আপডেট : ০৬ October ২০১৮
এ বছর দু’জন ব্যক্তিকে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নারী। এই নারীর জীবন ইতিহাস এতটাই মর্মন্তুদ যে তার জীবনে ঘটে গেছে ধর্ষণসহ নিষ্ঠুরতম সব অত্যাচারের ঘটনা। হতে হয়েছে যৌনদাসী। ধর্মের লেবাসধারী জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অবর্ণনীয় নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়েছে তাকে। সেসব কিছুকে পেছনে ফেলে তারই মতো নিগৃহীত নারীদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে গেছেন তিনি। অবশেষে মিলেছে তার কর্মের অনন্য স্বীকৃতি— নোবেল শান্তি পুরস্কার। মানবতার জন্য নিবেদিতপ্রাণ এক যৌনদাসীর প্রতি সম্মান জানিয়েছে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ। কে এই নারী? তিনি নাদিয়া মুরাদ। পুরো নাম নাদিয়া মুরাদ বাসে তাহা। বয়স মাত্র ২৫ বছর। নাদিয়ার জন্ম ইরাকের পাহাড়ি অঞ্চল সিনজারের কোজো নামে একটি গ্রামে ১৯৯৩ সালে সংখ্যালঘু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ভুক্ত কৃষক পরিবারে। সুখেই কাটছিল তার জীবন। কিন্তু অল্প দিনেই নেমে আসে অবর্ণনীয় বিপর্যয়। নারীদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য ২০১৪ সালের অক্টোবরে মালালা যখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান, ঠিক তার দুই মাস আগে ইরাকের পাহাড়ি অঞ্চল সিনজারের একটি ইয়াজিদি গ্রামে হামলা চালিয়ে ২১ বছর বয়সী নাদিয়াকে ধরে নিয়ে যায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা। আইএস জঙ্গিরা নাদিয়াদের গ্রাম কোচোতে হামলা চালিয়ে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। তারা গ্রামের প্রায় সব পুরুষ ও বয়স্ক নারীদের হত্যা করে, যাদের মধ্যে নাদিয়ার ছয় ভাই এবং তার মাও ছিলেন। এরপর জঙ্গিরা নাদিয়াসহ গ্রামের ইয়াজিদি অন্য নারীদেরও ধরে নিয়ে যায় এবং যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়। বিভিন্নজনের হাত ঘুরে একপর্যায়ে তখন আইএস ঘোষিত ইসলামিক খেলাফতের রাজধানী ইরাকের মসুল পৌঁছেন নাদিয়া। এই সময়ে তাকে আইএস জঙ্গিরা অসংখ্যবার ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করে। এখান থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি, বাড়ে নির্যাতনের মাত্রা। এক দিন সুযোগ বুঝে বন্দিদশা থেকে পালিয়ে এক সুন্নি মুসলিম পরিবারে আশ্রয় নেন। ওই পরিবার তাকে মসুল থেকে পালিয়ে আসতে সবরকম সহায়তা করে বলে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান নাদিয়া। নাদিয়াকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউইয়র্ক টাইমস। তাতে বলা হয়, নাসির নামে এক সুন্নি মুসলমান স্ত্রীর পরিচয়ে আইএসের চোখে ধুলা দিয়ে মসুল সীমান্ত পার করে দেন আইএসের হাতে তিন মাস বন্দি থাকা নাদিয়াকে। পরে জার্মানির একটি শরণার্থী প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালে আরো এক হাজার নারী ও শিশুর সঙ্গে জার্মানিতে পাড়ি জমান নাদিয়া। ওই বছর ডিসেম্বরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আইএসের হাতে নিপীড়নের ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন নাদিয়া। বর্তমানে সেখানেই তিনি বসবাস করছেন। তারপর থেকেই নাদিয়া ইয়াজিদি জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলন নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি মানবাধিকার এবং যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের ব্যবহারের বিরুদ্ধেও কাজ শুরু করেন। এ লক্ষ্যে তিনি ‘নাদিয়াস ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। নাদিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আইএসের বিরুদ্ধে ইয়াজিদি জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত আইনজীবী আমাল ক্লুনি তার ও ইয়াজিদি জনগোষ্ঠীর হয়ে মামলা লড়ার ঘোষণা দেন। জীবনের এই করুণ কাহিনী নিয়ে ‘দ্য লাস্ট গার্ল’ নামে একটি বই লিখে ২০১৭ সালে প্রকাশ করে তা বিশ্ববাসীকে জানান নাদিয়া। আন্তর্জাতিকভাবে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মুক্তি এবং মানব পাচারের বিরুদ্ধে প্রচারের প্রতীকে পরিণত হওয়া নাদিয়া ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইউরোপীয় কাউন্সিলের ‘ভাকলাভ হ্যাভেল’ মানবাধিকার পুরস্কার জয় করেন। আর ২০১৮ সালে এসে নোবেল মুকুট উঠল তার মাথায়।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১