আপডেট : ২৮ July ২০১৮
বলা হয়ে থাকে, ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’। কথাটির নিহিতার্থ হলো, বিচার বিলম্বিত হওয়া বিচার না হওয়ার শামিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা আমাদের বিচারব্যবস্থায় এ কথাটাই যেন অনেকটি সত্য হয়ে উঠেছে। মামলার সঙ্গে যুক্ত পক্ষগুলো বলছে, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দেশের নিম্ন থেকে উচ্চ আদালতগুলোতে বর্তমানে ৩৩ লাখ ৯৬ হাজার, অর্থাৎ প্রায় ৩৪ লাখ মামলা দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন। তথ্যটি দিয়েছেন খোদ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেছেন, শুধু প্রচলিত বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে এত বিপুলসংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়। এ বিশাল মামলাজট নিরসনে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কার্যকর পন্থা উদ্ভাবন করতে হবে। বর্তমানে মামলাজট অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বাধিক। বাস্তবতা হলো, মামলাজটে বিচারক স্বল্পতা বড় ভূমিকা রাখছে। এক যুগে শুধু ঢাকা মহানগর দায়রা ও সেশন জজ আদালতে মামলার সংখ্যা বেড়েছে চার গুণেরও বেশি। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি বিচারকের সংখ্যা। উচ্চ আদালতের অবস্থাও একই। বিচারক সঙ্কট ও অনুন্নত অবকাঠামোর কারণে বিচারিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে এই পরিস্থিতি। এ থেকে উত্তরণে নতুন বিচারক নিয়োগ এবং আদালত কাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন। মামলা নিষ্পত্তিতে বিকল্প পদ্ধতির কথাও ভাবতে হবে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়। দীর্ঘদিন পর মামলার নিষ্পত্তি হলেও তখন ন্যায়বিচারের আর কোনো প্রয়োজন বা প্রাসঙ্গিকতা থাকে না। তাই আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিতে বিচারকাজ সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়ে থাকেন অনেকেই। তবে স্বীকার করতে হয়, সরকার ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে গত দুই বছরে আদালতগুলোতে মামলা নিষ্পত্তিতে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তারপরও মামলাজট নিরসনে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিচারকদের। অনেক জেলায় বিচারক, সহায়ক জনবল সঙ্কটের কারণে বিচারকাজে গতি আসছে না। মামলা অনুপাতে নতুন বিচারক ও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ না হওয়ায় বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন জেলায় প্রয়োজনীয় আদালত না থাকায় বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এজন্য এজলাস ভাগাভাগি করেও মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এসব সঙ্কট নিরসনে আদালত কাঠামোর সংস্কার জরুরি। সরকারকে অবশ্যই এজন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও আর্থিক বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আমরা মনে করি, সরকার ও বিচার বিভাগের সমন্বয়ে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব। তাই এ বিষয়ে অবিলম্বে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কার্যকর পন্থা উদ্ভাবন করা দরকার।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১