আপডেট : ০৩ November ২০১৮
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিপরীতমুখী দুটি ধারা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অপরের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ করতে পারে। এ অবস্থায় মাত্র এক দিনের সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপে প্রত্যাশার বরফ গলা সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার একাধিক সংলাপ। তবে সংলাপ হয়েছে; দেখা-সাক্ষাৎ না হওয়া বিপরীত মেরুর নেতারা সামনাসামনি বসেছেন- এটা আশার কথা। টানেলের শেষ প্রান্তে আলোকরশ্মি দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে আসলে নির্বাচন পেছানো যেতে পারে। গতকাল বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে আলাপকালে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ফ্রন্টের নেতারা সংলাপে বসেন। দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপ শেষে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংলাপের সার-সংক্ষেপ নেই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, তারা অসন্তুষ্ট। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, তারা আশাবাদী। দীর্ঘ গ্যাপ, লং ডিসট্যান্স, এটাকে রাতারাতি ম্যাজিক্যাল ট্রান্সফরমেশন সম্ভব নয়, ক্লোজ করাও সম্ভব নয়। অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ : সংলাপের ফল সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সাত দফা দাবির মধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ ফ্রন্টের মূল দাবিগুলো না মানায় অসন্তুষ্ট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এটা স্বাভাবিক। তবে এক সংলাপে বরফ গলবে না। সংলাপ যে হয়েছে, এটা ভালো লক্ষণ। তারেক শামসুর রেহমান : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেছেন, সংলাপ ফিফটি ফিফটি হয়েছে। মানে কিছুটা সফল, কিছুটা ব্যর্থ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তিনটি দাবিতে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি সংলাপের ইতিবাচক দিক। এখানে প্রত্যাশার কিছুটা পূরণ হয়েছে। তবে মূল বিষয়ের সমাধান হয়নি। সরকারকে আরো আন্তরিক হতে হবে। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া উচিত ছিল। প্রাথমিক সংলাপের পরে এখন ছোট পরিসরে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে আলোচনা করা দরকার। এ জন্য জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচনের শিডিউল পিছিয়ে দেওয়া দরকার। তাহলে আলোচনা অব্যাহত থাকলে জট খুলবে বলে মনে করেন তিনি। অধ্যাপক কলিমুল্লাহ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে সংলাপ হয়েছে তা কেমন হলো? প্রত্যাশার বরফ কি গলেছে বলে মনে করেন? বাংলাদেশের খবরের এমন প্রশ্নের জবাবে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সংলাপ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা এনেছে। বরফ গলতে শুরু করেছে। টানেলের শেষ প্রান্তে আলোকরশ্মি দেখা যাচ্ছে। শীর্ষ নেতাদের সংলাপ শতভাগ সফল হতে হবে। সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মর্যাদা পেল। এটি বিশাল ঘটনা। তিনি বলেন, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। ভাব বিনিময় নেই। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন পর মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার সংলাপে বরফ গলার প্রত্যাশা করা ভুল। এক সংলাপে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমনটা ভাবা ভুল হবে। কলিমুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করবেন। সে সংলাপগুলো শেষ হলে চূড়ান্ত মতামত দেওয়া যাবে। তবে সংলাপ যে হচ্ছে তা আশাজাগানিয়া। সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন, তফসিলের আগে পরে বলতে কোনো কথা নেই। নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যথাসময়ে নির্বাচন হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে নির্বাচন পেছানো যেতে পারে। আফসান চৌধুরী : ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফসান চৌধুরী সংলাপ সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে তিন দফা মেনে নিয়েছে। এক সংলাপে এর চাইতে বেশি আশা করা যাবে না। দেশের জনগণের যে প্রত্যাশা তা পূরণ করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এভাবে একে অপরের সঙ্গে বসতে হবে। একত্রে বসে চা-নাশতা খেতে হবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১