আপডেট : ৩১ October ২০১৮
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে নির্বাচন অর্থবহ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ আমরা বলেছি আমাদের সাত দফা দাবি পুরোটাই মেনে নিতে হবে। সবার আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। একইসঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। সবার আগে শর্ত হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তি না হলে কোনও নির্বাচনই অর্থবহ হবে না।’ বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা মানববন্ধন করে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো সংলাপ বা নির্বাচন ফলপ্রসূ হবে না। সেজন্যই আমরা বলছি, গণতন্ত্রের দিকে ফিরে আসুন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে সৃষ্টি করুন। নির্বাচন দিচ্ছেন, কিন্তু সেই নির্বাচনে আপনারা হেলিকপ্টারে করে জনগণের কাছে যাচ্ছেন আর আমাদের নেত্রী কারাগারে এবং আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের কর্মীরা কোথাও দাঁড়াতে পারেন না। এই অবস্থায় কখনো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারে না।’ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বন্ধুরা আমরা মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছি। আসুন আমরা এই সংগ্রামকে আরো সুসংগঠিত করি। খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করি। প্রশাসনের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকেব- আপনারা এই মানববন্ধনের জন্য এক ঘণ্টার অনুমতি দিয়েছেন। আমরা প্রত্যাশা করবো সবসময় গণতান্ত্রিক কার্যকক্রম করার অধিকার যেন আমরা পায়।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে সুপরিকল্পিতভাবে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। এমনকি তিনি জামিন পেলেও তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আজকে এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়, এক দিকে সরকার সংলাপের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো হয়েছে। এই দুইটা সাংঘর্ষিক। এতে কোনো গণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিফলন ঘটে না এবং সংলাপের যে আন্তরিকতা তা প্রমাণ করে না। দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে বিচারব্যবস্থা সরকারের আয়ত্তে চলে গেছে।’ গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এই সময়ে শুধু একটিমাত্র কারণে কারাবরণ করতে হচ্ছে, তা হলো মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে।’ এসময় বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেন মির্জা ফখরুল। মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে একটু দূরে থাকা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মাথা নেড়ে সম্মতিসূচক ইশারা করেন। মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়বে এটা আমরা কখনো আশা করিনি। এটা নজিরবিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। এর একটামাত্র উদ্দেশ্য, তা হলো আগামীতে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেখানে খালেদা জিয়া, বিএনপিসহ বিরোধীদলকে বাইরে রাখা।’ ২০১৪ সালে খালেদা জিয়া ও ২০ দলীয় জোট বয়কট করেছিল বলে সেই নির্বাচন অর্থবহ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ও বিরোধীদল ছাড়া আগামীতে কোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। দেশের মানুষ হতে দেবে না।’ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে আহ্বান জানান মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘আমারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তা না হলে দেশে যে অরাজকতা ও অনিশ্চিয়তার সৃষ্টি হবে তার দায় সরকারকে নিতে হবে।’ মানববন্ধনে দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সংলাপ, আন্দোলন, নির্বাচন একসঙ্গে চলবে। এতদিন দরে যে কৌশল নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি সেটি ফলপ্রসূ হয়েছে। সরকার সংলাপ করতে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ক্ষমতাসীন দল দেশের মানুষের মনের কথা উপলদ্ধি করেছে।’ সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির আলোকেই আলোচনা হবে বলে জানান মওদুদ। এদিকে, গ্রেফতার আতঙ্ক ছিল মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। মানববন্ধনের শুরুতে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও সাড়ে ১১টা থেকে নেতাকর্মীরা কর্মসূচিস্থল ত্যাগ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে কর্মসূচি স্থল প্রায় কর্মীশূন্য হয়ে পড়ে। এই কারণে নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট আগে মানবন্ধন শেষ হয়। বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচি ঘিরে প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। মানববন্ধনের পাশে জলকামান, এপিসি ও প্রিজন ভ্যান দেখা যায়। মানববন্ধনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন— ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু , বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, আলতাফ হোসেন চৌধুলী, রুহুল আলম চৌধুরী, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১