আপডেট : ১১ May ২০১৮
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মহাকাশের পথে ডানা মেলেছে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। আর এর মধ্য দিয়ে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অভিজাত দেশের ক্লাবে ৫৭তম সদস্য হলো বাংলাদেশ। কিন্তু কী হবে এই স্যাটেলাইট দিয়ে? কেনই বা এত টাকা খরচ করে এই স্যাটেলাইট উড়ানো হচ্ছে? সে কি কেবলই দেশের সম্মান বাড়ানোর জন্য? নাকি এর ফলে সত্যিকার অর্থেই কিছু সুফল পাবে বাংলাদেশ- সেই প্রশ্নও আছে লাখো মনে। তবে সত্যি বলতে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিকানার গর্বের পাশাপাশি এর মাধ্যমে দেশের সামনে অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ভাষ্যমতে, এই স্যাটেলাইট থেকে দেশ তথা দেশের মানুষ মোটাদাগে তিন ধরনের সুফল পাবে। প্রথমত, বঙ্গবন্ধু-১-এর সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয় দুটিই করা যাবে। দ্বিতীয়ত, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা যাবে। তৃতীয়ত, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে এই স্যাটেলাইট। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও ব্যবহার করা যাবে এ স্যাটেলাইটি। বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয় দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর স্যাটেলাইট সেবা নিশ্চিত করাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রধান কাজ। বর্তমানে আমাদের দেশে টেলিফোন, রেডিও এবং টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতিবছর গুনতে হয় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যায়, যার পুরোটাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সাশ্রয় হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। দেশের ব্যবহারের জন্য ২০টি রেখে বাকিগুলো অন্যান্য দেশের কাছে ভাড়া দেওয়া হবে। অব্যবহূত এই অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে বছরে প্রাথমিকভাবে আয় হবে ৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪১ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে এ আয় বেড়ে হতে পারে ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই হিসাবে ১৫ বছরে আয় হবে ১ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এই স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার বিক্রির জন্য সরকারের গঠন করা বঙ্গবন্ধু কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি (বিসিএসবি) লিমিটেড কাজ শুরু করেছে। এছাড়া এর সাহায্যে চালু করা যাবে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিসও। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট দেশের ৭৫০ ইউনিয়নে এখন ফাইবার অপটিক ইন্টারনেটের সংযোগ নেই। ইন্টারনেটবঞ্চিত এমন এলাকার মধ্যে রয়েছে পার্বত্য ও হাওর অঞ্চল। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে এজন্য এই খাতে সরকারের বিশেষ প্রণোদনা দরকার হবে। কেননা স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইডথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে যে ইন্টারনেট পাওয়া যাবে, তা বেশ ব্যয়বহুল। ফাইবার অপটিক দিয়ে সরবরাহ করা ব্যান্ডউইডথের তুলনায় স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের খরচ প্রায় ১০০ গুণ বেশি। সরকার সেটা করলে সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের মানুষ অনলাইন ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা ঝড় বা বড় ধরনের দুর্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতেও কার্যকর হবে বঙ্গবন্ধু-১। এ ধরনের বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক সময় অচল হয়ে পড়ে। তখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে। পাওয়া যাবে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতাও। উল্লিখিত সুবিধাগুলো ছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও ব্যবহার করা যাবে এ স্যাটেলাইটটি। পারমাণবিক বিস্ফোরণ এবং আসন্ন হামলা ছাড়াও স্থল সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে দেশের সামনে মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণারও অসীম সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল। তবে এসব সম্ভাবনাকে ছাড়িয়ে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, সেটি হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে বাংলাদেশের উপস্থিতি জানান দেবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১