বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২২ July ২০১৮

ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ

জগন্নাথের সিদু মামা

সিদু মামা সংরক্ষিত ছবি


মহিউদ্দিন রিফাত

কেউ কেউ সুখ খোঁজেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকাকড়িতে, কারো বা সুখ আকাশচুম্বী অট্টালিকার সোনারঙা খাটে। আবার কেউ এসব বিলাসিতাকে চিরতরে মন থেকে ঝেড়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে প্রিয় আঙিনায় প্রাণের টানে ঘুরেফিরে থাকেন দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর, যুগ কিংবা তারও বেশি দীর্ঘকাল ধরে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সিদু মামা এমনই একজন।

জবির শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা কর্মচারী না হলেও দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। ভোরে ঘুম থেকে উঠে এই ক্যাম্পাসে এসে দেখেছেন ভোরের সূর্য আর গোধূলি লগ্নে সূর্যকে বিদায় দিয়ে ফিরেছেন নিজের ঘুম পাড়ানি বিছানায়।

তার পুরো নাম আবু বকর সিদ্দিক হলেও জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে সিদু মামা নামেই পরিচিত তিনি। চা বিক্রি করতে করতে এই দীর্ঘ সময়ে কলেজ থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়া যেমন দেখেছেন, তেমনি জবিতে গমন করা কিংবা প্রস্থান করা লাখো মুখের সঙ্গে সঙ্গে চিনে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি ইট কিংবা ধূলিকণা। তার ফ্লাক্সের গরম লেবু-চা যেমন ক্যাম্পাসের আড্ডাবাজদের কাছে খুব জনপ্রিয়, তেমনই ভালোবাসার মানুষ এই সিদু মামা। সন্তান বা নাতিতুল্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সিদু মামার বন্ধুত্ব যেন আজন্মকালের, চির অকৃত্রিম। চা পানের সঙ্গে সঙ্গে সিদু মামা শোনেন প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুখ-দুঃখের গল্প। কখনো জোগান সান্ত্বনা, কখনো দেন সাধুবাদ বা এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।

সদা হাসিমুখ সিদু মামার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে। দুই ছেলে ও চার মেয়ের জনক তিনি। উচ্চাভিলাষী সংসার না হলেও মোটামুটি সুখের সংসার ছেড়ে প্রিয়তমা স্ত্রী না ফেরার দেশে চলে গেছেন ২০০৭ সালে।

সিদু মামা জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকায় আসেন আশির দশকে। প্রথম দিকে তিনি আদালত চত্বরে বাদাম বিক্রি করতেন। একটানা তিন বছর সেখানে কাজ করেন তিনি। এরপর তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের লাইব্রেরিয়ান তাকে একটা চায়ের ফ্লাক্স কিনে দেন। সেই ফ্লাক্স নিয়ে জগন্নাথেই শুরু হয় সিদু মামার চা বিক্রি পর্ব।

নিজের জীবনের দুঃখের গল্প আড়াল করলেও দুঃখ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি মনে করে। রাজনৈতিক কারণে হোক বা অধিকার আদায়ের কারণে হোক, এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের রক্তঝরা দেখেছেন খুব কাছ থেকে। নিজের সন্তানের মতো শিক্ষার্থীদের অকাল মৃত্যু কিংবা পঙ্গুত্ব বরণ অথবা অভিশাপ বয়ে বেড়ানো তাকে ঘুমের ঘোরেও তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।

সিদু মামা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে। জীবিত থাকতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেছেন তিনি। তবে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে কোনো উপঢৌকন নেননি সিদু মামা। প্রয়াত রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে অঝোর ধারায় কেঁদেছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপতির কবরে নিজ হাতে মাটি দেওয়াটাই এখন তার একমাত্র স্মৃতি। জবিকে কেন এত ভালোবাসেন সিদু মামা? বলছেন তিনিই, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমি যে ভালোবাসা পেয়েছি, সেটা আর কারো কাছ থেকে পাইনি। এখানকার মানুষগুলো আমার পরিবারের আপনজনের মতো।

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কাটানো সিদু মামা রাত কাটান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে পাটুয়াটুলীতে বাবু মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর লেপ-তোশকের দোকানে।

শেষ জীবনে মামার লক্ষ্য কী? তার সহজ-সরল উত্তর, জগন্নাথ আমার ঘরবাড়ি, যতদিন বাঁচি এই ক্যাম্পাসেই কাটিয়ে দিতে চাই।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১