আপডেট : ১৮ August ২০১৮
সমুদ্রের ডাকে কক্সবাজারে মানুষ আর সমুদ্রের মধ্যে যেন এক গভীর প্রণয়। বায়ু পরিবর্তনের জন্য কিংবা নিছক আনন্দের জন্য বন্ধু-পরিজন নিয়ে কোথাও যাওয়ার কথা উঠলেই মনে পড়ে যায় সমুদ্রের কথা। সমুদ্রের সঙ্গে এই যে আত্মার বন্ধন, তা চাইলেও তো ছিন্ন করা যায় না। তাই সামনের ঈদের ছুটিতে চাইলে আপনিও পারেন সমুদ্রের ডাকে সাড়া দিতে। যেতে পারেন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। শুরুতে কক্সবাজারের সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক। কক্সবাজার পূর্বে ‘পানোয়া’ নামে পরিচিত ছিল, যার অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকত চট্টগ্রামের ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বর্তমানের কক্সবাজার নামটি করা হয়েছে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার হিরাম কক্সের নামে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটের যেকোনো বাস ধরে চলে আসতে পারেন কক্সবাজার। সে ক্ষেত্রে খরচ হতে পারে ৮০০-৯০০ টাকা। ঢাকা-কক্সবাজার যাওয়া-আসা করা বাসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে গ্রিনলাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন প্রভৃতি। সাধারণত সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসগুলো ছেড়ে যায়। তবে কেউ চাইলে ট্রেনেও আসতে পারেন; কিন্তু সে ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগবে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে নেমে আবার বাসে করে যেতে হবে কক্সবাজারের উদ্দেশে। সামর্থ্য থাকলে বিমানপথেও আসতে পারেন, এ ক্ষেত্রে সময় লাগবে মাত্র ৩০ মিনিটের মতো। কক্সবাজারে সাধারণত মানুষ লম্বা ছুটি কাটাতে যায়। আর ঈদের সময় পর্যটকের ভীড় থাকে বেশি। সে ক্ষেত্রে হোটেল আগে থেকেই বুক করে রাখা ভালো। আর যদি বুক করা না থাকে, তাহলে কক্সবাজারে নেমে সর্বপ্রথম কাজ হবে হোটেলের সন্ধান করা। পর্যটকদের জন্য পুরো এলাকাটিতে ছড়িয়ে আছে অনেক হোটেল। কক্সবাজারে আছে ছোট থেকে শুরু করে পাঁচতারা হোটেল। সব ধরনের মানুষের কথা মাথায় রেখেই নানা রকম হোটেলে ভরপুর এই পর্যটন নগরী। পাঁচতারা হোটেলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিটল বে রিসোর্ট, মারমেইড ইকো রিসোর্ট, হোটেল ওয়াসিস ইত্যাদি। কম খরচের মধ্যে যেসব মোটেল রয়েছে সেসবে খরচ পড়তে পারে এক থেকে তিন হাজার টাকার মতো। কক্সবাজার বিচের মেরিন ড্রাইভ ধরে যত দূরে যাবেন পুরো জায়গায় আপনাকে মুগ্ধ করবে। একপাশে পাহাড় আর একপাশে সমুদ্র দেখে আপনি হবেন বিমোহিত। কক্সবাজার গেলে যেসব দর্শনীয় স্থান আপনাকে হাতছানি দিবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- লাবনী পয়েন্ট ও কলাতলী বিচ, হিমছড়ি, ইনানী বিচ, ডুলাহাজরা সাফারী পার্ক, সেন্টমার্টিন ও ছেড়া দ্বীপ, মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, হিমছড়ি ন্যাশনাল পার্ক ও আগামদা খায়াঙ্গে বৌদ্ধবিহার। মন্দির দেখতে চাইলে রামু যেতে পারেন। এসব স্থানে যাওয়ার জন্য রয়েছে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি, যাকে স্থানীয়রা টমটম বলে থাকে। খাবারের খরচ নির্ভর করছে আপনার চাওয়ার ওপর। বিলাসী রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে কম খরচে খাওয়ারও চমৎকার ব্যবস্থা আছে এখানে। তবে স্বাদ আর খরচের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিছু রেস্টুরেন্ট বেশ জনপ্রিয় এখানে। এর মধ্যে রয়েছে ঝাউবন রেস্টুরেন্ট, নিরবিলি রেস্টুরেন্ট, পাউশী রেস্টুরেন্ট, পানকৌরী রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও পথে পথে ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান তো আছেই। সাগরকন্যা কুয়াকাটা দেশের আরেক সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা এখন দেশী-বিদেশী ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ পরিচিত একটি নাম। একে বাংলাদেশের সাগরকন্যা বলা হয়ে থাকে। ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর লাগোয়া পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় সাগরকন্যা কুয়াকাটার অবস্থান। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা দৃষ্টিনন্দন এ বেলাভূমির দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার। সৈকতের বিশেষ একটি আকর্ষণ হল একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোলোভা দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আশে পাশে তাকালেই চোখে পড়বে বেলাভূমিতে লাল কাঁকড়ার নৃত্য ও জেলেদের জীবন জীবিকার যুদ্ধ। সেই সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাবে স্থানীয় আদিবাসী রাখাইন সমপ্রদায়ের কৃষ্টি-কালচারের সাথে। সড়ক ও নৌ-পথ উভয়েই আসা যায় এখানে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুয়াকাটার দুরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার। বিকল্প পথে মাওয়া হয়ে এলে দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে। এ ছাড়া খুলনা-যশোর থেকে বিআরটিসি বাস এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে সৌদিয়া, সাকুরা, ঈগল পরিবহনসহ দুরপাল্লার বাসগুলো সায়েদাবাদ কিংবা গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। আরও আরামদায়ক ভ্রমনের জন্য পূর্ণিমা রাতে ঢাকা থেকে নদী পথে বরিশাল, পটুয়াখালী অথবা আমতলী লঞ্চ যোগেও কুয়াকাটায় আসতে পারবেন। এখানে পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে সরকারী-বেসরকারী অত্যাধুনিক হোটেল ও মোটেল। এগুলোর মধ্যে- পর্যটন হলিডে হোমস, জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, সড়ক ও জনপদ বিভাগের ডাক বাংলো এবং এলজিইডি’র বাংলো অন্যতম। এ ছাড়া কুয়াকাটা ইন্টারন্যাশনাল, স্কাইপ্যালেস, নীলাঞ্জনা, সী-ভিউ, গোল্ডেন প্যালেস, বীস ভেলীসহ একাধিক এসি/ নন এসি রুমসহ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও মোটেল রয়েছে। টেলিফোন কিংবা অনলাইনে এসব হোটেল-মোটেলে অগ্রীম বুকিং দিতে পারেন। সুন্দরবনের পূর্বাংশে ট্যাংরাগিরীর ফাতরার বন, সোনার চর, হাসের চর, কটকা, গঙ্গামতি লেক, মিশ্রি পাড়ার বৌদ্ধ বিহার, মম্বিপাড়ায় সৎ সঙ্গের আশ্রম, ইকোপার্ক, শুটকি পল্লী, গঙ্গামতির ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট ও বিভিন্ন রাখাইন পাড়াসহ কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টর কাছেই সৈকতে বালুর তলদেশ থেকে জেগে ওঠা প্রাচীন নৌকাটি দেখতে পাবেন। এছাড়া যেতে পারবেন নির্মাণাধীন পায়রা সমুদ্র বন্দর ও সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন দেখতে। সৈকতের আশপাশে রয়েছে একাধিক ট্যুরিজম সেন্টার। দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখানের জন্য এসব সেন্টারগুলোর নিজস্ব নৌ-যান রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত মোটর সাইকেল, ভ্যান ও ঘোড়ায় চরে ঘুরে দেখতে পারেন প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য। কুয়াকাটায় পছন্দনীয় খাবারের জন্য রয়েছে- খাবার ঘর-৫, আল-মদিনা, বরিশাল হোটেল, রাজধানী হোটেল, আপ্যায়ন হোটেল, খেপুপাড়া হোটেলসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এসব হোটেলে কম খরচে মানসম্মত খাবার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও সমুদ্র সৈকতের আশ-পাশে পছন্দসই খাবারের দোকান খুঁজলে পাওয়া যাবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১