আপডেট : ২৮ October ২০১৮
সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল হচ্ছে দেশের বৃহত্তম বনাঞ্চল। এখানে শ্রেণিভুক্ত ও অশ্রেণিভুক্ত রাষ্ট্রীয় বনাঞ্চলের পরিমাণ যথাক্রমে ১,০০১ ও ৩,৪০০ বর্গমাইল। এই অঞ্চলে উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে প্রধান সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো অবস্থিত। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ শুধু রাঙামাটিতে বন বিভাগের রয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার একর, খাগড়াছড়িতে প্রায় ১ লাখ একর আর বান্দরবানে রয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার একর বনভূমি। দুইশ বছরের এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গর্জন, রাবার, চাপলিশ, তেলসুর প্রভৃতি মূল্যবান বৃক্ষ রয়েছে। কিন্তু সরকারি অব্যবস্থাপনা, কাঠ চোরাচালানকারীদের দৌরাত্ম্যে যেভাবে বন উজাড় হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে সম্পূর্ণ বনভূমি ধ্বংস হতে বেশিদিন লাগবে না। সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বড় বড় গাছ ব্যাপক হারে পাচার করার ফলে দুইশ বছরের কাচালং মাইনি বনাঞ্চল, রেংখং বনাঞ্চল, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী বনাঞ্চল আজ বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে চোরাকারবারিরা মূলত ভূমিহীন অথবা স্বল্প আয়ের গ্রামীণ লোকজনদের বন থেকে চোরাই কাঠ আহরণে নিয়োগ করে থাকে। এদের মধ্যে পাহাড়ি ও অন্যান্য সম্প্রদায় রয়েছে, যারা বনজ সম্পদ আহরণ করে সামান্যই লাভবান। অনেকে আবার জুম চাষকে বনভূমি ধ্বংসের বিশেষ কারণ বলে মনে করেন। কিন্তু বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঠ আহরণের আগে জুম্ম জনগণ যুগের পর যুগ জুম চাষ করলেও পার্বত্য অঞ্চলের বনাঞ্চল আজকের মতো ধ্বংসের মুখোমুখি হয়নি। তাই জুম চাষকে বর্তমান বনভূমি ধ্বংসের প্রধান কারণ বলা যায় না। তবে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতেই দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে বনাঞ্চল। সর্বশেষ প্রণীত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর চারটি তফসিলে বাংলাদেশে উভচর ৩২ প্রজাতির, সরীসৃপ ১৩১ প্রজাতির, ৬২২ প্রকারের পাখি, ৮৩ ধরনের কীটপতঙ্গ, ১৩৭ ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ বিভিন্ন ধরনের ১ হাজার ২৩১ প্রজাতির উল্লেখ রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন ধ্বংসের কারণে ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। এই ব্যাপক বন ধ্বংসের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল থেকে অনেক প্রজাতির পাখি ও জীবজন্তু আজ বিলুপ্ত। সবুজ বনানী পার্বত্যাঞ্চল আজ ধূসর মরুতে পরিণত হচ্ছে। ফলে পাহাড়ের ব্যাপক ভূমিক্ষয় ও নদীর নাব্য হ্রাস পেয়ে বর্ষার সময় সামান্য বৃষ্টিতে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে খরার সময় পানীয় জল ও সেচ মৌসুমে সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে। কাপ্তাই বাঁধের ফলে যে বিপুল পরিমাণ বন ধ্বংস ও গত দুই দশকে একচেটিয়া বাঁশ, কাঠ আহরণের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে। এই অনিবার্য প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। আবার অতিরিক্ত ভূমিক্ষয় ও পাহাড় ধ্বংসের কারণে কর্ণফুলী নদীর নাব্য হ্রাস পেয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে বন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি জাতীয় বননীতি ১৯৯৪ অনুসারে ২০ বছর মেয়াদি বন মহাপরিকল্পনা ১৯৯৩-২০১৩ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের ২০ শতাংশ ভূমি বনায়ন করার কথা থাকলেও পার্বত্য অঞ্চলে তা কার্যকর হয়নি। একইসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর অধীনে তা পার্বত্য এলাকায় কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। একসময় এই প্রাকৃতিক বনে জীববৈচিত্র্যের ষোলআনা পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ক্রমাগত বনাঞ্চল দখল করে বসতিসহ নানা স্থাপনা তৈরি, জুমের আগুনে পুড়িয়ে বনাঞ্চলসহ বন্যপ্রাণী ধ্বংস, অপরিকল্পিতভাবে ঝুমচাষ, গাছ পাচারসহ নানা কারণে আজ হুমকির মুখে বনাঞ্চল। নিরাপদ আশ্রয় হারিয়ে বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, পাখি ও কীটপতঙ্গ। এভাবে চলতে থাকলে খুব অল্প সময়ে পার্বত্য প্রাকৃতিক বন বলতে আর কিছুই থাকবে না। তাই প্রকৃতির অকৃত্রিম দানে ভরপুর পার্বত্য অঞ্চলকে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়া থেকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১