বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৩ April ২০১৮

কমছে প্রতিষ্ঠান ও কর্মসংস্থান

তৃতীয় তাঁত শুমারির কাজ চলছে


বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে তাঁত শিল্পের নাম। বিলুপ্ত মসলিন, ঢাকাই জামদানিসহ উন্নতমানের বিভিন্ন কাপড় তৈরি হয়েছে তাঁত শিল্পের হাত ধরে। সময়ের ব্যবধানে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে দেশের পোশাক শিল্প। হস্তচালিত তাঁত কলের বিপরীতে বসেছে বিদ্যুতচালিত পাওয়ার লুম। স্থাপন করা হয়েছে প্রাথমিক বস্ত্র খাতের অত্যাধুনিক কারখানা। সময়ের ব্যবধানে অনেকটাই গুরুত্ব কমে আসছে তাঁত শিল্পের। এর পরও দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদার ৪০ শতাংশ জোগান দিয়ে আসছে তাঁত শিল্প। ২০০৩ সালের শুমারি অনুযায়ী দেশে মোট ৫ লাখ ৫ হাজার ৫৬৫ তাঁতে ৮ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন। এ অবস্থায় খাতটির হালনাগাদ তথ্য তুলে আনতে তাঁত শুমারি পরিচালনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, তাঁত শুমারি প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় তাঁত শুমারির কার্যক্রম শেষ হবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এতে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী এ প্রকল্পে ১২ লাখ টাকা ব্যয় করে ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি জরিপের জোনাল অপারেশনের মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণের পর পরই মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হবে বলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তাঁত শুমারি প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, ১৯৯০ সালে প্রথম তাঁত শুমারি পরিচালনা করে বিবিএস। ২০০৩ সালে পরিচালিত হয় দ্বিতীয় তাঁত শুমারি। এ ভূখণ্ডে তাঁত শিল্পের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষির পর তাঁত শিল্পের অবদান উল্লেখযোগ্য। বিষয়টি বিবেচনায় দেশব্যাপী তৃতীয় তাঁত শুমারি পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী বলেন, হস্তচালিত তাঁত শিল্প বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প। তাঁত শিল্পে প্রায় ১৫ লাখ লোক নিয়োজিত আছেন। কর্মসংস্থানের দিক থেকে কৃষি ও গার্মেন্ট শিল্পের পরই তৃতীয় অবস্থানে আছে এ খাত। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহৎ খাত তাঁত শিল্প।

তিনি আরো জানান, প্রতিবছর তাঁত শিল্পে ৬৮ কোটি ৭৯ লাখ মিটার কাপড় উৎপাদন হয়। অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদার ৪০ শতাংশ আসছে তাঁত শিল্প থেকে। জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতে ১ হাজার ২২৭ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হচ্ছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৩ সালের শুমারির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা যায়, ওই সময় দেশে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২টি তাঁত ছিল। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান আছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ১১৫ জনের। এদের মধ্যে নারী শ্রমিক রয়েছেন ৪ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৮ জন।

১৯৯০ সালের জরিপের প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করে জানা যায়, দেশে তাঁতের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। ১৯৯০ সালে দেশে মোট ২ লাখ ১২ হাজার ৪২১টি তাঁত ছিল। এ হিসাবে দুই শুমারির মধ্যবর্তী সময়ে তাঁতের সংখ্যা কমেছে প্রায় ২৯ হাজার।

সূত্র জানায়, দেশের তাঁত শিল্পের উন্নয়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। চলমান শুমারির কাজ শেষ হলে এর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁত শিল্পের উন্নয়নে নতুন কর্মসূচি নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১০ বছর অন্তর বিভিন্ন তথ্য হালনাগাদ করার বিধান থাকলেও ২০০৩ সালের পর কোনো তাঁত শুমারি হয়নি। ইতোমধ্যে তাঁত ও তাঁতিদের পরিসংখ্যানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাঁত খাতে হালনাগাদ পরিসংখ্যান না থাকায় বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়ায় বিঘ্ন ঘটছে।

দেশে বিদ্যমান তাঁত সংখ্যা, তাঁত শিল্পে নিয়োজিত লোকসংখ্যাভিত্তিক মোট তাঁত পণ্য উৎপাদন, কাউন্টভিত্তিক সুতার চাহিদা, তাঁতিদের বিদ্যমান সমস্যা, মূলধন, বিপণন ব্যবস্থা, তাঁত শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, সর্বোপরি জাতীয় অর্থনীতিতে এ শিল্পের সামগ্রিক উন্নতির লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ ও দেশের তাঁত খাত সম্পর্কিত একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ তথ্যভান্ডার সৃষ্টির লক্ষ্যে জরিপটি পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১