আপডেট : ১৭ August ২০১৮
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবেলাকে প্রাধান্য দিয়েই রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরের গুচ্ছগ্রাম ধরনের আশ্রয় শিবিরটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ চরকে সাগর থেকে সুরক্ষিত রাখতে বাঁধ নির্মাণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সেখানেই বেশিরভাগ টাকা খরচ হচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভাসানচর কোনো আটক কেন্দ্র নয়। কক্সবাজার থেকে মাত্র ১০ শতাংশ রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে এবং সেখানে তাদের দাতা সংস্থাগুলোর ত্রাণের ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে না, দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যস্ত জীবন কাটাবে। ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের বিরোধিতাকারী মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে এ জন্য অপেক্ষা করতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ামাত্রই পরিদর্শনের জন্য মানবাধিকার কর্মীদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। শাহরিয়ার আলম জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য কংক্রিট দিয়ে নির্মাণাধীন ইউ-আকৃতির প্রতিটি গুচ্ছগ্রামে গুচ্ছ ৮০০ মানুষ বাস করতে পারবে। এটি হবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধী একটি আশ্রয় শিবির। সেখানে একটি স্কুল, মাছ চাষের জন্য একটি পুকুর এবং লালন-পালনের জন্য গবাদিপশু দেওয়া হবে। পাশাপাশি তারা শাক-সবজিও উৎপাদন করতে পারবে। সুতরাং, এখন তারা যেসব ক্যাম্পে আছে, সেগুলো থেকে এ জায়গাটা অনেক বেশি ভালো হবে। তিনি বলেন, এখনকার শিবিরে তাদের কোনো কাজ নেই, তারা শুধু সাহায্য সংস্থাগুলো থেকে খাবার সংগ্রহ করে। ভাসানচরে তারা কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ১০ শতাংশ নেওয়া হবে সেখানে। সমালোচনাকারীদের অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা সমালোচনা করছেন তাদের আমি শিবিরটির উদ্বোধন না করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করব। আশা করি, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরিত করার আগে অক্টোবরে আমরা বন্ধুদের সেখানে আমন্ত্রণ জানাতে পারব। ভাসানচরে সরকারের তহবিল থেকেই ব্যয় হচ্ছে, এর জন্য কোনো বিদেশি সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না, নতুন এ পুনর্বাসন কেন্দ্র কেমন হবে— আল জাজিরার এ প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এর জন্য সহায়তা চাইনি। কারণ প্রথমে আমরা এটি নির্মাণ করতে চাই। অ্যামনেস্টি কিংবা অন্য যেকোনো মানবাধিকার সংগঠনই হোক না কেন, তাদের আহ্বান জানাব, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর তারা যেন ভাসানচরের ক্যাম্পটি দেখে যায়। এ পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থায়ী বসতি হবে কি না- জানতে চাওয়া হলে প্রতিমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গারা যেন তিন বছর বা ততোধিক সময় থাকতে পারে তা মাথায় রেখে এ নির্মাণকাজ চলছে। রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে গেলে ওই অবকাঠামো বাংলাদেশিদের জন্য ব্যবহার করা হবে। ২০১৫ সালে প্রথম এই চরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন পরিকল্পনার কথা বলার সময়ই অনেক সমালোচনা হয়। বিশেষজ্ঞরা ওই দ্বীপে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ঘূর্ণিঝড় বা বন্যায় মারাত্মক প্রাণহানির আশঙ্কাও করেন তারা। তখন এই পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হলেও গত বছরের আগস্টে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর আবারো এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে ১২০টি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করা হচ্ছে। তাতে পুনর্বাসন করা হবে এক লাখ ৩ হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গাকে। এ জন্য ২০১৭ সালের নভেম্বরে একনেকে ২৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। হত্যা-ধর্ষণসহ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর দেশটির রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গার জনগোষ্ঠীর ৭ লাখ মানুষ পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। তার আগে কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাসহ এ সংখ্যা এখন ১১ লাখের ওপরে। গত জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেইপিডো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এ ছাড়া জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, রাখাইন এখনো রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১