বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৩ November ২০১৮

পদ্মা-মেঘনায় ঝাঁক-ঝাঁকে ধরা পড়ছে মা ইলিশ

ঝাঁক-ঝাঁকে ধরা পড়ছে মা ইলিশ। চাঁদপুর ইলিশের আড়ৎ থেকে তোলা ছবি ছবি : চাঁদপুর প্রতিনিধি


চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে মা’ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ছে এবং জেলেদের মাধ্যমে চাঁদপুরের মৎস্য আড়তগুলোতে বিপুল পরিমাণে ইলিশ মাছ আসছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ২ দিনে প্রায় ২৮ হাজার মন ইলিশ আমদানী হয়েছে বলে জানান চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. শবেবরাত কোম্পানী। এর মধ্যে বেশীর ভাগই ডিমওয়ালা মা’ ইলিশ বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ইলিশ প্রজনন এর সময় হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নির্ধারন করে দেয়া হয়। সরকার এ ২২ দিন চাঁদপুর নৌ-সীমানার ষাটনল থেকে লক্ষীপুর জেলার চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার এলাকায় কোন প্রকার মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন করা নিষিদ্ধ করে। তার পরেও জেলা টাস্কফোর্সের অভিযানের মধ্যে ও এ বছর অসাধু জেলেরা পদ্মা-মেঘনা নদীর মেঘনার পশ্চিম পাড়ের রাজরাজেশ্বর চর এলাকা ও শরীয়তপুর-চাঁদপুরের নৌ-সীমানার পদ্মা নদী থেকে শুরু করে সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের চরফতেজংপুর, গুচ্ছগ্রাম চর, মেঘনা নদীর হরিনা, আনন্দ বাজার, কোড়ালিয়া নদীর পাড়, টিলাবাড়ি, আলুবাজার, ঈদগাহ বাজার, লক্ষ্মীরচর, সাখুয়া খাল, জাফরাবাদ, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রামদাসদী খাল, দোকানঘর, বহরিয়া, লোদেরপাড়, নন্দেশ খাঁর খাল, হানারচর ইউনিয়নের নন্দীর দোকান, গোবিন্দিয়া, চান্দ্রা ইউনিয়নের আখনের হাট, বাখরপুর গ্রামের নদীর পাড়, জ্বীন গাছতলা, তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের আনন্দবাজার, কল্যাণপুর ইউনিয়নের নদীর পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে অবাদে মা’ইলিশ নিধন করে ইলিশের প্রজননে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় অসাধু জেলেরা।

অসাধু জেলেরা এ বছর প্রচুর পরিমানে মা’ ইলিশ নিধন করেছে। তবে সরকার নির্ধারিত সময়ে ও ইলিশ ডিম ছাড়তে পারেনি বলে বর্তমান মাছ আহরণ থেকে বুঝা যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছর পূর্বে সরকার ইলিশ প্রজনন এর সময় হিসেবে ৭ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিন সময় নির্ধারন করে দেয়। তখন দেখা যায়, এ নির্ধারিত ১৫ দিনে ও মা’ ইলিশ পর্যাপ্ত ডিম ছাড়ছেনা। সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর পরবর্তীতে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে ইলিশ প্রজনন এর সময় নির্ধারন করেন ৭ অক্টোবর থেকে ২৮অক্টোবর ২২ দিন।


এ বছর দেখা যায় ইলিশ প্রজননের সময় ২২ দিনে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ব্যাপকভাবে মা’ ইলিশ ডিম ছেড়ে মিঠা পানি থেকে লোনা পানিতে যাওয়ার পূর্বে অসাধু জেলেরা মা’ ইলিশ নিধন করে ইলিশ উৎপাদনে বেঘাত সৃষ্টি করে। এতে ইলিশের বংশ বিস্তারে মারাত্মক বাধাগ্রস্থ হয়েছে। সরকার ঘোষিত নির্ধারিত ২২ দিনে মা’ইলিশ ডিম ছেড়ে শেষ করতে না পারায়, অভিযানের ২২ দিন পার হয়ে যাওয়ার পদ্মা-মেঘনায় প্রচুর পরিমাণে মা’ ইলিশ ধরা পড়ায় চাঁদপুরের প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী ও মৎস্য নেতারা জানান, ইলিশ প্রজনন এর সময় সরকার আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন রয়েছে। কেননা ২২ দিনেও ইলিশ প্রজনন এর সময় ডিম ছেড়ে শেষ করতে পারেনি।

এতে ইলিশের উৎপাদন দিন-দিন হ্রাস (কমে) পেয়ে ইলিশ আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে। সরকার যে সময় নির্ধারন করে দেয় তার মধ্যেও যেহেতু ইলিশ তার ডিম ছেড়ে শেষ করতে পারেনা। এ জন্য সরকার আরো পর্যালোচনা করে ইলিশ প্রজনন এর সঠিক সময় নির্ধারন করা প্রয়োজন বলে এখন অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের। শুধু চাঁদপুর নৌ-সীমানায় মা’ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, এটাই নয়। চাঁদপুর ছাড়াও দক্ষীন অঞ্চলীয় এলাকা থেকে যে সব ইলিশ চাঁদপুর আড়তে আসছে, তার অধিকাংশ ইলিশে ও ডিম রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

বৃস্পতিবার ও শুক্রবার পর্যন্ত চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মৎস্য আড়ৎ গুলোতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদপুর মৎস্য আড়তে যেসব ইলিশ আসছে এর মধ্যে শরিয়তপুর, মতলব, হাইমচর ও ভোলা থেকে আসা ইলিশ মাছের শত করা ৯০ ভাগের পেটে ডিম রয়েছে। তবে গভীর সমুদ্র থেকে আসা ইলিশ মাছের ডিম শতকরা ৬০ভাগ।

