস গজায়। ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে রানওয়ে। পশ্চিম পাশে তৈরি করা হয় খেলার মাঠ। ক্রিকেট খেলার পিচ হিসেবেও ব্যবহার করা হয় রানওয়ে। এর দুই পাশ অপরিষ্কার হয়ে পড়লেও মাঝ দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল থাকায় কিছুটা পরিষ্কার রয়েছে। সেখানে কয়েক বছর ধরে চলছে প্রতি মৌসুমে ধান, গম ও ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ। এ ছাড়া রানওয়েতে সারা বছর ধান, গম ও ভুট্টাসহ গৃহস্থালি পণ্যসামগ্রী শুকায় স্থানীয়রা। বর্তমানে কয়েকজন রানওয়েতে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে সেখানে ট্রাক্টর গ্যারেজ করে ভুট্টা মাড়াইয়ের মেশিন বসিয়ে ভুট্টা মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছেন। রানওয়েটি ব্যবহার করছেন যে যার মতো করে। রানওয়ের পশ্চিম পাশে রাখা হয়েছে সারি সারি খড় ও ভুট্টা ডাঁটার স্তূপ। স্টল ভবন ঘেঁষে শুকানো হচ্ছে ভুট্টা।

ঠাকুরগাঁওয়ের এসএস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের পরিচালক রফিকুল ইসলাম রোহান জানান, ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা যাওয়ার বিমানের টিকেট অনেক বিক্রি হয়। যে পরিমাণ চাহিদা, আমরা সে পরিমাণ সেবা দিতে পারছি না। টিকেট না পেয়ে মানুষ ফিরে যায়। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু হলে বিমান খাত লাভজনকে পরিণত হবে এবং মানুষ কম সময়ে দ্রুত বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছতে পারবে। অন্যদিকে বিমানবন্দরটি চালু হলে ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এর সুবিধা নিতে পারবেন।

ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ঢাকার ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহ দেখান না। যদি বিমানবন্দর পুনরায় চালু হয়, তাহলে এ এলাকায় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। তখন কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। কার্গো বিমান চালু হলে অন্য জেলা থেকে মালামাল পরিবহন করা যাবে।

ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনসুর আলীর মতে, বিমানবন্দরটি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে আর আলোর মুখ দেখেনি। এটি চালু হলে শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ সুবিধা ভোগ করবে না, আশপাশের জেলার মানুষও সুবিধা ভোগ করবে। তাই এটি চালুর ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহম্মদ সাদেক কুরাইশী বলেন, সড়কপথে ঢাকা যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু হলে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারত।

জেলা প্রশাসক আকতারুজ্জামান সেলিম বলেন, বিমানবন্দর চালু হোক এটা কে না চায়। এখানে বিমানের লোকবল নেই। তাই বন্দরের অবকাঠামো সঠিকভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ইয়াসিন আলী বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা আছে। কিন্তু অনেক অর্থের দরকার। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা লাগবে। আমি এর জন্য চেষ্টা করছি।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১