আপডেট : ২৮ May ২০১৮
সাবেক মার্কিন নভোচারী ও চিত্রশিল্পী অ্যালান বেন মারা গেছেনে। টেক্সাসের স্থানীয় সময় গতকাল রোববার চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে চাঁদে পা রাখা এই মহাকাশচারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। বিবিসির খবর অনুসারে মারা যাওয়ার সময় অ্যালান বেনের বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। বেনের পরিবারের বরাতে খবরে বলা হয়েছে, দুই সপ্তাহ আগে ইন্ডিয়ানায় অসুস্থ হয়ে পড়ার পর হিউস্টনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তবে অবস্থার উন্নতি না হয়ে রোববার সেই হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। খবরে বলা হয়েছে, মহাশূন্যে ভ্রমণের অনুপ্রেরণায় শেষ জীবনে দক্ষ চিত্রশিল্পী হয়ে উঠেছিলেন বেন। সংগ্রাহকদের কাছে তার আঁকা চিত্রকর্মের কদর ছিল। এদিকে অ্যাপোলো-১২ তে করে চাঁদে পাড়ি জমানো এ মহাকাশচারীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। নাসার নভোচারী মাইক মাসিমিনোও বেনের মৃতুতে শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমার দেখা সবচেয়ে অসাধারণ মানুষ। প্রকৌশল দক্ষতা ও চিত্রকর হিসেবে শিল্পে অসামান্য অর্জন, এই দুইয়ের অনবদ্য সংমিশ্রণ ছিলেন তিনি। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন নৌবাহিনীর টেস্ট পাইলট স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী বেনকে ১৯৬৩ সালে শিক্ষা নবিস হিসেবে বেছে নিয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তারপর থেকে দুবার মহাশূন্যে গিয়েছিলেন বেন। এর মধ্যে ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে চাঁদে পদার্পণ করা অ্যাপোলো-১২ মহাকাশ মিশনের লুনার মডিউল পাইলট ছিলেন বেন। আর ১৯৭৩ সালে তিনি মহাশূন্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম স্পেস স্টেশন স্কাইল্যাবে উড়ে যাওয়া ক্রুবোঝাই দ্বিতীয় ফ্লাইটের কমান্ডার ছিলেন। এরপর ১৯৮১ সালে নাসা থেকে অবসর নেওয়ার পর চিত্রকর হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন বেন। তার আগে চাঁদে মাত্র তিন নভোচারী পা দিয়েছিলেন। অ্যাপোলো ১১ মিশনের নভোচারী অলড্রিন ও নিল আর্মস্ট্রং ১৯৬৯ সালের জুলাইয়ে প্রথম চাঁদে পা রাখেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৪ নভোচারী চাঁদের পথে উড়াল দিয়েছিলেন। আর যাদের মধ্যে ১২ জনেরই পা পড়েছিল চন্দ্রপৃষ্ঠে। অ্যালান বেনের মৃত্যুর পর চাঁদে পা রাখা ১২ জন মানুষের মধ্যে আর বেঁচে রইলেন ছয়জন। চাঁদে গিয়েছেন যারা (ক্রমানুসারে) ১. নিল আর্মস্ট্রং : চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন নিল আর্মস্ট্রং। নিল আর্মস্টং ১৯৩০ সালের ৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। যুক্তরাস্ট্রের ওহাইওর স্টেফান কনিগ আর্মস্ট্র ও ভায়োলা লুইসা দম্পতির প্রথম সন্তান নিল আর্মস্ট্রং। আর্মস্টং পড়াশোনা করেন পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায়। ২.বাজ অলড্রিন : ড. এডউইন ইউগিন বাজ অলড্রিন, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী মার্কিন বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, পাইলট ও নভোচারী। ৩৯ বছর বয়সে তিনি অ্যাপোলো ১১ চন্দ্র অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। নিউ জার্সির মন্টক্লেয়ার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করেন ১৯৪৬ সালে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন শেষে ১৯৬৩ সালে তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে নভোবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন্ডপ্রাপ্ত হন। ৩. চার্লস পিট কনরেড : চার্লস পিট কনরেড চাঁদে পা রাখা সৌভাগ্যবান মানুষের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি। অ্যাপোলো-১২ মিশনের অভিভাবক এ মানুষটি খুব সাধারণ জীবনাচারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। অ্যাপোলো-১২ ছাড়াও বহুল আলোচিত স্কাইল্যাব ২ মিশনেও তিনি অধিনায়কত্ব করেন। তার প্রশংসায় এখনো পঞ্চমুখ নভোচারীরা। স্পেসে তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা নভোচারীদের জন্য আগামী দিনের অনেক গুরুত্ব বহন করে। ৪. অ্যালেন বেন : একজন চিত্রশিল্পী যিনি চাঁদে হাঁটার গৌরবে গৌরবান্বিত। ৫. এডগার মিচেল : অ্যাপোলো-১৪ তে চড়ে মিচেল চাঁদে নামেন। ১৯৭১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো চাঁদের বুকে পা রাখেন মিচেল। জীবনের একপর্যায়ে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে বেশ হতাশ হয়ে পড়েন মিচেল। আর নিজের এই হতাশার কথা প্রকাশ্যেও বলতেন তিনি। সেই সময় ভিনগ্রহের আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্টস বা ইউএফও পৃথিবীতে এসেছে বলেও বিশ্বাস করতেন এই নভোচারী। ৬. ডেভিড স্কচ : ডেভিড স্কচ চাঁদে পাড়ি জমান অ্যাটেপালে ১৪ চড়ে ১৯৭১ সালে। ৭. জ্যামস ইরোয়িন : অ্যাপোলে-১৫-এর যাত্রী জ্যামস ইরোয়িন চাঁদে পা রাখেন ২৯৫ ঘণ্টা ১১ মিনিটের এক চন্দ্রযাত্রায়। ৮. জন ইয়ং : চাঁদের বুকে তিনি ১৬ মাইল চন্দ্রযান লুনার রোভার চালিয়েছেন। ৯. চার্লস ডিউক : চার্লস ডিউক মুরব্বির সঙ্গে চাঁদের উঁচু স্থানগুলো শনাক্তকরণ কাজে অংশ নেন। ১০. ইয়ুজিন কারমান : এখন পর্যন্ত সর্বশেষ ব্যক্তি হচ্ছেন ইয়ুজিন কারমান যিনি চাঁদের বুকে সবার শেষে হেঁটে ছিলেন ১৯৭২ সালে। এ ছাড়া অ্যাপোলো ১৩-এর অভিযানের সময় অ্যালেন শেফার্ড নামের এক নভোচারীর চাঁদে যাওয়ার কথা থাকলেও কার ইনফেকশনের কারণে আনফিট হয়ে যান। আর হেরিসন স্কমিট নামের আরেকজন অ্যাপোলো-১৭ অভিযানের লুনার মডিউলের পাইলট ছিলেন। তাদেরও চন্দ্রজয়ী হিসেবেই স্বীকার করা হয়।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১