বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৯ September ২০১৮

রাজনৈতিক উত্তেজনায় জনমনে নানা শঙ্কা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংরক্ষিত ছবি


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের মাত্র কয়েক দিন বাকি। ভোটের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সব পক্ষ। এখন পর্যন্ত রাজপথ ঠান্ডা। কিন্তু উত্তেজনা আছেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রতিপক্ষ বিএনপির পরস্পরের প্রতি হুমকি-ধমকি চলছেই। সংঘাত এড়াতে বিএনপি পিছুটান দিলেও ছাড় দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। দলটি ঘোষণা দিয়েছে, যেদিন বিএনপির সমাবেশ থাকবে সেদিনই রাজপথে নামবে তারা।

ক্ষমতাসীনদের কাছে তথ্য আছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরস্পরকে প্রতিহত করার হুমকি এখন পর্যন্ত বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ থাকলেও দুই-তিন দিনের মধ্যেই সংঘাত গড়াতে পারে রাজপথে। সভা-সমাবেশের নামে মাঠ দখলের লড়াই কতটা উত্তাপ ছড়ায় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। নির্বাচন, আন্দোলনে বিএনপির নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত এবং কর্মসূচি ঘোষণার জন্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর সমাবেশের ঘোষণা দেয় দলটি। স্থান নির্ধারণ করা হয় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সমানে। কিন্তু প্রত্যাশিত স্থান না পাওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে সমাবেশের দিনক্ষণ বদলায় দলটি। আগামীকাল রোববার সমাবেশ করার ঘোষণা রয়েছে তাদের। তবে গতকালও অনুমতি মেলেনি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে তারা রোববার সমাবেশ করবেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহম্মেদ জানিয়েছেন, তাদের যৌথ সভায় সমাবেশের সব ধরনের প্রস্তুতিসহ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। দলের একাধিক নেতা বাংলাদেশের খবরকে জানান, তফসিল ঘোষণার আগেই বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় বিএনপি। এজন্য ঢাকার বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডসহ আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে নিয়ে নির্বাচন, সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন ও সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবি আদায়ে দলটি কী করবে সমাবেশ থেকে দেশবাসীকে সে বার্তা দিতে চায় বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট মামলায় নেতিবাচক রায় দেওয়া হলে বিএনপির অবস্থান কী হবে সে হুশিয়ারিও আসবে সমাবেশ থেকে।

প্রস্তুত আওয়ামী লীগসহ মিত্ররা : আজ রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কর্মিসভা করবে ১৪-দলীয় জোট। এ সভা থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে মাঠ দখলের। জোটের সমন্বয়ক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ২৯ সেপ্টেম্বরের সভা থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া অক্টোবর জুড়ে ৮ বিভাগীয় শহর ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও উপজেলা সফর করবে ১৪ দল।

নৈরাজ্য ঠেকাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগও। বিএনপির সমাবেশ প্রশ্নে গতকাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, আমরা দখল-পাল্টাদখলে নাই। জনগণের সাড়া না পেয়ে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে যারা ঢাকা দখলের হুমকি দিচ্ছে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাদের অচল করে দেব। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি রাস্তায় নেমে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে হাত-পা ভেঙে দেবেন। বিএনপি-জামায়াতের যেকোনো সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলে বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। তারা আরো জানান, আগামী ১ থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

ডেডলাইন শেষ হচ্ছে আগামীকাল : সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠনসহ ৫ দফা দাবি জানিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। ওই সময়ের মধ্যে তা আদায় না হলে তারা সারা দেশে সভা-সমাবেশ করবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের হুমকিও দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে। আগামীকাল ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে ওই আল্টিমেটাম। যদিও কর্মসূচি দিয়ে ব্যাংকক চলে গেছেন জাতীয় ঐক্যের রচয়িতা গণফোরাম সভাপতি ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন।

তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যকে ‘দুর্নীতিবাজদের ঐক্য’ ও ‘ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের ঐক্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। যেটা হয়েছে, সেটা সাম্প্রদায়িক ঐক্য। ঐক্যর নামে সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামলে তাদেরও প্রতিহত করা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। 

অক্টোবর মাসকে রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরীদের (বদরুদ্দোজা চৌধুরী) ঐক্য জাতির জন্য হুমকি। এই চক্রান্তকে নস্যাৎ করতে ১৪ দল ও প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

রাজনৈতিক উত্তাপ নিয়ে গতকাল পথচারী, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সহিংসতার যে চিত্র দেখেছি এবারো সে আভাসই পাচ্ছি। এ নিয়ে তারা নানা শঙ্কা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১