বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৭ July ২০১৮

পর্যটন সম্ভাবনাময় হাওর

শীত আর বর্ষার আলাদা আলাদা রূপ প্রকৃতিপ্রেমীদের দুর্নিবার আকর্ষণে টেনে নিয়ে যায় হাওরের মাঠে-ঘাটে ছবি : আদনান আদিদ


সমুদ্র নয়, সমুদ্রের মতোই বিশাল জলরাশি। মাঠঘাট সব পানিতে একাকার। তার ওপর ছোট ছোট দ্বীপের মতো একেকটি গ্রাম। বর্ষা মৌসুমে এমন দৃশ্যপটের দেখা মেলে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মদন ও মোহনগঞ্জ উপজেলার হাওর জনপদে।

হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীর প্রতিটি গ্রাম এখন জলবন্দি। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হয় নৌকা কিংবা বাঁশের সাঁকো দিয়ে। তবে বাঁশের সাঁকোর চেয়ে নৌকায় চলাচলের প্রচলনই এখানে বেশি। বর্ষায় যোগাযোগের জন্য নৌকাই ভরসা। এখানে চারদিক ঘেরা অথৈই পানি থাকার মৌসুমটিতে কিছু মানুষ নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। কার্তিকের শেষ দিকে হাওরের পানি সরে যায়। এ সময়টিতে দিগন্তবিস্তৃত মাঠে যতদূর চোখ যায় দেখা মেলে শুধু সবুজ আর সবুজের। মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত হাওরের আঁকাবাঁকা নদ-নদীগুলোতে থাকে বড় বড় রুই, কাতল, চিতল, বোয়াল জাতীয় মাছের সমারোহ। ধান ও মাছের মা হিসেবে পরিচিত এ হাওর জনপদে শীতকালীন সময়টিতে আসে প্রচুর পরিমাণ অতিথি পাখি। বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে থাকা বিল-ঝিলে ভরপুর পাখিদের কলতানে তখন মুখরিত হয় হাওর।

শীত আর বর্ষার আলাদা আলাদা রূপ প্রকৃতিপ্রেমীদের দুর্নিবার আকর্ষণে টেনে নিয়ে যায় হাওরের মাঠে-ঘাটে। অবশ্য ময়মনসিংহ বিভাগের খালিয়াজুরীর এ হাওরপারে বর্ষাকালীন সৌন্দর্যটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে অনেকটা বেশি। এ সময়ে এখানে ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। তখন যাতায়াত ব্যবস্থাও থাকে সহজতর।

নেত্রকোনার ইতিহাস নামের একটি বইয়ে উল্লেখ আছে, খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে খালিয়াজুরী ছিল কামরূপ রাজ্যের অস্থায়ী রাজধানী। তখন এ রাজ্য শাসন করতেন খত্রীয় জিতারী সন্যাসী নামের এক ব্যক্তি। সে আমলের একটি মঠ এখানে এখনো রয়েছে। খালিয়াজুরীতে দেখার মতো আরো আছে ময়মনসিংহ গীতিকায় লেখা মহুয়ার পালার সেই মহুয়া সুন্দরী ও হোমরা বাইদ্যার স্মৃতিবিজড়িত স্থান মহুয়ারবাগ ও বাইদ্যারচর এলাকা। এখানে আছে, শত বছরের পুরনো বৈষ্ণব আখড়া ও মসজিদ, হাসান রাজার নানার বাড়ি ও নিখিল ভারত পত্রিকার একসময়ের সম্পাদিকা ও ব্রিটিশবিরোধী লেখিকা অরুণা দত্তের জন্মভূমি। খালিয়াজুরী সদরের কলেজ রোড এলাকাকে ঘিরে এখন গড়ে উঠেছে পিকনিক স্পট। বর্ষা মৌসুমে সুসজ্জিত নৌকাযোগে প্রতিদিন এখানে আসে একাধিক পিকনিক পার্টি। সিসি ব্লক দিয়ে মোড়ানো ওই রোডের এক পাশে আছে সারি সারি গাছ আর অন্য পাশে বিশাল জলরাশি। রোডের অদূরেও আছে সমুদ্রের মতো পানির প্রভাব।

খালিয়াজুরীতে গড়ে তোলা যেতে পারে পর্যটনকেন্দ্র। স্থানীয় উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি তপন বাঙ্গালী জানান, প্রায় ৭ বছর পূর্বে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তিনি লিখিত আবেদনে জানিয়েছিলেন এখানে সরকারি উদ্যোগে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য। এখানে প্রায়ই ঘুরতে আসেন অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক। চীনের বিখ্যাত পর্যটক হিউয়েন সাংও হাওরের জলধারায় পা ভিজিয়েছেন। এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে না ওঠায় পর্যটকদের পড়তে হয় থাকা-খাওয়াসহ নানামুখী বিড়ম্বনায়। পর্যটনকেন্দ্রটি হলে পর্যটকদের সুবিধার পাশাপাশি শান্তিপ্রিয় সহজ-সরল ও অবহেলিত মানুষের বসবাসস্থল এ হাওরপারে বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবাহ। সরকার পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। খালিয়াজুরী সদর থেকে বোয়ালি পর্যন্ত চলাচল উপযোগী প্রায় সাত কিলোমিটারের একটি সড়ক কিংবা ওভারব্রিজ স্থাপনের মাধ্যমে এখানকার যোগাযোগকে সমৃদ্ধ ও পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি।

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার আবদুল্লাহ আল মামুন বাবু জানান, ইতোমধ্যে খালিয়াজুরী মৌজার হেমনগর কান্দার ৩৩৩৩ দাগের ২৬ একর খাসজমি পর্যটনকেন্দ্রের জন্য শনাক্ত করা হয়েছে। ভূমি প্রশাসনের মাধ্যমে খুব দ্রুতই এ জমি প্রতীকী মূল্যে হস্তান্তর করা হবে পর্যটনের নামে।    

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের পরিকল্পনা বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার খালেদ বিন মজিদ বলেন, এখানে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে। পর্যটনের নামে জায়গা বরাদ্দ হওয়ার কাজটি সম্পন্ন হলেই এ প্রস্তাবটি পাস করতে ওঠানো হবে একনেক বৈঠকে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১