বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৮ September ২০১৮

হিজামা কী এবং কেন হিজামা করাবেন

মানব সভ্যতার এক অনন্য আবিষ্কার এই হিজামা বা কাপিং থেরাপি সংগৃহীত ছবি


হিজামা, যার ইংরেজি নাম ‘কাপিং থেরাপি’। হিজামা অর্থ কোনো কিছুকে তার প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া। উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, ঘাড় ও কোমরের ব্যথাসহ বিভিন্ন ব্যথার জন্য হিজামা বা কাপিং থেরাপি ব্যবহার করা হয়।

মানব সভ্যতার এক অনন্য আবিষ্কার এই হিজামা বা কাপিং থেরাপি। হজরত ঈশা (আ.)-এর জন্মের ৩ হাজার ৫০০ বছর আগে টাইগ্রিস নদীর তীরে অসিরীয় নামে এক জাতি বাস করত। অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ বছর আগের কথা। আরব ঐতিহাসিকদের মতে, এই অসিরীয় জাতিই প্রথম আরবদের মধ্যে হিজামার প্রচলন করে।

কিন্তু সুন্নাহ হিসেবে মুসলিমদের মধ্যে হিজামার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় মিরাজের রাতে ফেরেশতারা রসুল (সা.)-এর উম্মতকে হিজামার জন্য বলার পরে। হিজামা নবী (সা.)-এর একটি অন্যতম চিকিৎসা ব্যবস্থা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাত্রিভ্রমণে আমি কোনো ফেরেশতাকে অন্য ফেরেশতা থেকে আলাদা হতে দেখিনি যে, তারা আমাকে বলেনি, হে মোহাম্মদ (সা.), আপনি হিজামা লাগান।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

হিজামা বা কাপিং থেরাপি এমন একটি চিকিৎসা যা মানুষের শরীরকে সতেজ করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, বড় বড় রোগ (যেমন হার্টের রোগ, কিডনির রোগ, লিভারের রোগ, স্ট্রোক) থেকে নিরাপদ থাকতে সহায়তা করে। কেননা ওয়েট কাপিং থেরাপির মাধ্যমে শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের হয়ে যায় এবং এই কাপিং থেরাপিই শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করার একমাত্র ন্যাচারাল পদ্ধতি।

বাংলাদেশেও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে হিজামা বা ওয়েট কাপিং থেরাপি চালু হয়েছে। ঢাকার মালিবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় হিজামা সেন্টার গড়ে উঠেছে। এমনকি ঢাকার বাইরেও কিছু কিছু জেলায় গড়ে উঠেছে এই হিজামা সেন্টার। এ ছাড়া বিভিন্ন জন ব্যক্তিগতভাবে এই হিজামা থেরাপি দিয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হিজামা বা ওয়েট কাপিং থেরাপি সরকার অনুমোদিত এবং শুধু এই থেরাপি দেওয়ার জন্যই বড় বড় ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। আরো আছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সেন্টার। এদিকে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছি। তাহলে আমাদের দেশেও গড়ে তোলা যাবে হিজামা ক্লিনিক ও হিজামা প্রশিক্ষণ সেন্টার।

regular_3924_news_1538069658

হিজামা বা কাপিং থেরাপি ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে কীভাবে দেখা হয়? এ বিষয়ে কথা হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, একটি হাদিসে এসেছে, আবু কাবশাহ আনমারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) মাথার মাঝখানে এবং দুই কাঁধের মাঝে হিজামা করতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি নিজ শরীরের এ অংশে হিজামা করাবে, সে তার কোনো রোগের চিকিৎসা না করালেও কোনো ক্ষতি হবে না। হাদিসটি সম্ভবত আবু দাউদ শরিফে আছে। অন্য আরো একটি হাদিসে এসেছে, সালমা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কেউ রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে মাথাব্যথার কথা বলত, রসুল (সা.) তাদের হিজামা লাগানোর কথা বলতেন। এই হাদিসটিও সম্ভবত আবু দাউদ শরিফে আছে। তবে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল করতে হবে, আগে হাদিস ও কোরআন থেকে বুঝতে হবে হিজামা কী? এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে হিজামা বা কাপিং থেরাপি নিতে হবে। ইসলাম বিষয়টিকে জায়েজ বলেছে। তবে যেনতেন উপায়ে নিলে মানুষের ক্ষতি হতে পারে।

হিজামার বিষয়ে কথা হয় খিদমাহ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তালহার সঙ্গে। তিনি বলেন, সৌদি আরব, মিসর, মালয়েশিয়ায় হিজামা চিকিৎসা খুব ব্যাপকভাবে চলছে। এমনকি হিজামা থেরাপি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্লিনিকও আছে। শুধু মুসলিম এই দেশগুলোতে নয়- আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নরওয়ে ও ডেনমার্কের মতো দেশেও দিব্যি চলছে এই চিকিৎসা। চীনে তো এই চিকিৎসা খুবই ব্যাপকভাবে চলছে। তারা তো আর হিজামা চেনে না। তারা এই হিজামাকে ওয়েট কাপিং নামে চেনে। শুধু কাপিং-ই নয়, বিভিন্ন জরিপে বলা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের সব ধরনের ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন গ্রহণের হারও বেশ অবাক করার মতো এবং এটা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

আরো একটি বিষয় লক্ষ করার মতো, গত অলিম্পিক আসরে মাইকেল ফেলেপসের কাপিং মার্কের ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছিল। এরপর এটা নিয়ে অনেক আলোচনাও হয়েছে। তারা এটা নিয়ে থাকেন শরীর হালকা করার জন্য। বর্তমানে অনেক খেলোয়াড়ই শরীর হালকা করার জন্য হিজামা নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া এটা নবী (সা.)-এর একটি সুন্নত। আমি নিজেও হিজামা নিয়েছি এবং হিজামা নেওয়ার পরে বেশ ভালো বোধ করছি।

লেখক : আলেম ও গবেষক


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১