আপডেট : ২৬ August ২০১৮
কথা বলে, চুক্তি করেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে নতুন কৌশল নিতে চায় বাংলাদেশ। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাসদস্যদের দমন-পীড়নের মুখে গত বছরের ২৫ আগস্ট লাখো রোহিঙ্গা মানুষ আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ১০ লাখেরও বেশি। প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে এই এক বছর সময়ে সামান্য অগ্রগতি অর্জনও সম্ভব হয়নি। সরকারের ভাবনার কৌশলের একটি হতে পারে আইআইআইএম; সিরিয়া সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘে এই পদ্ধতিটি গৃহীত হয়েছিল। এর আওতায় যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের ভবিষ্যৎ বিচারে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল, ইমপার্শিয়াল অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট মেকানিজম (আইআইআইএম)’। সিরিয়ায় ২০১১ সালের পর সংঘটিত ভয়ানক অপরাধের তদন্ত এবং জড়িতদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর লক্ষ্যে সহায়তার জন্যই আইআইআইএম প্রতিষ্ঠা। সিরিয়া প্রশ্নে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দ্বিধাবিভক্তির মধ্যেই আইআইআইএম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মিয়ানমার প্রশ্নেও নিরাপত্তা পরিষদ দ্বিধাবিভক্ত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি বলছে বিশ্ব রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ব্যর্থ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রেডক্রস বলছে বিষয়টি নিয়ে নতুন মধ্যবর্তী পরিকল্পনা করতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের এক বছরের মাথায় নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবিতে গতকাল শনিবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে বিক্ষোভ করেন তারা। রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, নিজ দেশে ফিরতে আন্তর্জাতিক মহলসহ সবার সহযোগিতা চাই। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মহিব উল্লাহ বলছেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব ফিরে যেতে চাই। কিন্তু আমাদের নিজ নিজ ভূমিতে যেন ফেরত যেতে পারি এবং আমাদের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেটাই আমাদের চাওয়া। গত জুলাই মাসে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ফোরটিফাই রাইটস একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বর্ণনা করা হয়, স্থানীয় বৌদ্ধদের সহযোগিতা নিয়ে সেনাবাহিনী নির্মমভাবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধ ঘটায়। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে গেল সপ্তাহে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সই করলেও রাখাইনে এখনো প্রবেশাধিকার পায়নি জাতিসংঘ। তবে সম্প্রতি রাখাইন সফর করে এসেছেন বাংলাদেশের প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলছেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ৪২টি গ্রামকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য পুনর্গঠন করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে; যদিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীরগতির। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার কতটা আন্তরিক- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো বিশ্বাস করতে চাই যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের কথা রাখবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেওয়ার এক বছরেও সঙ্কটের সমাধান না হওয়ায় ‘মধ্যবর্তী’ পরিকল্পনা নিতে সব পক্ষকে একসঙ্গে বসার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের বাংলাদেশপ্রধান ইখতিয়ার আসলানভ এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ বলে দেবে কী সম্ভব আর কী সম্ভব না। আজই আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে প্রত্যাবাসন হবে না। শরণার্থী সঙ্কটের বছরপূর্তিতে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, আমরা আশাবাদী রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারবে। এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই যে তারা ফিরে যাবে। বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে গত বছর রাখাইনে সেনা অভিযানের তিন মাসের মাথায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সম্মতিপত্রে সই করে মিয়ানমার সরকার। এর ভিত্তিতে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয় এবং ১৬ জানুয়ারি ওই গ্রুপের প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়। প্রত্যাবাসনে বিলম্বের জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে আসছে বাংলাদেশ। ঠিক এ সময়ে প্রত্যাবাসন নিয়ে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি গত ২১ আগস্ট বাংলাদেশকে দায়ী করেন। বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কাজটা বাংলাদেশের’। তবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সার্বিকভাবে চাপ বজায় রয়েছে। আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতিত্ব করবে, তারা এই সঙ্কট তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় রাষ্ট্রপ্রধানরা এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। এক বছর ধরেই চাপ বজায় আছে জানিয়ে একে ‘ইতিবাচক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে গত ১৩ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করে ইউএনএইচসিআর। পরে মিয়ানমারও ইউএনএইচসিআর ও ইউএনডিপির সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করতে সম্মত হওয়ার কথা জানায়। অ্যামনেস্টির পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের সংখ্যালঘুদের জন্য সুবিচার নিশ্চিতের পথ তৈরিতে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল ও সাধারণ পরিষদের বৈঠকে কঠোর এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগামী সপ্তাহে স্টেট ডিপার্টমেন্টে রোহিঙ্গা গণহত্যা বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করার কথা। এই প্রতিবেদনের পর কংগ্রেসের ওপর চাপ সৃষ্টি তাদের পক্ষে সহজতর হবে বলে টাস্কফোর্সের অন্য এক সদস্য মতপ্রকাশ করেন। রাখাইনের সশস্ত্র সংগঠন আরসা সদস্যদের সেনাছাউনিতে হামলার অজুহাতে গত বছর ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর পরিকল্পিত নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার। দেশটির সেনা, বিজিপি ও উগ্রবাদী রাখাইন যুবকরা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা নর-নারী, শিশুর ওপর বর্বরোচিত নৃশংসতা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গারা। বর্তমানে নতুন-পুরনো মিলে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ রোহিঙ্গা অস্থায়ী ৩০ ক্যাম্পে বসবাস করছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১