এ সব ইলিশের প্রতি মন ৬শ’ গ্রামের ২০ হাজার টাকা, ৭শ’ গ্রামের ইলিশ প্রতিমন ২২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি ৬৩০ টাকা, ৭/৮শ’ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতিমন ২৭ হাজার টাকা, প্রতিকেজি ৭শ’ টাকা। ১ কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিমন ৩২ হাজার টাকা, প্রতিকেজি ৮০০ টাকা থেকে ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বর্মমানে প্রচুর ইলিশ আমদানী হচেছ,ক্রেতা তাদের ইচছা মত ইলিশ ক্রয় করতে দেখা যাচ্ছে।

অপরদিকে জেলে ও আড়ৎদাররা চাঁদপুর মাছ ঘাটের ৫০টির মত আড়তে প্রচুর পরিমানে ইলিশ নিয়ে আসছে। এতে করে মাছঘাট ও আড়ৎ সরগরম হয়ে উঠেছে।

ক্রেতারা জানান, বিগত বছর এ ধরনের দামে ক্রেতারা ইলিশ ক্রয় করেনি। যার ফলে চাঁদপুর মাছ ঘাটে চঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানের মানুষ এসে ভিড় করতে লক্ষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন মহলের মতে একদিকে জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২২দিনেও অবিচারে মা’ ইলিশ নিধন করেছে।

অপর দিকে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে ৫/৬ দিন অতিবাহিত হলেও ইলিশের পেটে প্রচুর পরিমানে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। তাতে করে বুঝা যায় ইলিশ সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময়েও ডিম ছাড়েনি। এর পর জড়িপ করে ও চাঁদপুরে প্রজনন এর সময় জেলা টাস্কফোর্স যে পরিমান জেলে আটক, কারেন্টজাল ও ইলিশ জব্দ করেছে তাতে করে দেখা যায়, অবাধে মা’ ইলিশ নিধন হওয়ায় এবার ইলিশ উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হবে এবং ইলিশ উৎপাদন এ বছর তার লক্ষ মাত্রায় পৌছতে পারবেনা। তার মধ্যে এবার জাটকা মৌসুমে জাটকা রক্ষা না হয়ে জাটকা নিধন হলে ইলিশ উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় অনেক গুন হ্রাস পাওয়া সম্বাবনা রয়েছে বলে ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে প্রবীণ ইলিশ ব্যবসায়ী মো. সিরাজ চোকদার জানান, আমার ব্যবসায়ী বয়সে চাঁদপুর নদীতে এত ইলিশ নিধন হতে দেখিনি। তবে যে পরিমান ইলিশ এ বছর পদ্মা ও মেঘনায় ডিম ছাড়তে এসেছে, সে ইলিশ ডিম চাড়ায় বাধাগ্রস্থ না হলে এ বছর ইলিশ প্রচুর উৎপাদন হতো এবং এ ইলিশ মানুষ কম দামে খেতে পারতো। মা’ ইলিশ ডিম ছাড়ার সময় সঠিক হয়নি। সরকারের ২২দিন নিষেধাজ্ঞার পর ও মা’ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, সময় আরো বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমিতির সভাপতি আবদুল খালেক মাল জানান, এ বছর অবৈধভাবে প্রচুর মা’ইলিশ নিধন হয়েছে, প্রশাসনের অভিযান থেকে বুঝা যায়। তিনি বলেন, এক রাতেই রাজরাজস্বরের মেম্বারের বাড়ী থেকে ৭টন মা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। আপনারা কল্পনা করুন, ৭টন মা ইলিশ নদীতে ডিম পাড়লে কতগুলো ডিম হতো। মা’ ইলিশ লোনা পানির ও গভীর জলের মাছ। এ মা’ইলিশ ডিম ছাড়ার পূর্বেই ধরা পড়ে যাওয়ায় ডিম ছাড়তে পারেনি। এতে করে ইলিশ উৎপাদন আগামীতে কম হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখন ও মা’ইলিশ প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। তাতে করে আমার ধারনা ইলিশ ডিম ছাড়ার সময় পায়নি। এতে করে ইলিশের প্রজনন সময় আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে আমি মনেকরি। তবে স্ব কিছুই নির্ভর করবে গবেষণার উপর।

এ ব্যাপারে ইলিশ গবেষক চাঁদপুরের মৎস্য ইনস্টিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ইলিশ মাছ ১২ মাসেই ডিম পাড়ে। মূলত: যে ২২ দিন ইলিশের অভয়াশ্রম ছিল, সেখানে ইলিশ ঠিকমতো ডিম পাড়তে পারছিল কিনা সেটা দেখতে হবে।

তিনি বলেন, ২২ দিনে ইলিশ মাছ পদ্মা-মেঘনায় প্রচুর পরিমাণে ডিম পেেেড়ছে তার প্রমাণ হলো, আমাদের গবেষণায় কিছু মাছ ধরা খেয়ে যাদের পরিমাপ ১.৫০ সে. মি-৩.৫০ সে. মি। এতে বুঝা যায় আশি^নের ভরাপূর্ণিমায় ইলিশ ডিম ছাড়তে পেরেছে।

এ গবেষক আরো বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশের আমদানী বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। কারণ এবছর ইলিশ অভয়াশ্রম সময়ে প্রচুর পরিমাণে মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে।

তিনি বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হলে কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ করতে হবে। ঝাটকা রক্ষা করতে হবে। জেলেদের মাঝে বেশী বেশী গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে আরো বেশী প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১