আপডেট : ২৭ October ২০১৮
চারদিকে বিলের অথৈ পানি। দূর আকাশে রঙ-বেরঙের মেঘের খেলা। মাঝেমধ্যে দ্বীপের মতো দুয়েকটি গ্রাম। দূর থেকে দেখে মনে হয় এসব গ্রাম পানির মধ্যে ভাসছে। তারই মাঝখান দিয়ে ডুবো সড়ক (submersible road)। বাতাসে ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে সেই ডুবো সড়কে। প্যান্ট গুটিয়ে বিলের পানিতে হেঁটে চলেছেন কেউ কেউ। কাদা নেই, পিচঢালা সড়কের ওপরে দলবেঁধে হেঁটে চলেছেন নারী-পুরুষ। ছোট বাচ্চারা লুটোপুটি খেলছে। পড়ন্ত বিকালে বিলের পানিতে সূর্যের নানা রঙের খেলা। আপনার মনকে ভরিয়ে দেবে অন্যরকম এক প্রশান্তিতে। চাইলে বিলের পানিতে গোসল করতে বা সাঁতার কাটতে পারেন আপনি। এলাকাবাসী জানায়, বৃহত্তর চলনবিলের অংশ ঐতিহ্যবাহী হালতি বিলের মধ্যে এলজিইডির নির্মিত এই সাবমার্সিবল রোড এলাকাবাসীর জন্য দ্বিতীয় কক্সবাজার। তাইতো প্রতিদিন দলবেঁধে অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন হালতি বিলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য অবগাহনে। নাটোর শহর থেকে সাবমার্সিবল রোডটির দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। হালতি বিলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে লোকমুখে নানা প্রশস্তি শুনে এক দিন বিকালে সিদ্ধান্ত নিলাম সেখানে যাওয়ার। নাটোর শহর থেকে বন্ধুবান্ধবসহ বাসযোগে রওনা হলাম গন্তব্যের উদ্দেশে। গ্রামের মধ্যে সরু পথ দিয়ে এলজিইডির পাকা রাস্তা। ঘন ঘন বাঁক নেওয়ার কারণে বাসের গতি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছিল না। তার ওপর ওয়ানওয়ে রাস্তায় অটোবাইক, ভ্যান, রিকশা ও কারের চলাচলের জন্য ঘন ঘন সাইড দিতে গিয়ে একটু বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছিল। মোটর সাইকেলযোগে প্রায় ৩০ মিনিট পরে আমরা পাটুল গ্রামের বারনই নদীর ব্রিজে উপস্থিত হলাম। আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন এসেছেন হালতি বিলের এই সৌন্দর্য অবগাহনে। ব্রিজ পার হয়ে পাটুল বাজার। এখানে চাইলে আপনি খাবার খেতে পারেন। ভাত-তরকারির পাশাপাশি নানা ধরনের ফাস্টফুডের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এরপর মাত্র ৫-৭ মিনিটের হাঁটা পথ। আপনি চাইলে অটোবাইকে বা ভ্যানেও সেখানে যেতে পারেন। আমাদের হালতি বিলের কক্সবাজার দেখার তাড়া ছিল। তাই আর কেউ দোকানে কিছু খেতে চায়নি। দলবেঁধে হেঁটে রওনা দিয়ে যথারীতি বিকাল নাগাদ পৌঁছে গেলাম। দেখতে পেলাম একটি বিশাল বটগাছ। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য কর্তৃপক্ষ সুন্দর করে এর চারধারে শান বেঁধে দিয়েছেন। আপনি ইচ্ছে করলে বটের ছায়ায় বসে জিরিয়ে নিতে পারেন। সেবন করতে পারেন বিলের নির্মল বায়ু। প্রয়োজনে আশপাশের দোকান থেকে গরম ভাজা বাদাম কিনে চিবুতে পারেন। বটগাছের অনতিদূরে বাঁধা রয়েছে সারি সারি নৌকা। এসব নৌকা উৎসাহী ভ্রমণকারীদের নিয়ে বিল ঘুরিয়ে দেখায়। শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ছইওয়ালা ছোট-বড় এসব নৌকা ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া পাওয়া যায়। নৌকার সাইজ ও আকার ভেদে ভাড়া কমবেশি হয়। কিন্তু আমাদের সঙ্গের ছেলেমেয়েদের নৌকা ভ্রমণ নয়, ডুবো সড়কে যাওয়ার তর সইছিল না। তাই দলবেঁধে চলে এলাম সড়কে। দেখলাম বাতাসে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সড়কে। বাতাসের সাঁ সাঁ আর ঢেউয়ের শব্দে মন হারিয়ে যেতে চায়। খোলা বাতাস এলোমেলো করে দেয় মাথার চুল। ঢেউয়ের আছড়ে পড়া পানি ডুবো সড়কের ওপর ছিটকে পড়ছে। ক্রমে আমরা বিলের গভীরে চলে যাই। ডুবো সড়কে হাঁটু সমান পানিতে আমরা হাঁটছি, গল্প করছি। বিল গভীর হলেও সড়কের ওপরে আমাদের পানি কিন্তু হাঁটুর নিচে। মন শিহরিত হয় এই ভেবে যে, অতল অথৈ পানির মধ্যে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর অনেকে গোসল আর সাঁতার কাটার লোভ সামলাতে পারেনি। তারা সাঁতার কাটতে শুরু করে দিল। কিন্তু ছোট বাচ্চাদের ক্লান্তির কথা চিন্তা করে আমরা বিলের মধ্যে থেকেই একটি খালী ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করলাম। এরপর দলবেঁধে ঘুরে বেড়ালাম হালতির বিলে। ক্রমে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। পড়ন্ত বিকালের লাল গাঢ় সূর্যের আভা ছড়িয়ে পড়ছে বিলের পানিতে। আমরা অনুভব করি বাড়ি ফেরার তাগিদ। এরপর নৌকা এসে ভিড়ে সেই বটতলায়। খেয়া পার হয়ে আবার বাসে করে শহরে ফিরে আসি। পেছনে পড়ে থাকে বিলের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কিন্তু পথচলার ক্লান্তি স্পর্শ করে না আমাদের। মনপ্রাণ ভরে যায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার এই প্রমোদ ভ্রমণে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১