আপডেট : ২৮ October ২০১৮
সানাউল হক চৌধুরী শামীম, মাধবপুর (হবিগঞ্জ) হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চা বাগানগুলোতে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরের কাজ শেষে বাগানের নারী শ্রমিকরা হেঁটে দল বেঁধে কাজের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পিঠে বাঁশের ঝুড়ি বেঁধে ছড়িয়ে পড়েন বাগানের মধ্যে। দিনের শুরুটা হয় এভাবেই। ভোর থেকে শুরু করে দু’হাতে চলতে থাকে বিরামহীন পাতা সংগ্রহের কাজ। দিনমান চলে এ কঠোর পরিশ্রম। কুঁড়ি উত্তোলন করে এ কচিপাতা মাথায় করে আবার পৌঁছে দিতে হয় কারখানা অথবা ট্রাক্টরে। নারী শ্রমিকদের এই কর্মযজ্ঞ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এর মধ্যে কাজের গতি শ্লথ হয় না এতটুকু। কেননা যত বেশি পাতা সংগ্রহ করতে পারবেন, দিন শেষে হাতে পাবেন ভালো একটা মজুরি। বাগানের কাজ করা নারী শ্রমিকরা অলস সময় কাটান না কেউ। দুপুরের খাবারটা তাই সেরে নেন বাগানের ভেতর। ৫-৭ নারী শ্রমিক দল বেঁধে খাবার তৈরি করতে বসেন। এ খাবারে কী পরিমাণ খাদ্যপ্রাণ অথবা পুষ্টিগুণ রয়েছে এ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। ক্ষুধা মেটানোর তাগিদেই শুধু খাবার খাওয়া। কাঁচামরিচ, কাঁচা চা পাতা, পেঁয়াজ, আলু চটকিয়ে ভর্তা বানিয়ে রুটি দিয়ে খান। সঙ্গে থাকে বোতল ভর্তি গরম লাল চা। কঠোর পরিশ্রমের পর এ খাবারে তাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় না এতটুকু। ফলে নারী শ্রমিকদের একটা বড় অংশই অপুষ্টিতে ভোগে। মাধবপুরের চা বাগানে কাজ করা নারী শ্রমিকরা ভিন্ন ভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর। এদের মধ্যে রয়েছে সাঁওতাল, মুন্ডা, ভূমিজ, কল, তন্তবায়, বাকতিসহ বিভিন্ন উপগোষ্ঠীর লোকজন। নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে নিরন্তন চলছে তাদের সংগ্রাম। জীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বাঁচা এ নারী শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদার কতটুকুইবা পূরণ হচ্ছে? পোকামাকড়ের মতো ছোট্ট কুঁড়েঘরে ছেলেসন্তান নিয়ে ঠাসাঠাসি করে কোনো রকমে জীবন চলে তাদের। কাজ সেরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসব নারী শ্রমিক। ক্লান্ত শরীর, মলিন মুখ, ক্ষুধার্ত হাড্ডিসার দেহখানা নিয়ে ঘরে ফেরার পর আবার শুরু হয় পারিবারিক কাজ। অবশেষে রোজকার মতো চট-ছালা বিছিয়ে মশারিবিহীন অন্ধকার ঘরে ঠাসাঠাসি ঘরে ছেলেসন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। নারী চা শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস হলেও অনেক সময় দেখা যায় নবজাতক শিশুকে নিয়ে নারী শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। অবুঝ শিশুকে গাছের নিচে রেখে নারী শ্রমিকরা কাজ করেন। অভাব অনটন নারী শ্রমিকদের এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া, সুরমা, জগদীশপুর, বৈকুণ্ঠপুর, নোয়াপাড়া চা বাগানের নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সকাল-সন্ধ্যা রোদ-বৃষ্টিতে চা বাগানের ভেতরে কাজ করেন। কিন্তু স্বল্প মজুরিতে তাদের জীবন-জীবিকা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। চা বাগানের পক্ষ থেকে যেটুকু স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে অনেক নারী শ্রমিক নানা রোগে আক্রান্ত। অর্থাভাবে তাদের চিকিৎসা হয় না। তাদের অভিযোগ চা বাগানের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা হয়, সরকারিভাবেও তাদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। মাধবপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুলায়মান মজুমদার বলেন, ইউনিসেফের অর্থায়নে ২০১১ সাল থেকে চা বাগানে বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এখন রাজস্ব খাত থেকে পর্যায়ক্রমে সব চা শ্রমিকের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া চা শ্রমিক সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য উপবৃত্তিসহ শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। মাধবপুর মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাত সুলতানা বলেন, ২৩টি চা বাগানে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ চলছে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানীয় জল ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে করে তাদের জীবনযাত্রার মান আগের চেয়ে অনেক উন্নতির দিকে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১