আপডেট : ১৯ October ২০১৮
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। মানুষের ঈমান, আক্বিদা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান ও দিকনির্দেশনাসহ যাবতীয় মূলনীতি পরিপূর্ণভাবে ইসলামে পেশ করা হয়েছে। ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে যেমনি ভাবে আল্লাহর বিধান মেনে চলা অত্যাবশক অনুরূপভাবে সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রেও তার বিধান মেনে চলাও অত্যাবশ্যক। সম্পদ উপার্জন অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে যাতে ভারসাম্য ক্ষুণ্ন না হয়, সেজন্য ইসলাম হালাল হারামের সুস্পষ্ট সীমারেখা নির্দিষ্ট করে রেখে দিয়েছে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। হালাল উপার্জন বলতে বৈধ উপার্জনকে বোঝায়। আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত ও অনুমোদিত পন্থায় যে জীবিকা উপার্জন করা হয়, তাকে হালাল উপার্জন বলে। হালাল উপার্জনের মধ্যে রয়েছে মানুষের বিপুল কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহপাক হালালকে উত্তম ও পবিত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা উত্তম ও পবিত্র বস্তু খাও যা আমি তোমাদের জীবিকারূপে দান করেছি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২) মানব জীবনে জীবিকার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নিজ নিজ যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী জীবিকার জন্য পরিশ্রম ও চেষ্টা-তদবির করা সক্ষম প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। মানুষের দায়িত্ব হলো চেষ্টা করা। মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের কর্তব্য চেষ্টা-তদবির করা।’ (সূরা: নাজম, আয়াত: ৩৯) আল্লাহপাক রিজিকদাতা তবে রিজিক অন্বেষণ করার দায়িত্ব তিনি বান্দার ওপর অর্পণ করেছেন। আল্লাহর ইবাদত করার পর আল্লাহ নিজেই মানুষদের পৃথিবীর জমিনে কাজ করার জন্য বলেছেন। মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো।’ (সুরা জুমআ, আয়াত : ১০) পরিশ্রম না করে অলস বেকার ও কর্মবিমুখ করে ঘরে বসে থাকা ইসলামের দৃষ্টিতে ঠিক নয়। যেহেতু জীবিকা অর্জন করা অবশ্যই কর্তব্য। সেহেতু অলস বসে থাকার অবকাশ ইসলামে নেই। মহান আল্লাহর প্রেরিত সব নবী রসুলগণ করেছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত দাউদ ও সুলাইমান (আ.) লৌহবর্ম তৈরি করতেন, হজরত আদম (আ.) কৃষিকাজ করতেন, হজরত নূহ (আ.) কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন, হজরত ইদরীস (আ.) ছিলেন দর্জি ও হজরত মুসা (আ.) ছাগল চরাতেন। (মুস্তাদরাক হাকেম) যারা পরিশ্রম না করে অলস অবস্থায় বসে থাকে এবং কোনো কাজ করে না, তারা নিজেরা তাদের নিজেদের দুঃখ-দুর্দশা ডেকে আনে। তারা কখনো সফলতা অর্জন করতে পারবে না। যারা এমনটা করবে তারা রসুল (সা.)-এর অনুসারীদের মধ্যে গণ্য নয়। যারা অলস ও কর্মবিমুখ, তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে বিনা কারণে নিজের ওপর দুঃখ-দুর্দশা টেনে আনে, অলসতা দ্বারা উপার্জন না করে- সে আমার অনুসারীদের মধ্যে গণ্য নয়।’ (আল হাদিস) বৈধ কাজের মাধ্যমেই সম্পদ বা জীবিকা উপার্জনের পথ অবলম্বন করতে হবে। হালাল উপার্জন করা ফরজ এবং অবৈধ উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা হারাম। অবৈধ উপায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে যে অর্থসম্পদ হাসিল করা হয় তা খেয়ে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত হয় না। এমনকি অবৈধ সম্পদ দিয়ে কোনো নেক কাজ করলে তাও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। অবৈধ সম্পদ উপার্জন করা ব্যক্তির স্থান হবে জাহান্নাম। রসুল (সা.) বলেন, ‘যে দেহ হারাম মাল দ্বারা লালিত-পালিত তা কখনো জান্নাতে যাবে না। বরং জাহান্নামই এর জন্য উপযুক্ত ঠিকানা।’ (আহমদ, তিরমিজি) ইসলামে হালাল উপায়ে সম্পদ উপার্জনের উপায় বা উৎসসমূহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেমন শ্রম, কৃষিকাজ, শিল্পকারখানা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পশুপালন, হাঁসমুরগির খামার, মাছচাষ, বৃক্ষরোপণ, নার্সারি ও কুটির শিল্প ইত্যাদি। এছাড়া ইসলামী অর্থনীতিতে অর্থসম্পদ আহরণের মূল উপাদান ও উপকরণ প্রধানত- ১. ভূমি, ২. ব্যবসা ও বাণিজ্য, ৩. শিল্প, ৪. মূলধন, ৫. হিবা ও অসিয়াত, ৭. উত্তরাধিকার, ৮. বাইতুল মাল। হালাল ব্যবসা ও নিজ হাতে উপার্জনকারী ব্যক্তি হচ্ছে সর্বোত্তম। কেননা রসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন ধরনের উপার্জন সর্বোত্তম, এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নিজ হাতের উপার্জন এবং হালাল ব্যবসায়ের উপার্জন।’ ( মিশকাত, আহমদ) সর্ব অবস্থায় হালাল উপায়ে ব্যবসা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন করা যাবে না। অবৈধ উপায়ে ব্যবসায়ী ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন পাপী হিসেবে আল্লাহপাক উঠাবেন। রসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের পাপী হিসেবে উঠানো হবে, তবে যারা মুত্তাকি, ন্যায়নিষ্ঠ ও সততার সঙ্গে ব্যবসা করেছে, তাদের কথা ভিন্ন।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ) লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১