বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৫ April ২০১৮

পুণ্যাহ হারিয়ে এসেছিল হালখাতা


ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসাব-নিকাশকে আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়াকে মূলত হালখাতা বলা হয়। সাধারণত বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনই হালখাতা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যবসায়ীরা তাদের দেনা-পাওনা চুকিয়ে এদিন হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। পাওনা টাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই ক্রেতাদের হালখাতায় নিমন্ত্রণ করেন ব্যবসায়ীরা। হালখাতায় অংশ নেওয়াদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। আসল হিসাবটি দেনা-পাওনার হলেও আসলে এর মাধ্যমে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীর মধ্যে সুসম্পর্কও তৈরি হয়। ব্যবসায়িক বন্ধনটি হয় আরো মজবুত। নতুন লাল খাতায় শুরু হয় নতুন বছরের হিসাব গণনা। এ দিনটি ব্যবসায়ীদের কাছে আনন্দের দিনও বটে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, হালখাতার পূর্ববর্তী সংস্করণটি আসলে পুণ্যাহ। কালক্রমে পুণ্যাহ প্রথার বিলুপ্তি হলেও এর উৎসবমুখর অবস্থাটি দখল করে নেয় হালখাতা।

অতীতে জমিদারকে খাজনা প্রদানের অনুষ্ঠান হিসেবে পুণ্যাহ প্রচলিত ছিল। জমিদার প্রথার বিলুপ্তি ঘটলেও এর রেশটা ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় হালখাতার আয়োজন করে থাকে ঠিক আগের রীতিকে স্মরণ করে। সম্রাট আকবরের রাজত্বকাল থেকেই ‘হালখাতা’ পহেলা বৈশাখের আচার অলঙ্কার হিসেবে বিবেচিত। হালখাতার পাশাপাশি জমিদারকে খাজনা প্রদানের অনুষ্ঠান হিসেবে ‘পুণ্যাহ’ প্রচলিত ছিল। নববর্ষের প্রথম দিন প্রজাকুল সাধ্যমতো ধোপদুরস্ত পোশাকে সজ্জিত হয়ে জমিদারবাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করে মিষ্টিতে আপ্যায়িত হতো। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ায় ‘পুণ্যাহ’ এখন বিলুপ্ত হয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতিতে ব্যবসায়ীরা ‘হালখাতা’র সমৃদ্ধ ইতিহাস ছোট আকারে হলেও আজো পালন করে চলেছেন। মফস্বল এলাকাগুলোতে এখনো হালখাতার প্রচলন রয়েছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হালখাতা নিয়ে আগের আড়ম্বর না থাকলেও বেশকিছু বনেদি ও পুরনো ব্যবসায়ীসহ ছোট ছোট বেশকিছু দোকানি হালখাতার আয়োজন করছেন। তবে, তাদের সবাই এটি পহেলা বৈশাখেই আয়োজন করবেন এমনটি নয়। পুরান ঢাকায় দেখা যায়, হালখাতার দিনে লাল মলাটের খাতা খুলে বসেন ছোট ছোট দোকানিরা। নতুন বছরের শুরুতেই ব্যবসায়ীরা টাকা পরিশোধের তাগিদ না দিয়ে হালখাতার দাওয়াত দিয়ে থাকেন। রঙ-বেরঙের বাহারি কার্ডেরও ব্যবস্থা করা হয়। তবে, কার্ড দেওয়া-নেওয়াটা তাদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে না। বিষয়টা সম্পর্কের। হোক ব্যবসায়িক কিংবা আত্মিক। হালখাতার দাওয়াত খেতে কিন্তু দাওয়াতেরও প্রয়োজন পড়ে না কারো কারো।

দোকানের অবয়বে আনা হয় নতুনত্ব। পুরনো ময়লা-আবর্জনা ধুয়ে-মুছে নতুন করে দোকানটিকে সাজানোর মধ্যেও থাকে এক আনন্দ। এ আনন্দকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পহেলা বৈশাখের দিনই হালখাতার উৎসব পালন করা হয়। তবে, অনেকে বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিকেও ভালো ও সুবিধামতো দিনক্ষণ দেখে তা পালন করা হয়। অনেকেই আবার তাড়াহুড়োর কারণে বছর শুরুর আগেই কাজটি সেরে ফেলেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১