বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৫ July ২০১৮

আম্মার একটা নিজের বাড়ির শখ ছিল : আবুল হায়াত

আবুল হায়াত সংরক্ষিত ছবি


আমার মা, আম্মা বলেই ডাকতাম আমরা। আমার সব যৌক্তিক অযৌক্তিক আবদারের নির্ভরযোগ্য জায়গা ছিলেন তিনি। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র ছেলে হওয়ায় অন্যদের চেয়ে সবচেয়ে বেশি আহ্লাদ আর প্রশ্রয় পেয়েছি আমি। খাওয়ার সময় অন্যরা যখন অর্ধেক ডিম পেত, আমার জন্য তখন গোটা ডিমটাই বরাদ্দ থাকত। শুধু খাওয়াই নয়, আমার পোশাক-আশাকের ব্যপারেও তিনি সজাগ নজর রাখতেন। সাদা পাঞ্জাবি বরাবরই আমার পছন্দ ছিল। একদিন আম্মা বললেন, তুই সাদা পাঞ্জাবি কেন পরিস? এখনো মনে আছে, পরে তিনি আমাকে গোলাপি রঙের সিল্কের একটি পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলেন। আর ওই পাঞ্জাবি দেখে আমি তো কেঁদেই হয়রান। ছেলে হয়ে আমি কেন গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি পরব! আমার কান্না দেখে আম্মা সেদিন হেসে বলেছিলেন, দেখব তুই কতদিন রঙিন জিনিস না পরে থাকিস। এখনো রঙিন কিছু পড়লে আম্মার কথা মনে পড়ে। আদরের সন্তান হওয়ায় আমার সব ব্যাপারেই তিনি  শিথিল ছিলেন। স্কুলে যেতে মন না চাইলে আম্মাকে জানালে তিনি সহজেই মেনে নিতেন। একবার একটা এয়ারগান কেনার শখ হলো আমার। কিন্তু তখনকার সময়েই এর দাম ছিল চল্লিশ টাকা। নিজের মাটির ব্যাংকে জমানো সিকি আধুলি গুনে পাওয়া গেল ত্রিশ টাকা। বাকি টাকা কই পাই? সে সময় আম্মাই বাকি টাকাটা হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ওই বয়সে আমাদের পাড়ায় একমাত্র আমার কাছেই এয়ারগান ছিল।

শতভাগ গৃহিণী আম্মার সময় কাটত রান্নাঘর, ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা আর গল্পের বই পড়ে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে কলোনিতে থাকার সময় আব্বা ছিলেন এমপ্লয়ি ক্লাবের সেক্রেটারি। প্রতিমাসেই ক্লাবে নাটক হতো। তখন থেকেই আম্মার হাত ধরে নাটক দেখতে যেতাম। মাত্র দশ বছর বয়সে প্রথম বন্ধুরা মিলে একটি নাটক করার কথা ভাবলাম। কিন্তু নাটকের জন্য তো একটা মঞ্চ দরকার। সে নাটকের মঞ্চ তৈরিতে যত সাহায্য সহযোগিতা দরকার, তার সবই আম্মার কাছ থেকে পেয়েছিলাম। মঞ্চের জন্য চৌকি, চাদর, শাড়ি, টুকিটাকি আরো যা কিছু লাগে সবই আম্মা করে দিয়েছিলেন।  আম্মা ছিলেন আমার নাটকের সবচেয়ে বড় দর্শক এবং আমার প্রচণ্ড ভক্ত। বেঁচে থাকতে আমার প্রায় সব মঞ্চনাটকই তিনি দেখেছেন। আমাদের তখন টেলিভিশন ছিল না। তাই টিভিতে প্রচারিত নাটকগুলো দেখতে অন্যের বাড়িতে গিয়ে আগেই বসে থাকতেন। নাটক নিয়ে আম্মার শুধু একটাই আপত্তি ছিল- নাটকে আমার মৃত্যু। এটি তিনি কখনোই মেনে নিতে পারতেন না। ১৯৭৪ সালে আম্মা আমাদের ছেড়ে চলে যান। দীর্ঘদিন জন্ডিসে ভুগেছিলেন। মৃত্যুর সময়টায় আমি কাছে ছিলাম না এটা আমার সারা জীবনের একটা দুঃখ। আম্মাকে নিয়ে এখনো কিছু অতৃপ্তি রয়ে গেছে আমার মধ্যে। বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনের জন্য যে সচ্ছলতা প্রয়োজন ছিল, তখন তা আমার ছিল না। যখন সচ্ছলতা এলো, তখন আব্বা-আম্মা দুজনই চলে গেছেন। রান্নাঘরটা আম্মার আপন জায়গা ছিল। বেশিরভাগ সময় ওখানেই কাটত, গরমে কত কষ্ট পেতেন। এখন নিজে যখন এসিতে থাকি তখন মনে হয়, আহা মাকে যদি একদিনও এসির মধ্যে রাখতে পারতাম! আম্মার একটা নিজের বাড়ির শখ ছিল- যে বাড়িতে একটা বাগান থাকবে, একটা পুকুর থাকবে। নিজের হাতে গাছগাছালি লাগাবেন। প্রায়ই বলতেন এমন একটা স্বপ্নের বাড়ির কথা। আব্বা সেই বাড়ি করতে পারেননি।

 

অনুলিখন : মনিরা তাবাস্সুম


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১