বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৫ March ২০১৮

টানা পতনের পর বড় উত্থান


চলতি সপ্তাহে টানা দরপতনের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। বৃহস্পতিবার অধিকাংশ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ৮৫ পয়েন্ট। লেনদেন পরিস্থিতিরও সামান্য উন্নতি লক্ষ করা গেছে। গত কয়েক দিনের টানা পতন ও বৃহস্পতিবারের ঊর্ধ্বগতিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক খাত। এদিন ব্যাংক খাতের শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে মূল্যসূচকের উল্লম্ফন হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চলতি সপ্তাহের প্রথম তিন কার্যদিবসে টানা দরপতনে ডিএসইর মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২০৪ পয়েন্ট হারায়। অধিকাংশ শেয়ারের দর নেমে আসে তলানিতে। এরপর গত ১৪ মার্চ উত্থান-পতন চললেও শেষ পর্যন্ত সূচকে সামান্য বাড়তি পয়েন্ট যোগ করে দিনের লেনদেন শেষ হয়। আর বৃহস্পতিবার শুরু থেকেই সূচকে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়, যা দিন শেষে বড় উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন সম্পন্ন হয়।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার তিনটি ছাড়া অবশিষ্ট সবগুলো খাতের বাজার মূলধন বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ব্যাংক খাতের শেয়ারদর। চলতি বছরের শুরু থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাত প্রায় ২০ শতাংশ দর হারিয়েছে। এর ফলে ব্যাংক খাতের বেশিরভাগ শেয়ার বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সুযোগটিই কৌশলী বিনিয়োগকারীরা বৃহস্পতিবার নিয়েছেন।

ডিসেম্বর হিসাব বছর শেষ হওয়ায় ব্যাংক কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে।  ইতোমধ্যে একটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণাও করেছে। এমন পরিস্থিতিতে টানা দরপতনে ব্যাংক খাতের শেয়ারদর বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকায় সুযোগ নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বৃহস্পতিবার চাহিদা বাড়ায় শেয়ারদরও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার এ খাতের শেয়ারদর গড়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে, যা সূচকের উল্লম্ফনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এদিন পুরো ব্যাংক খাতের বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বাজার মূলধনে দ্বিতীয় ও লেনদেনযোগ্য শেয়ার বেশি থাকায় সূচকের উত্থান-পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে এ খাতটি।

বৃহস্পতিবার দরবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাত। এ খাতটির দর বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি বছর দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল এ খাতটি। ১৪ মার্চ পর্যন্ত এ খাতটি সাড়ে ১৭ শতাংশ দর হারায়। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি, সাধারণ বীমা, প্রকৌশল, বস্ত্র ও সিরামিক খাতের শেয়ারদর গড়ে এক শতাংশের বেশি বেড়েছে। বিপরীতে বিবিধ খাতের দর সামান্য কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি বছর টানা দরপতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পদ্ধতি অনুযায়ী বাজার মূল্যে সিকিউরিটিজের গণনা করায় ব্যাংক ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সক্ষমতা কিছুটা বেড়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে শেয়ারের ক্রয়াদেশ বেড়েছে। এতে চাহিদা বাড়ায় অধিকাংশ শেয়ারের দর বেড়েছে। এতে সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮৫ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫৭২০ দশমিক ৬০ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) নির্বাচিত খাতসমূহের সূচক বেড়েছে ১৪০ পয়েন্ট।

সূচক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেনও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ৩৩৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট, যা আগের দিনের চেয়ে ১১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেশি। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার লেনদেনে শীর্ষ ১০ ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্রি-চাপ বাড়তে দেখা গেছে। আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি ৩৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে, যার মধ্যে ৬১ শতাংশ ছিল বিক্রি। অগ্রণী সিকিউরিটিজ যে পরিমাণ লেনদেন করেছে, তার প্রায় ৮৮ শতাংশ এসেছে শেয়ার বিক্রি থেকে। শাকিল রিজভী স্টকের যে লেনদেন হয়েছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশই এসেছে শেয়ার বিক্রি থেকে। এছাড়া সিটি ব্রোকারেজ ও জিকিউ সিকিউরিটিজ থেকেও বিক্রি-চাপ ছিল। বিপরীতে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ ও ইবিএল সিকিউরিটিজ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শেয়ার ক্রয় করেছে।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৩৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৭৫টির, কমেছে ৪৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬৪টির, কমেছে ৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে প্রধান ১০ কোম্পানি হলো- ব্র্যাক ব্যাংক, ইফাদ অটোস, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, মুন্নু সিরামিক্স, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, সিটি ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, ঢাকা ব্যাংক ও নাহি অ্যালুমিনিয়াম।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ প্রধান ১০ কোম্পানি হলো- ইসলামিক ফাইন্যান্স, সিএপিএম বিডিবিএল মি. ফা., সিএপিএম আইবিবিএল মি. ফা, এসইএমএল আইবিবিএল মি. ফা., মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, আইসিবি এমপ্লয়ী মি. ফা. ১ স্কিম ১, ইন্টা. লিজিং, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ও ফার্স্ট প্রাইম ফাইন্যান্স মি. ফা.।
দর কমার শীর্ষ প্রধান ১০ কোম্পানি হলো- ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফনিক্স ইন্স্যুরেন্স, এনসিসিবি মি. ফা. ১, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, বার্জার পেইন্ট, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও রেকিট বেনকিজার।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১