আপডেট : ০৭ June ২০১৮
কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর গ্রেফতার হয়েছেন। গীতিকার, সুরকার ও গায়ক শফিক তুহিনের করা মামলায় মঙ্গলবার রাত দেড়টায় তাকে গ্রেফতার করে সিআইডির একটা দল। এগুলো একদিনের বাসি খবর। আরো আপডেট হলো পুলিশ তাকে এক সপ্তাহের রিমান্ডে নিতে চেয়েছিল। আদালত সেই রিমান্ডের আবেদন নাকচ করেছেন। আপাতত আসিফ আকবরের ঠিকানা জেলহাজত। হুট করে এই পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন? এমন কী অন্যায় আসিফ আকবর করেছিলেন যে তার নামে মামলা করতে হলো? আসলে এই পরিস্থিতিটা হুট করে তৈরি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতির সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিরও যোগ আছে বলে অনেকে মনে করছেন। বেশ কিছু দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসিফ আকবর বনাম প্রীতম হাসান বাগ্যুদ্ধ চলছিল। সে যুদ্ধে প্রীতমের পক্ষে জড়িয়ে পড়েন শফিক তুহিন। স্রেফ ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির সে যুদ্ধের রূপটা মোটেই সুশ্রী ছিল না। এর আগে প্রীতম ও আসিফ একে অন্যকে অসম্মান করে কথা বলেছেন ফেসবুকে। কেউই কারো প্রতি সম্মান দেখাননি। সর্বশেষ শফিক তুহিন আসিফ আকবরকে ‘চোর’ বানানোর জন্য নানান তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন ফেসবুকে। দলিল দস্তাবেজ উপস্থাপন করে আসিফকে সরাসরি ‘চোর’ সাব্যস্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। এই অসম্মানের প্রত্যুত্তরে আসিফ আকবর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ফেসবুকে একটা লাইভ করেন ক’দিন আগে। সেখানে শফিক তুহিনকে ‘প্রতিহত’ করার আহ্বান জানিয়েছেন নিজের ভক্তদের কাছে। এই ‘প্রতিহত’ শব্দে শফিক তুহিন ‘ভয় পেয়েছেন’ বলে মনে হচ্ছে। ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি মামলা করেছেন। কতটা ভয় পেয়েছিলেন তা জানার জন্য শফিক তুহিনকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি অবশ্য। যা হোক, শফিক তুহিন দেখিয়ে দিয়েছেন, ‘তিনি পারেন’। শফিক তুহিন, প্রীতম হাসান ও আসিফ আকবর দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। তাদের সম্পর্কটা এক সময় আজকের মতো ছিল না। তাদের মধ্যে এক দিন সুসম্পর্ক ছিল। স্রেফ ব্যক্তিগত স্বার্থের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে তারা আজ এ অবস্থানে। তিনজনই শিল্পী মানুষ। সমাজে সম্মানিত। তবুও ফেসবুকের মতো খোলা জায়গায় তারা একে অন্যের প্রতি যেভাবে কাদা ছোড়াছুড়ি করেছেন, এখনো করছেন তাতে সাধারণের কাছে তারা হাসির পাত্রে পরিণত হচ্ছেন। নিজের সহকর্মীর প্রতি নিম্নতম সম্মানটুকু যদি কেউ জানাতে না পারেন, তাহলে তার পরিণতি ভালো হওয়ার কথা নয়। এ বড় সহজ সমীকরণ। আজ আসিফ আকবরকে চোর বলা হচ্ছে, মামলা-হামলায় জেল খাটানো হচ্ছে। সামনের দিনে যে তার প্রতিপক্ষের অবস্থা এর চেয়েও খারাপ হবে না, তা কে বলতে পারে? অন্যদিকে, আসিফ আকবরের মতো তুমুল জনপ্রিয় একজন শিল্পীর খোলা ফেসবুকে কথা বলার সময় অবশ্যই আরো হিসাব-নিকাশ করেই বলা উচিত। কেউ তাকে নিয়ে বাজে প্রচারণা চালালেই তাকে ‘প্রতিহত’ করার মতো রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়াটাও মানায় না। যদিও আসিফ আকবরের একটা রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে। তিনি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পৃক্ত। এই গ্রেফতারের পেছনে এটাও একটা কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। সে যেভাবেই দেখা হোক, আসিফ আকবরের মতো একজন সিনিয়র শিল্পীর সহকর্মীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে কথা বলা উচিত। কেউ তাকে সম্মান করল না বলেই তাকে একই কাজ করতে হবে, এমনটা আশা করা যায় না। আসিফ আকবর হয়তো শিগগিরই জেলহাজত থেকে বেরুবেন। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে তার বেরুনোর দরকারও। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা যে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল, তার দাগ তো থেকে যাবে। এই দাগ মুছতে কি নতুন কোনো পরিস্থিতি দেখতে হবে?
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১