বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৩ November ২০১৮

সূর্যাপুরী আমগাছ


ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী সীমান্তের মণ্ডুমালা গ্রামে রয়েছে আড়াই বিঘা জুড়ে একটি সূর্যাপরী আমগাছ। হাজার লোকের সমাগমে এ আম গাছটি এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আড়াই বিঘা জমি জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই গাছটি কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এশিয়ার সর্ব বৃহত্তম আমগাছ। প্রতিদিন শত শত মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে এ আমগাছটি দেখার জন্য। এখানে কেউ আসে বনভোজনে, কেউ আসে শিক্ষা সফরে আবার কেউ আসে অলস সময় অতিবাহিত করার জন্য। মন্ত্রী, সচিব, হাই কমিশনার ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন জেলার অসংখ্য মানুষ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী হরিণমারী মণ্ডুমালা গ্রামে ছুটে আসেন আমগাছটিকে একনজর দেখার জন্য। যে আমটির জন্য ঠাকুরগাঁও বিখ্যাত তার নাম ‘সূর্যাপরী’ আম। চমৎকার স্বাদ, সুমিষ্ট এবং ছোট আঁটি বিশিষ্ট আমটির স্বাদ যিনি একবার পেয়েছেন, তিনিই বার বার ছুটে এসেছেন উত্তরের এই শান্ত জনপদে। তবে এ আমের চেয়েও আজ বেশি বিখ্যাত হয়ে আছে, ছবির এই আমগাছটি। কেবল একটি সূর্যাপরী আমের গাছ রয়েছে আড়াই বিঘা জমি জুড়ে। প্রায় দুইশ বছরের অসংখ্য ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে হরিণমারী সীমান্ত এলাকার মণ্ডুমালা গ্রামে এই আমগাছটি দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় ৫০ হাত প্রস্থের প্রবীণ এই গাছটি চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে বিস্তৃত ডালপালা। প্রতিটি ডালের দৈর্ঘ্য ৫০-৬০ হাত। বিরাট জায়গাজুড়ে মাটিতে আসন গেড়ে জবুথবু হয়ে বসে থাকা গাছটিকে দেখলে মনে হয় সারি সারি আমগাছ জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে দেখে কখনো মনে হয় গাঢ় সবুজ টিলায় সেজেছে হরিণমারীর প্রকৃতি। স্থানীয় দুই ব্যক্তি ওয়াহিদুজ্জামান (৪৫) ও সৈয়দ আলম (৩৭) জানান, গাছটির ডালপালা আরো অনেক বেশি ছিল। ঝড়ে ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছুটা কমেছে গাছটির আয়তন। এর বয়স সম্পর্কে কেউ বলেছেন দুইশ, আবার কেউ বলেছেন আড়াইশ বছর। তবে এলাকার বেশিরভাগ মানুষই একমত যে, গাছটির বয়স কিছুতেই দুইশ বছরের কম নয়।

পৈতৃক সূত্রে গাছের মালিক নূর ইসলাম জানান, গত বছর এক লক্ষ টাকা আয় হয়েছিল এ গাছের সূর্যাপুরী আম বিক্রি করে। তিনি আরো জানান, এ বছর আম কিছু কম হয়েছে। তার এ আমগাছের খ্যাতি এ জেলা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। আগামীতে বিদেশি অভ্যাগতদের ভিড়ও দেখা যাবে-এমন আশা ব্যক্ত করলেন বালিয়াডাঙ্গীর সমিরউদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ নৃ-তত্ত্ববিদ বেলাল রব্বানী। নতুন যারাই দূর-দূরান্ত থেকে এ জেলায় একবারের জন্য আসেন, তারা একনজর দেখার জন্য গাছটির কাছে ছুটে যান। ২০১৬ সালের ২৭ মে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বাংলাদেশে উদ্ভিদ বিজ্ঞান সমিতির সহযোগিতায় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় ও তত্ত্বাবধানে সূর্যাপুরী আমগাছের শতবর্ষীর ফলদ ও বৃক্ষ পরিচর্চা বিষয়ক উন্মুক্ত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এ আমগাছটি একটি বিরল গাছ। বাংলাদেশের টুরিস্ট স্পট হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। বহু মানুষ দেশ-বিদেশ থেকে দেখতে আসবে। গাছটির অসাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারণ মানুষের নিকট এই গাছের খবর পৌঁছানো দরকার। গণমাধ্যম সারা দেশের শুধু নয়, সারা পৃথিবীতে এই খবরটি ছড়িয়ে দিতে পারে। গাছটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সচেতন থাকতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. নাসরিন আহমেদ, প্রো ভিসি (প্রশাসন) ড. শহীদ আকতার হুসাইন, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. ইমদাদুল হক, বোটানিক্যাল সোসাইটির মহাসচিব শেখ শামীমুল হক, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নারগিস জাহান, শাহাদাত মোরশেদ, মমতাজ বেগম, মিহির লাল সাহা, জসিম উদ্দিন, নুরুল ইসলাম আশফাক মাহমুদ, আজমল হোসেন ভুইয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সহকারী অধ্যাপক এএমএম গোলাম আদম। এশিয়ার বৃহত্তম আমগাছটির পাশেই এই গাছের ডাল থেকে জন্ম নেওয়া আরো কয়েকটি বিরাট আকারের গাছ বেড়ে উঠছে। ইসলাম উদ্দীনের মতে, ফলনের শর্ত ঠিকভাবে পূরণ করা হলে এই গাছ থেকে অজস্র চারা বানিয়ে জেলার অনেক জায়গায় এমন আমগাছ ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। আর তা হলে আড়াই বিঘা কেন আগামীতে চার বিঘা আয়তনের আমগাছ দেখতে পাওয়াও বিস্ময়ের কিছু হবে না। গাছটি দেখতে হলে ১০ টাকার বিনিময়ে টিকেট ক্রয় করতে হবে। প্রতিদিন ২-৩শ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঈদের বা বিশেষ দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি থাকে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, এ আমগাছটি হচ্ছে লতানো আমগাছ। এ গাছের ডাল কেটে কলম চারা করা হলে এর আবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, এ ঐতিহ্যবাহী গাছটি ঠাকুরগাঁও তথা দেশের সম্পদ। এটিকে রক্ষা করার জন্য সরকার সচেষ্ট। এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যটন কেন্দ্র করার ব্যাপারে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও এ টু আই প্রকল্পের মহাপরিচালক প্রফেসর ড.গওহর রিজভী এ গাছটি পরিদর্শন করেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১