বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১০ August ২০১৮

‘ডিজিটাল জালিয়াত’ চক্রের ৯ সদস্য গ্রেফতার

#চারজনের ১০ কোটি টাকা করে সম্পদের সন্ধান #জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক বছরে শতাধিক ব্যক্তির চাকরি


রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ‘ডিজিটাল জালিয়াত’ চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চক্রটি পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীকে সরবরাহ করত। বিসিএস পরীক্ষা থেকে শুরু করে ব্যাংকসহ সরকারি নানা চাকরির নিয়োগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে এভাবে জালিয়াতি করে আসছিল এই চক্র। এর নেটওয়ার্ক সিআইডির হাতে চলে আসায় পরীক্ষায় জালিয়াতি অনেকাংশে কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।

গ্রেফতাররা হচ্ছে- হাসমত আলী সিকদার, হোসনে আরা বেগম, গোলাম মোহাম্মদ বাবুল, অলিপ কুমার বিশ্বাস, মো. ইব্রাহিম, নুরুল ইসলাম, আইয়ুব আলী ওরফে বাঁধন, মোস্তফা কামাল ও আনোয়ার হোসেন মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে মোল্যা নজরুল বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল চক্রটির মূল উৎপাটন করা। সর্বশেষ অভিযানে ৯ জনকে আটকের মধ্য দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। এ নয়জন হলো- মাস্টারমাইন্ড বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, বিএডিসির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, ৩৬তম বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত ইব্রাহিম ও ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ আইয়ুব আলী ওরফে বাঁধন, রাজধানীর অগ্রণী স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ বাবুল, পিয়ন আনোয়ার হোসেন মজুমদার, নুরুল ইসলাম, ধানমন্ডি গভ. বয়েজ স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক হোসনে আরা বেগম ও পিয়ন হাসমত আলী শিকদার। অলিপ, ইব্রাহিম, মোস্তফা ও বাঁধনের কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা করে সম্পদেরও সন্ধান পেয়েছে সিআইডি।

মোল্যা নজরুল বলেন, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন বোর্ড, ব্যাংক, বিসিএস ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে আসছিল। এ নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করে। সিআইডি গত বছর থেকে এর তদন্ত শুরু করে। এই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ অক্টোবর গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ‘ডিজিটাল জালিয়াত’ চক্র ধরতে অভিযান পরিচালিত হয়। ২০ অক্টোবর শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। এরপর ‘মাস্টারমাইন্ড’ নাটোরের ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামীসহ এই চক্রের ২৮ সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার এই চক্র আগের রাতে প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করত। আগের রাতে প্রেস থেকে প্রশ্নফাঁসের পুরো চক্র চিহ্নিত করা গেলেও ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ চক্রটি বাকি ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক দিন সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এ চক্রের ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় হাসমতের কাছে বিসিএস লিখিত পরীক্ষার কয়েক কপি প্রশ্নপত্র ও ৬০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এই ৯ জনসহ এ মামলায় গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার অলিপ, ইব্রাহিম, বাঁধন ও মোস্তফা জানান, কেন্দ্র থেকে প্রশ্নফাঁসের পর তারা রাজধানীর আলিয়া মাদরাসা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের দুটি কক্ষে বসে অভিজ্ঞদের দিয়ে প্রশ্নপত্র সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করত। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে মোল্যা নজরুল আরো বলেন, ইব্রাহিম বিলাসী জীবনযাপন করত। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও খুলনায় তার একটি চারতলা বাড়ি ও নড়াইলে ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। রাজধানীতে রূপালী মানি এক্সচেঞ্জ নামে তার একটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও সরকারি চাকরিতে শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে চক্রটি। জালিয়াতির মাধ্যমে যারা নিয়োগ পেয়েছে, তাদের বেশ কয়েকজনের তথ্যও আমরা পেয়েছি। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা জালিয়াতি করে চাকরি নিয়েছে তাদের চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১