বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০২ July ২০১৮

স্মরণ

জাঁ জ্যাক রুশো

জাঁ জ্যাক রুশো ছবি : ইন্টারনেট


১৭১২ সালে জেনেভা প্রবাসী প্রোটেস্ট্যান্ট মতানুসারী এক ফরাসি পরিবারে জাঁ জ্যাক রুশোর জন্ম। জন্মকালেই মাতৃহারা এবং দশ বছর বয়সে পিতা-পরিত্যক্ত রুশো আত্মীয়স্বজনের কাছে প্রতিপালিত হন। আত্মীয়রা পারিবারিক ঘড়ির ব্যবসায় তাকে কাজে লাগাতে চাইলে ১৬ বছর বয়সে রুশো বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং ভবঘুরের মতো বিভিন্ন স্থানে বিচিত্র পেশায় জীবিকা উপার্জন করেন। ১৭৪২ সালে প্যারিসে নিবাস গড়েন। প্রথম দিকে স্বরলিপি নকল করে উপার্জনের চেষ্টা করেন। প্রতিভাবান রুশো অল্পদিনের মধ্যেই মারিভো, দিদেরো, ফঁতনেল প্রমুখ নামকরা চিন্তাবিদের ঘনিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হন। দিদেরো তার বিশ্বকোষে লেখার সুযোগ করে দিলে লেখালেখির প্রথম স্বীকৃতি পান। ১৭৪৯ সালে দিজোঁ অ্যাকাডেমি ‘বিজ্ঞান ও শিল্পকলার অগ্রগতি কি নৈতিকতাকে দূষিত করছে, না পবিত্র করেছে?’ শীর্ষক প্রতিযোগিতামূলক রচনা আহ্বান করে। রুশো নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির ওপর তার নিবন্ধটি উপস্থাপন করেন। ১৭৫০ সালে এ রচনাটিই প্রথম পুরস্কার জিতে নেয় এবং এরপর ভিন্ন মতাবলম্বী চিন্তাধারার লেখক হিসেবে রুশোর খ্যাতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

ফরাসি দার্শনিক, সমাজবিদ, আলোকিত যুগের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন জাঁ জ্যাক রুশো। রুশোর রাজনৈতিক চিন্তাধারা ফরাসি বিপ্লবকে যেমন প্রভাবিত করেছে, তেমনি পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদের বিকাশেও ভূমিকা রেখেছে। জন্মসূত্রে সুইজারল্যান্ডের অধিবাসী হলেও রুশো ছিলেন ফরাসি জ্ঞানালোক আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি এবং ইউরোপের প্রগতিবাদী ও গণতান্ত্রিক সমাজচেতনার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি আত্মজৈবনিক রচনাশৈলীতে আধুনিক ধারার সূত্রপাত করেন এবং তার লেখনীতে মন্ময়ী চেতনার বিকাশের প্রভাব হেগেল ও ফ্রয়েডসহ অনুবর্তী অনেক চিন্তাবিদের মধ্যেই সুস্পষ্ট হতে দেখা যায়। তার রচিত উপন্যাসগুলো ছিল একদিকে অষ্টাদশ শতকের জনপ্রিয় বেস্টসেলার এবং একই সঙ্গে সাহিত্যে রোমান্টিকতাবাদের অন্যতম উৎস। তাত্ত্বিক ও সুরকার হিসেবে পাশ্চাত্য সঙ্গীতেও তার অসামান্য অবদান রয়েছে।

তবে প্যারিসের মার্জিত শহুরে অভিজ্ঞতা তার জন্য সুখকর ছিল না। সারল্য-আভিজাত্যের দ্বন্দ্ব, বঞ্চনা ও ভাগ্যবিড়ম্বনা তাকে আরো স্পর্শকাতর, রূঢ়স্বভাবের এক খ্যাপাটে মানুষে পরিণত করে এবং তাকে সব প্রচলিত রীতিনীতি ও প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী এবং শাসক ও সভ্যতার সমালোচক করে তোলে। এ সময় তার লেখা ‘সোস্যাল কন্ট্রাক্ট’ ও ‘এমিল’ বই দুটি প্রকাশিত হলে রুশো একই সঙ্গে গির্জা ও রাজতন্ত্রের রোষানলে পড়েন। এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৭৬৬ সালের দিকে রুশো ইংল্যান্ডে আশ্রয় নেন। তবে ১৭৭০ সালে তিনি পুনরায় প্যারিসে ফেরত আসেন। জীবনের শেষদিকে সন্দেহপ্রবণতা রুশোর মানসিক বিকারের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ১৭৭৮ সালের ২ জুলাই ভাগ্যবিড়ম্বিত এ চিন্তানায়কের জীবনাবসান ঘটে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১