আপডেট : ২৬ August ২০১৮
ফারজানা বীথি আঙুল চোষা প্রায় সব শিশুর ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ অভ্যাস। জন্মের পর থেকে এক বছর পর্যন্ত শিশুর মধ্যে আঙুল চোষার প্রবণতা দেখা যায়। অনেক শিশু আবার বড় হয়েও আঙুল চোষার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে না। তবে এক বছরের নিচের শিশুদের জন্য আঙুল চোষা অত্যন্ত আনন্দদায়ক বিষয়। তবে আঙুল চোষার বিষয়টি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন শিশু অনেক সময় ধরে চোষে এবং খাবার খাওয়ার পরও আঙুল মুখে দেয়। কিংবা অনেক বড় হয়েও এই অভ্যাসটি থেকে যায়। বিশেষজ্ঞের মতে, কখনো কখনো আঙুল চোষা আদৌ কোনো সমস্যা নয়। যদি শিশু বিক্ষুব্ধ বা উত্তেজিত হয়, তাহলে এটা তাকে শান্ত করে। আর যদি সে একঘেয়েমিতে ভোগে, তাহলে এটা তাকে উদ্দীপ্ত করে। মনে রাখতে হবে, আঙুল চোষা কোনো অসুখ নয়। এটা শিশুদের এক ধরনের আরামদায়ক অভ্যাস। তাই এই নিয়ে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা না করাই ভালো। শিশু আঙুল চুষলে জোর করে ছাড়ানোর চেষ্টা করবেন না কিংবা বিকল্প হিসেবে কোনো চুষি কাঠি শিশুকে দেবেন না, তাতে ক্ষতি হতে পারে। আঙুল চোষার কারণ · শিশুদের আঙুল চোষার প্রধান কারণ, তারা এতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই স্বাচ্ছন্দ্য পরিণত হয়ে ওঠে অভ্যাসে। · বাড়ির পরিবেশের ওপর এটি অনেকটা নির্ভর করে। বাড়িতে আনন্দময় পরিবেশ না থাকলে শিশু মুখে আঙুল দিতে পারে। · মাঝে মাঝে নিরাপত্তাহীনতা এবং অপরাধবোধ শিশুর আঙুল চোষার কারণ হতে পারে। · বোতলে দুধ খাওয়া শিশুর মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। খাওয়ায় পরিতৃপ্তি না এলে শিশু আঙুল চুষতে পারে। · এ ছাড়াও শিশু খুব ক্লান্ত থাকলে, শরীর খারাপ থাকলে তার মধ্যে আঙুল চোষার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। নিজেকে ঘুম পাড়াতে কিংবা ক্ষুধা লাগলেও আপনার সন্তান আঙুল চোষার সাহায্য নিতে পারে। এই অভ্যাস ত্যাগে করণীয় · কী কারণে শিশু মুখে আঙুল দেয় তা খুঁজে বের করতে হবে। তার হতাশার কারণ বের করে সে যাতে এটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে সে বিষয়ে তাকে সাহায্য করতে হবে। · শিশুকে তার অভ্যাসের ব্যাপারে তিরস্কার করা যাবে না। একটি বড় শিশুকে তিরস্কার করেও যদি তার অভ্যাস বদলানো না যায়, তাহলে পরবর্তী সময়ে এটি তার আত্মবিশ্বাস তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। · শিশু কখন এবং কেন আঙুল চুষছে সেটি লক্ষ করুন। যদি শিশু খাওয়ার পরও আঙুল চুষতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সে ক্লান্ত কিংবা বিরক্ত হয়ে পড়েছে। তখন আপনি তার হাতে খেলনা সামগ্রী অথবা বই তুলে দিন। · আপনি তাকে বলতে পারেন, আঙুলের চাপে তার দাঁতের ক্ষতি হবে। দাঁত উঁচু হওয়ার ঝুঁকি থাকে, ক্রমাগত আঙুল চোষার ফলে আঙুলের গঠনে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে এবং নখের নিচে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। · আপনার শিশুর চিকিৎসকও এটা তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। স্কুলে তুমি যদি আঙুল চুষতে থাক, তাহলে সহপাঠীরা এটা নিয়ে মজা ও ঠাট্টা করবে। শিশুর আঙুল চোষা ছাড়াতে এটা তাকে বোঝানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। · এই অভ্যাস দূর করার জন্য শিশুকে ছোটখাটো পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা রাখুন। এতে সে পুরস্কার পাওয়ার আশায় আঙুল চোষার অভ্যাস ত্যাগ করতে চেষ্টা করবে। · শিশুকে বকাঝকা দিয়ে তার মনে অপরাধবোধ বাড়িয়ে তোলা ঠিক নয়। · বাড়ির পরিবেশ সুন্দর এবং শিশুর জন্য আনন্দদায়ক করে তোলার চেষ্টা করে তুলতে হবে- যেখানে সে নিরাপদ ও সুখী অনুভব করবে। · আপনার শিশু চেষ্টা করেও আঙুল চোষা ছাড়তে পারছে না। অনেক সময় সে বেখেয়ালে আঙুল মুখে পুরে বসে থাকে। এটা তার কখনো মনে থাকে না যে, সে আঙুল মুখের মধ্যে রেখে দিয়েছে। এ ব্যাপারে তাকে সচেতন করতে হবে। যদি আপনার শিশু ঘুমের মধ্যে আঙুল চোষে, তাহলে ঘুমের সময় তার হাতে গ্লাভস বা হাত মোজা পরিয়ে রাখুন। · নখে নেইল পলিশ লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে আঙুল চোষার প্রবণতা কমবে ধীরে ধীরে। · শিশুর আঙুল চোষা বন্ধ করতে তার হাতের বুড়ো আঙুলে তেতো ওষুধ লাগিয়ে রাখতে পারেন। বর্তমানে শিশুর জন্য নিরাপদ এমন ওষুধ পাওয়া যায়। এগুলোতে তেতো উপাদান থাকে এবং তা শিশুর স্বাদ নিরূপক কোষগ্রন্থিতে আঘাত করে। ফলে আঙুল মুখে নিলেই শিশু তেতো স্বাদ পায় এবং পরে আর আঙুল মুখে নেয় না।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১