আপডেট : ১৮ September ২০১৮
মোহাম্মদ আবু নোমান একটি গাছ অনেক বছর ধরে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল। একসময় গাছটি অনেক বড় হয়ে ফুলে, ফলে, ছায়ায় চারদিক সুশোভিত ও শান্তিদায়ক করবে। ইতোমধ্যে একটি লতাবাহী আগাছা গাছটির গা বেয়ে খুব দ্রুত বড় হয়ে এর সর্বউপরে উঠে যায়। তখন লতাবাহী আগাছা গর্বভরে দীর্ঘ বছর ধরে বড় হওয়া গাছটিকে বলে— ছিঃ, তুমি এত বছর ধরে মাত্র এতটুকু বড় হলে! আর আমি মাত্র ক’দিনে কত দ্রুত তোমার উপরে উঠে গেলাম। তারপর একদিন খেলাচ্ছলে কোনো এক শিশু ওই লতাবাহী আগাছার গোড়া ধরে টান মেরে উপড়ে ফেলল! এরপর লতাবাহী আগাছার যা হওয়ার তাই হলো। তেমনি আমাদের দেশের নব্য ‘আলট্রা ওয়েলদি’ বা অতি ধনী তথা ধনকুবের তকমাধারী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সরকারি আমলা-কামলাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব টান দেওয়া হলে ওই লতাবাহী আগাছার সর্বশেষ রূপ ধারণ করবে না তো! ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮-এ বলা হয়েছে, অতি ধনী বা ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ, বিশ্বে ধনকুবের বৃদ্ধির উত্থানে শীর্ষে বাংলাদেশ। ২০১২ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে দেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ হারে। এ হার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্সের তৈরি প্রতিবেদনটির নাম ‘ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮’। ওয়েলথ-এক্স বলেছে, ‘এটা আশ্চর্যজনক যে ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ নয়। এ অবস্থান বাংলাদেশের।’ গত ৫ সেপ্টেম্বর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন দেশে সম্পদশালীর সংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হয়। ওয়েলথ এক্স মার্কিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি ইনসাইট ভেঞ্চার পার্টনারসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ওয়েলথ এক্সের দাবি, তাদের তথ্য ভান্ডারে ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি ধনকুবেরের তথ্য রয়েছে। ৩ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৫২ কোটি টাকার সম্পদ থাকলে তাদের আলট্রা ওয়েলদি বা অতি ধনী ও ধনকুবের হিসেবে গণ্য করে সংস্থাটি। দেশের অর্থনীতিবিদরা ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদনটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। কারণ, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে দেশের কতিপয় মানুষের জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন এসেছে, এটা ঠিক। কিন্তু একটা শ্রেণির হাতে বড় অংশের সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। ফলে বৈষম্য অনেক বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিসর ছোট হয়ে আসছে। এতে ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬ অনুযায়ী, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তাদের মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকায়। বিপরীতে একই সময় সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ। তাদের মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ টাকায়, যা ২০১০ সালে ১ হাজার ৭৯১ টাকা ছিল। মজার কথা হলো, সরকার এতে ঢাকঢোল পিটিয়ে বলছে, দেশ আর গরিব নয়, মানুষের আয় বেড়েছে, বিভিন্ন সূচকে দেশ এগিয়েছে, সব ক্ষেত্রেই আমরা রোল মডেল, আরো কত কী! সত্যি আমরা কতটা এগিয়েছি! বা এগিয়ে থাকলে কারা কীভাবে এগিয়েছে? দেশি-বিদেশি প্রতিবেদনে যেমন ধনীদের সংখ্যাই বাড়ছে, ঠিক বিপরীতমুখী অবস্থান থেকে গরিবের সংখ্যাও বাড়ছে। তাহলে কি দাঁড়াল? বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় একশ্রেণির শুধু সম্পদ বাড়বে, আর গরিবরা চিরকাল গরিবই থেকে যাবে? এ খবরে আমরা কি গর্বিত, না কলুষিত হচ্ছি? এটা দেশের জন্য মোটেই ভালো খবর নয়। এতে গৌরব করার মতো কিছু আছে কি? সব সরকারের আমলেই কিছু ফন্দিবাজ বিভিন্ন অপকৌশলে লাখ লাখ মানুষের টাকা হাতিয়ে ধনকুবের সিরিয়ালে চলে গেছে। কিছু লোক শুধু শুধু টাকা পায়, আর কিছু লোক টাকা হারায়! বিদেশিরা নিজের পরিশ্রমে ধনী হয়, আর বাংলাদেশে শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যথাযথ পারিশ্রমিক না দিয়ে ধনী, শুধু এটুকুই পার্থক্য! যাই হোক, সান্ত্বনা আমাদের এতটুকু, দেশে-বিদেশে আগে আমাদের দুর্নীতির শীর্ষ অবস্থানধারী বা সোজা কথায় চোরের দেশ বলত! এখন বলবে— আলট্রা ওয়েলদি বা অতি ধনী ও ধনকুবের দেশ। যার সরল ফল এটাই, আগের চোরেরা এখন ডাকাতে রূপান্তরিত হয়েছে, তাই কতিপয় নব্য আলট্রা ওয়েলদির উত্থান! দেশে আমেরিকা, চায়না, মালয়েশিয়ার মতো নিত্যনতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার নেই। বিশ্বে প্রভাব বিস্তারকারী এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বিশ্ব শেয়ারবাজারের ওপর কোনো প্রভাব নেই। তবুও ওয়েলথ এক্সের পরিসংখ্যানে সারা বিশ্বকে ছাড়িয়ে ধনী হচ্ছে দেশের সামান্য ক’জন মানুষ। যাকে বলা যায়, অনিয়ন্ত্রিত ভুঁইফোড় অর্থনীতি। বাংলাদেশের মতো একটি স্বল্পোন্নত দেশে এ ধরনের আলট্রা ওয়েলদি বা অতি ধনীদের উত্থান কোনো ভালো লক্ষণ নয়! এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা কোনো দেশের জন্যই শুভ সংবাদ নয়। লেখক : নিবন্ধকার
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১