আপডেট : ০৭ April ২০১৮
শিরোনাম পড়ে চমকে গেলেন! লাইকা নামে কুকুরটির কথা মনে আছে? পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠানো প্রথম কোনো প্রাণী ছিল লাইকা। ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো নভোযান স্পুটনিক-২ এ আরোহী হয়ে মহাকাশ ভ্রমণ করেছিল মাদী কুকুরটি। এরপর প্রথম সফল মানব মহাকাশযাত্রা হয় ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিলে। ২৭ বছর বয়স্ক রাশিয়ান মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন মহাকাশ ভ্রমণ করেন। তারপর অনেক প্রাণীকেই মহাকাশে পাঠানো হয়েছে গবেষণার খাতিরে। আগে পাঠানো প্রায় সব প্রাণীই ছিল মেরুদণ্ডী বা কর্ডাটা পর্বের। কিন্তু এবার মহাকাশে যাচ্ছে নেমাটোড (Nematode) পর্বের প্রাণী, অর্থাৎ কৃমি! যদিও ২০০৩ সালে বিধ্বস্ত নভোযান কলাম্বিয়াতে করেও এই পর্বের কিছু প্রাণী মহাকাশে নেওয়া হয়েছিল। তবে সেগুলো থেকে গবেষণায় কাজে লাগানোর মতো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিবিসির এক খবরে জানানো হয়েছে, মহাকাশে অবস্থানকালে নভোচারীদের পেশিক্ষয় নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবেই অসংখ্য কৃমির কীট মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে। গবেষকদের আশা, তাদের নতুন এই গবেষণা বয়োজ্যেষ্ঠদের যথোপযুক্ত পুষ্টির অভাবে পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ থেকে মুক্তির উপায় বাতলে দিতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন, মহাশূন্যে অবস্থানকালে বেশ দ্রুতই পেশি হারান নভোচারীরা। কোনো নভোচারী যদি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১৮০ দিন অবস্থান করেন তবে তিনি গড়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পেশিক্ষয়ের শিকার হন। যুক্তরাজ্যের ডেভন কাউন্টির এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, নেমাটোড বা কৃমির পেশি কাঠামো আর মানুষের পেশি কাঠামোর সাদৃশ্য থাকায় গবেষণার গিনিপিগ হিসেবে কৃমি ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃমিজাতীয় প্রাণীদের সাধারণ পর্বের নাম নেমাটোড। মুক্তজীবী বা পরজীবী এই প্রাণীটি অধিকাংশ স্বাদু ও লোনা পানিতে এবং মাটিতে বাস করে। তবে এদের অনেকে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহে পরজীবী হিসেবে বাঁচে। এই নেমাটোড পর্বের একটি প্রজাতি ক্যানোহ্যাবডাইটিস এলিগেনস (Caenorhabditis elegans)। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর ২৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশে পাড়ি জমাতে যাচ্ছে কৃমি কীটেরা। দীর্ঘ ১ হাজার ২০০ মাইল পথ অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাবে তারা। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কলিন ডিন বলেন, সাধারণত অভিকর্ষের কারণেই মহাকাশচারীরা পেশিক্ষয়ের শিকার হন। এরপর তারা পৃথিবীতে ফিরে এসে তারা দীর্ঘদিন পর্যন্ত নড়াচড়াই করতে পারেন না। পরে তাদের দীর্ঘ সময়ের একটা পুনর্বাসন দরকার হয়। কিন্তু তাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি দরকার। আমরা সেই উপায়টিই খুঁজছি। কলিন ডিন জানান, নেমাটোড পর্বের প্রাণীদের পেশি কাঠামো মানুষের পেশি নিয়ে কাজ করার জন্য সবচেয়ে ভালো মডেল। তিনি বলেন, এই কারণেই আমরা মহাকাশে কৃমি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভ্রমণকাল ও মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানকালে তাদের পেশির কী কী পরিবর্তন হয় সেটা পর্যবেক্ষণ করব। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ক্যানোহ্যাবডাইটিস এলিগেনস প্রজাতির কৃমিরা এতই ক্ষুদ্র যে তাদের খালি চোখে দেখার সুযোগ নেই। আর এ কারণেই তাদের তরল পদার্থ ভর্তি একটি ছোট ব্যাগে ভরে পাঠানো হচ্ছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ব্যাগের মধ্যে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে যেন সেখানে কৃমিরা এক সপ্তাহ খেয়েদেয়ে দিব্যি প্রজননও করতে পারে। মহাকাশে পাঠানোর পরে তাদের যখন পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে তখন হিমাঙ্কের নিচে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে জমিয়ে ফেলা হবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১