বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৬ November ২০১৮

খলসুনী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে চলনবিলের বহু পরিবার

খলসুনী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে চলনবিলের বহু পরিবার ছবি : বাংলাদেশের খবর


পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিল অধ্যুষিত উপজেলার প্রায় তিন হাজার পরিবার জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে খলসুনী (মাছ ধরার বাঁশের তৈরি ফাঁদ) বিক্রি করে। স্থানীয় ভাষায় একে বাসুন বা ধুদিও বলা হয়। খলসুনী তৈরি করে চলনবিল এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকেন এসব পরিবারের সদস্যরা।

উপকরণ : খলসুনী তৈরির প্রধান উপকরণ হলো তল্লা বাঁশ, তালের ডাগুরের আঁশ ও সুতা। প্রতিপিস তালের ডাগুর ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। বছরে একটি তালগাছ থেকে ২০টির মতো ডাগুর পাওয়া যায়। পাতার অংশ দিয়ে পাখা বানানো হয় এবং গোড়ার অংশ মেশিনে পিশে বের করা হয় চিকন আঁশ। বাঁশ থেকে তৈরি চিকন চিকন শলাকা এ আঁশ দিয়ে বান দেওয়া হয়। 

খরচ : বড়াইগ্রাম উপজেলার চামটা গ্রামের মহরম আলী জানান, এক জোড়া খলসুনী তৈরি করতে বাঁশ, সুতা ও আঁশ বাবদ খরচ হয় একশ টাকা। একজন শ্রমিক তিন দিনে দুটি খলসুনী তৈরি করতে পারেন। তিন দিনের পারিশ্রমিক ৯শ টাকা ধরলে এক জোড়া খলসুনী তৈরিতে খরচ পড়ে এক হাজার টাকা। গাড়ি ভাড়া দিয়ে হাটে এনে একজোড়া খলসুনী ১২০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। তবে আকার ভেদে এক জোড়া খলসুনী ৬শ থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।

কারিগর : পরিবারের নারী-পুরুষ ছেলেমেয়ে সবাই খলসুনী তৈরির এক একজন দক্ষ কারিগর। পরিবারের নারীরা বাড়ির কাজের পাশাপাশি এবং স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত ছেলেমেয়েরা পড়ালেখার পাশাপাশি খলসুনী তৈরির কাজে সহায়তা করে থাকেন।

কীভাবে কোথায় যায় : চলনবিল এলাকার ধারাবারিষা, চাঁচকৈড়, চাটমোহরের অমৃতকুন্ডা, মির্জাপুর, বড়াইগ্রামের জোনাইল ও মৌখাড়া হাটে ভোরবেলা থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে খলসুনী নিয়ে যান বিক্রেতারা। এসব হাটে পাইকারি ও খুচরা ক্রয় বিক্রয় হয় খলসুনী। ঢাকা, সিলেট, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা শহর থেকে পাইকাররা এসে কিনে ট্রাকযোগে গন্তব্যে নিয়ে যান।

পথে পথে দিতে হয় চাঁদা : পাবনার আতাইকুলা এলাকার খলসুনীর বেপারি জামাত আলী রোববার অমৃতকুন্ডা হাটে এসেছিলেন খলসুনী কিনতে। তিনি জানান, চাটমোহর থেকে পাবনার আতাইকুলায় খলসুনী নিয়ে যেতে আটঘরিয়া, টেবুনিয়া, পাবনা সদর, পাবনা ক্যাডেট কলেজের পাশে বকশীপাড়া এবং আতাইকুলাতে মোট পাঁচটি পয়েন্টে ২০-২৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।

ক্রেতাদের সঙ্গে ইজারাদারদের দুর্ব্যবহার : চলনবিলের অধিকাংশ হাট-বাজারে খলসুনী ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের নিকট থেকে রশিদবিহীন খাজনা নেওয়া হয়। অমৃতকুন্ডা হাটে রশিদ দিলেও রশিদে ইজারার পরিমাণ উল্লেখ করেন না ইজারাদাররা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এক জোড়া খলসুনীতে ৩০ টাকা ইজারা বাবদ নিয়ে থাকেন অমৃতকুন্ডা হাটের ইজারাদাররা। তাদের চাহিদামাফিক খাজনা না দিলে ক্রেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

ব্যবহার : নদনদী ডোবা-খাল-বিলের স্বল্প পানিতে খলসুনী পেতে হাজার হাজার জেলে চিংড়ি, খলিশা, চাঁদা, গুচি, পুঁটি, মৌসী, ডানকিনেসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ ধরে হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

প্রস্তুতকারীদের অনুভূতি : খলসুনী প্রস্তুতকারী দাঁড়িকুশী গ্রামের আবদুল মতিন, চামটা গ্রামের মহরম আলীসহ কয়েকজন জানান, জন্মসূত্রেই তারা খলসুনী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। শ্রমিক এবং উপকরণের দাম বাড়ায় তাদের খুব একটা লাভ না হলেও অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করতে হচ্ছে না এটাই তাদের কাছে পরম তৃপ্তির ব্যাপার। এ কাজ করে নিজের পারিশ্রমিক হিসেবে দিন ৩শ টাকার মতো থাকছে তাদের, যা দিয়ে কোনোমতে খেয়েপরে দিনাতিপাত করছেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১