আপডেট : ২৮ September ২০১৮
এস এম আরিফুল কাদের ‘ইসালে সওয়াব’ ফারসি শব্দ। আরবিতে হবে ‘ঈসালুস সাওয়াব’ (তবে এক্ষেত্রে আরবিতে অন্য শব্দ বেশি ব্যবহূত হয়, যেমন ‘ইহদাউস সাওয়াব’)। এর আভিধানিক অর্থ সওয়াব পৌঁছানো। পরিভাষায় ইসালে সওয়াব হলো কোনো নেক আমল করে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করা। দোয়ার মাধ্যমে ইসালে সওয়াব করা যায়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে করিমে ইঙ্গিতস্বরূপ বর্ণিত আছে- ‘এবং যারা তাদের পরে এসেছে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! ক্ষমা করুন আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদেরও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি অতি ক্ষমতাবান, পরম দয়ালু।’ (সুরা হাশর-১০) দোয়া মৃতের পক্ষে কল্যাণকর হওয়ার সবচেয়ে বড় দলিল হলো জানাজার নামাজ। জানাজার নামাজ বস্তুত সালাত রূপ দোয়া। জানাজার নামাজে আল্লাহর রসুল (সা.) যেসব দোয়া পড়তেন, সেগুলো থেকেই তা পরিষ্কার। এজন্য নিষ্ঠার সঙ্গে দোয়া করা কাম্য। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা যখন মাইয়্যাতের নামাজ পড়বে তখন তার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে দোয়া কর। (সুনানে আবু দাউদ : ৩১৯৯) দাফন করার পর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়াও একধরনের ইসালে সওয়াব। হাদিসের ভাষায়, উসমান (রা.) বলেন। রসুলুল্লাহ (সা.) কোনো এক মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবরের পাশে দাঁড়ালেন এবং বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর এবং তার জন্য ঈমানের ওপর অবিচলতা ও দৃঢ়তা কামনা কর। কেননা এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে। (মুসনাদুল বাজ্জার : ৪৪৫) তাই সুন্নত হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে কবরে দেওয়ার পর তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার জন্য প্রশ্নোত্তর সহজ করে দেওয়া এবং প্রশ্নোত্তর দিতে সমর্থ হওয়ার জন্য দোয়া করা। সদকার মাধ্যমেও ইসালে সওয়াব করা যায়। যার সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায়, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার কোনো উপকারে আসবে? উত্তরে বিশ্বনবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ। হজরত সাদ (রা.) বললেন, আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম। (সহিহ বুখারি : ২৭৫৬) আরো পাওয়া যায়, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক লোক নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। কোনো ওসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয়, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন, তাহলে সদকা করে যেতেন। আমি তার পক্ষ থেকে সদকা করলে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন? রসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ। (সহিহ মুসলিম : ১০০৪) মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব পৌঁছানোও একধরনের ইসালে সওয়াব। কেননা ‘আলী ইবন মুসা হাদ্দাদ (রহ.) বলেন, আমি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের সঙ্গে কোনো এক জানাজায় শরিক ছিলাম। মোহাম্মদ বিন কোদামা জওহারিও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। লাশ দাফনের পর এক অন্ধ ব্যক্তি কবরের পাশে বসে কোরআন তিলাওয়াত করতে লাগল। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন, এইরূপ তেলাওয়াত করা বিদআত। ফিরে এসে মোহাম্মদ বিন কোদামা ইমাম আহমাদ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করেন, মোবাশ্বের বিন ইসমাঈল আপনার মতে কেমন লোক? ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, তিনি খুব বিশ্বস্ত লোক। ইবনে কোদামা আবার জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি তার কাছ থেকে হাদিস শিখেছেন? তিনি বললেন- হ্যাঁ, শিখেছি। তারপর মোহাম্মাদ বিন কোদামা বলেন, মোবাশ্বের আমাকে বলেছেন আবদুর রহমান বিন আলা বিন জাল্লাজ স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতার ইন্তেকালের সময় তিনি তার কবরের পাশে সুরায়ে বাকারার প্রথমাংশ তেলাওয়াত করার ওসিয়ত করে গেছেন। সাথে সাথে তিনি এটাও বলেন, আমি হজরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.)-কে এ ধরনের ওসিয়ত করতে শুনেছি। ইমাম আহমাদ (রহ.) এ ঘটনা শুনে ইবনে কোদামাকে বলেন, যাও তুমি, অন্ধকে কোরআন তেলাওয়াত করতে বলো। (ফাজায়েলে সাদাকাত ১ : ১০৮-১০৯) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নফল কোরবানিও ইসালে সওয়াবের অন্তর্ভুক্ত। কেননা হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন, যার পা কালো, চোখের চারদিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কোরবানির জন্য আনা হলো। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আয়েশা (রা.)-কে বললেন, হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আসো। তারপর বললেন, তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দিয়ে এটাকে ধারালো কর। তিনি তা-ই করলেন। তারপর রসুলুল্লাহ (সা.) ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি জবাই করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ! তুমি এটি মোহাম্মদ, তাঁর বংশধর এবং সব উম্মতে মোহাম্মদীর পক্ষ থেকে কবুল কর। (সহিহ মুসলিম : ৫২০৩) লেখক : আলেম ও গবেষক
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১