বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৮ October ২০১৮

বিশ্বের সেরা প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইতিহাস

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড ছবি : ইন্টারনেট


বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে কোনো একটিতে লেখাপড়া করার স্বপ্ন বুকে লালন করে শত শত মেধাবী শিক্ষার্থী। অনেকে হয়তো তাদের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে, অনেকের স্বপ্ন আবার মলিন হয়ে যায়। নিজের দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে আমাদের সবারই কম-বেশি ধারণা রয়েছে। কিন্তু বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইতিহাস ও পটভূমি সম্পর্কে জানার কৌতূহল আমাদের মনে থেকেই যায়। কৌতূহলী সেসব মানুষের জন্যই আজকের লেখাটি লিখেছেন শফিকুল ইসলাম

 

১. ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড : প্রতিষ্ঠার সঠিক দিন-তারিখ কারো জানা নেই। তবে ১০৯৬ সাল থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের প্রমাণ পেয়েছেন ঐতিহাসিকরা। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড সবচেয়ে প্রাচীন ও বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১১৬৭ সাল থেকে। সে সময় ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি দ্বিতীয় তার দেশের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা অর্জনের জন্য প্যারিসে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন এবং তাদের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা বাধ্যতামূলক করেন। বর্তমানে ৩৯টি কলেজ নিয়ে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪ জন ইংরেজ রাজা, ৮ জন বিদেশি রাজা, ৪৭ জন নোবেল পুরস্কারজয়ী, ২৫ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ২৮ জন বিদেশি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী, ৭ জন ধর্মযাজক, ১৮ জন কার্ডিনাল এবং একজন পোপ পড়ালেখা করেছেন অক্সফোর্ডে। অস্কার ওয়াইল্ড, স্টিফেন হকিং, মার্গারেট থ্যাচার, রুপার্ট মারডকরা উঠে এসেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, একমাত্র প্রতিভা নিয়োগের মাধ্যমেই একটি বিশ্ববিদ্যালয় সেরা অবস্থানে যেতে পারে, যা সত্যিই খুব সহজ!

 

২. বলোগনা বিশ্ববিদ্যালয় : ১০৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইতালির বলোগনা বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিমা বিশ্বের প্রথম বড় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্বের প্রাচীন ও বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনামের সঙ্গে এখনো এটি চালু রয়েছে। বিশ্বের প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস একদম অন্যরকম। এটি প্রথমে কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীর গ্রুপ আকারে প্রতিষ্ঠিত হয়, যাদের একসঙ্গে  ‘দেশ’ নামে অভিহিত করা হতো। এই বিদেশি ছাত্ররা একসঙ্গে থাকতেন, যাতে জাতিগত অপরাধের জন্য শাস্তি এড়াতে পারেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ২৩টি স্কুলের অধীনে প্রায় ৮৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন, যার মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর পর্যায়ের। বর্তমানে দেশের মধ্যে রাভিনা, ইমোলা, ফোরলি, রিমিনি ও চেজনা এবং দেশের বাইরে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনাস আয়ারসে বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা রয়েছে। একটি বিশেষ জরিপে (QS World University Rankings) ২০১৭ সালে বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ১৮২তম।

 

৩. আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় : শিক্ষার্থীদের জ্ঞানসাধনার এক বিশাল তীর্থস্থান হলো বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশ্ন আসতে পারে, বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কী? ইউনেস্কোর ঘোষণা অনুযায়ী, মরক্কোর ফেস নামক স্থানে ৮৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উল্লে­খ করা হয়। ফাতিমা আল-ফিহরি নামের এক মুসলিম নারী বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল মুসলিম বিশ্বে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম একটি আধ্যাত্মিক ও শিক্ষাবিষয়ক কেন্দ্র। এটি মূলত ইসলাম শিক্ষাবিষয়ক ধর্মভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়। মানচিত্রকার মোহাম্মদ আল ইদ্রিসী এখানকার ছাত্র ছিলেন, যার মানচিত্র রেনেসাঁর সময় ইউরোপিয়ানদের গবেষণা করতে সাহায্য করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে পড়ানো হয় কোরআন ও ফিকহ, ব্যাকরণ, যুক্তিবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, গণিত, রসায়ন, ইতিহাস, ভূগোল ও সঙ্গীতবিদ্যা। ১৯৬৩ সাল থেকে কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় মরক্কোর আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত হয়। বর্তমানে এটি আফ্রিকার বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিয়েছে।

 

৪. ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ : ইংরেজি ভাষাভাষী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় এবং বিশ্বের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এটি তৃতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। ১২০৯ সালে মূলত ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১২০৯ সালে অক্সফোর্ডের কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি স্থানীয় লোকদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে শহর ছেড়ে চলে যান। ক্যামব্রিজ শহরে এসে নিজেদের সংগঠন গড়ে তোলেন। পরে এটিই ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এখানে লেখাপড়া করা বিখ্যাত মানুষের অভাব নেই। ৯০ জন নোবেল বিজয়ী পড়াশোনা করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেমন ধরুন আইজ্যাক নিউটন, স্টিফেন হকিং, চার্লস ডারউইন, জগদীশ চন্দ্র বসু, শ্রীনিবাস রামানুজন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩১টি কলেজ, ফ্যাকাল্টি ও অনুষদগুলো শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যুক্তরাজ্যের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়।

 

৫. ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি : যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডোনায় অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৯১ সালে এটি প্রথম ‘Throop University’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯২০ সালে ‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ নামকরণ করা হয়। এটি একটি বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান ও প্রকৌশল গবেষণা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন ৩৪ জন নোবেল বিজয়ী। এখানে নাসার বেশিরভাগ মহাশূন্যযানের ডিজাইন ও কার্যকারিতা দেখাশোনা করা হয়। বিশ্বের বিখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। দশ বছরের স্কুলজীবনের মতো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এত দীর্ঘ নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কয়েকটি বছর স্মরণীয় হয়ে থেকে যায়। ব্যাপারটা যদি এমন হয়, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি পড়তে চেয়েছিলেন, পছন্দের সেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতেই পড়াশোনা করছেন! কে জানে আজকে বাংলাদেশের কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে আপনি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটিতে পড়ার স্বপ্ন দেখছেন! কিংবা হয়তো কয়েক বছর পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই আঙিনায় নিজেকে আবিষ্কার করলেন! ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে অসাধারণ।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১