আপডেট : ২৩ September ২০১৮
ঋষিকেশ দাস লেনের নাম পুরান ঢাকার অধিবাসীদের কাছে এক নামে পরিচিত। এটি পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার একটি ঐতিহ্যবাহী সড়ক। এর আশপাশে এখনো দাঁড়িয়ে আছে শতবছরের বহু পুরনো বাড়ি। কিন্তু কে ছিলেন এই ঋষিকেশ দাস? গত শতাব্দীর শুরুর দিকে সমাজের কিছু নিম্নবর্গের মানুষ নিজের চেষ্টায় আর শ্রমে নব্য ধনী হয়ে উঠছিলেন। ঋষিকেশ দাস ছিলেন তাদেরই একজন। আজিমুজ্জামান হায়দার তার ‘ঢাক্কা’ (১৯৬৭ সালে প্রকাশিত) বইতে উল্লেখ করেছেন, ঋষিকেশ দাস ছিলেন একজন ব্যাংকার। ইট, সুরকি, টাইলসের ব্যবসা করে তিনি বেশ অর্থকড়ি কামিয়েছিলেন। নামের শেষে দাস উপাধি দেখেই বোঝা যায় তিনি নিম্নবর্গের মানুষ। তিনি যে রোজ গার্ডেনের মতো বিলাসবহুল এক প্রাসাদবাড়ি বানালেন, এর পেছনে আছে এক অপমানের ইতিহাস। পুরান ঢাকায় তখন বাস করতেন জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। আজকের বলধা গার্ডেন ছিল তার বাগানবাড়ি। তিনি একজন নাট্যকার ছিলেন। তার এই বাগানবাড়ি সে সময়ের উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। বিনা আমন্ত্রণে একদিন বলধার বাগানবাড়িতে এসে উপস্থিত হলেন ঋষিকেশ দাস। সনাতন হিন্দুধর্ম অনুযায়ী নিম্নবর্ণের হওয়ার কারণে তাকে অপমান করা হয়। এ অপমানের জ্বালা ভুলতে ঋষিকেশ দাস বলধা গার্ডেনের কাছেই, একটু দূরে টিকাটুলিতে নির্মাণ করেন এক সৌম্য প্রাসাদ। ২২ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছিল রোজ গার্ডেন প্যালেস। ভবনটির মোট আয়তন সাত হাজার বর্গফুট। উচ্চতায় পঁয়তাল্লিশ ফুট। ছয়টি সুদৃঢ় থামের ওপর এই প্রাসাদটি স্থাপিত। প্রতিটি থামে লতাপাতার কারুকাজ করা। প্রাসাদটির স্থাপত্যে করিন্থীয়-গ্রিক শৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাগানটি সুদৃশ্য ফোয়ারা, পাথরের মূর্তি ইত্যাদি দিয়ে সজ্জিত ছিল। মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় পাঁচটি কক্ষ আর একটি বড় নাচঘর আছে। নিচতলায় আছে আটটি কক্ষ। রোজ গার্ডেন প্যালেসের পশ্চিম ও উত্তর দিকের দেয়ালের মধ্যবর্তী অংশে দুটি মূল ফটক আছে। প্রবেশ ও বহির্গমনের জন্য স্থাপিত পশ্চিম দিকের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই আছে একটি বিস্তীর্ণ খোলা প্রাঙ্গণ। এখানে মঞ্চের ওপর দণ্ডায়মান নারীমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। পূর্বাংশের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে একটি সুন্দর পুকুর। পুকুরের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মাঝামাঝি একটি করে শানবাঁধা পাকা ঘাট আছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, ভবনটির পরিপূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ঋষিকেশ দাস দেউলিয়া হয়ে যান। ব্যাংক তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। তিনি আসলে তার সর্বস্ব ঢেলে দিয়েছিলেন বাড়িটির পেছনে। বাধ্য হয়ে তিনি বাড়িটি বিক্রি করে দেন। ১৯৩৭ সালে বাড়িটি কিনে নেন খানবাহাদুর আবদুর রশীদ। প্রাসাদটির নতুন নামকরণ হয় ‘রশীদ মঞ্জিল’। কাজী আবদুর রশীদ মারা যান ১৯৪৪ সালে। তার মৃত্যুর পর রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তার বড় ছেলে কাজী মোহাম্মদ বশীর (হুমায়ুন সাহেব)। এখনো রোজ গার্ডেন মূলত হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি বলেই পরিচিত। টিকাটুলি বা ইত্তেফাক মোড় থেকে আপনি যদি রিকশায় রোজ গার্ডেনে যেতে চান, অনেকেই চিনবে না। কিন্তু হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি যাব বললে সহজেই রিকশাওয়ালারা নিয়ে যাবে। ১৯৭০ সালে বেঙ্গল স্টুডিও ও মোশন পিকচার্স লিমিটেড রোজ গার্ডেন প্যালেসের ইজারা নেয়। ‘হারানো দিন’ নামের চলচ্চিত্রের শুটিং হয়েছিল এ বাড়িতে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু আদালতে মামলা করে ১৯৯৩ সালে মালিকানা স্বত্ব ফিরে পান কাজী আবদুর রশীদের মেজো ছেলে কাজী আবদুর রকীব। ১৯৯৫ সালে তিনি মারা যান। এরপর থেকে তার স্ত্রী লায়লা রকীবের মালিকানায় রয়েছে এই ভবনটি। তার কাছ থেকেই সরকার বাড়িটি কিনে নেয়। দীর্ঘদিন ধরে এই বাড়িটি দেখতে আসতেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। অসংখ্য নাটক-সিনেমার শুটিং হয়েছে এ বাড়িতে। এখন জাদুঘর হলে এর নতুন কী নামকরণ হবে, তা এখনো সরকার জানায়নি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১