বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আরেকটি স্বপ্নযাত্রার নাম। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জায়গাজুড়ে এই হাইটেক সিটি অবস্থিত।
রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনযোগেও হাইটেক সিটিতে যাওয়া যাবে। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে হাইটেক সিটি রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টারও কম সময় লাগে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি উত্তম স্থান।
সম্প্রতি ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি’ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিনিয়োগকারী, ডেভেলপার ও গণমাধ্যমকর্মীরা তার সফর সঙ্গি ছিলেন।
এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানান, ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি’ বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রথম প্রকল্প। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের সব কাজ শেষ করেছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে ২টি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৪০ একর জমি প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সরাসরি বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে প্রথম পর্যায়ে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ৯টি কোম্পানিকে ২০.০৫ একর ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০ ডিসেম্বর আরো ৯টি কোম্পানিকে ২৮ একর প্লট বরাদ্দ প্রদান করেছে। এর মাধ্যমে আগামী ৪০ বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে রবি আজিয়াটা, জেনেক্স, বিজেআইটি সফটওয়্যার, ফেয়ার ইলেকট্রনিকস, কেডিএস গ্রুপ, ইন্টারক্লাউড, বিজনেস অটোমেশন, নাজডাক টেকনোলজিস এবং জেআর এন্টারপ্রাইজ বিনিয়োগের সুযোগ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে এখন কাজ করছে। প্রায় ১৪০.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ ও ২৫,০০০ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ করছে কোম্পানিগুলো।
এ হাইটেক সিটিতে যেসব কোম্পানি বিনিয়োগের সুযোগ পেয়েছে এগুলো হলো ডাটা সফট, আমরা হোল্ডিংস, ভেড নেট লিমিটেড, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেড, মিডিয়া সফট ডাটা সিস্টেম লিমিটেড, ইউ ওয়াই সিস্টেম লিমিটেড, এসবি টেল এন্টারপ্রাইজ এবং ইউনিকম বাংলাদেশ অ্যান্ড সিস্টেক ডিজিটাল লিমিটেড।
আবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভ ফর জবস’ শীর্ষক প্রকল্প এখানে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কাজ শুরু করেছে। এ কোম্পানিগুলো ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ ও ২০,০০০ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ করছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চীনের সহযোগিতায় প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই হাইটেক পার্ক গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টায়ার ফোর ডাটা সেন্টার। ডাটা সেন্টারের ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখানে তৈরি হচ্ছে ২ লাখ বর্গফুটের আন্তর্জাতিক মানের ভবন। বর্তমানে ডাটা সেন্টারটির টেস্ট অপারেশন চলছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী এপ্রিলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ঘোষণার পর সরকারি-বেসরকারি খাতের তথ্য সংরক্ষণের জন্য বড় পরিসরের ডাটা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যার সূত্র ধরেই এ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর।
এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫৯৯৫৫.৬৭ লাখ টাকা, এর মধ্যে জিওবি ৪০০১৯.৬৭ লাখ টাকা, চীনের প্রকল্প সাহায্য ছিল ১১ ৯৯ ৩৬ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির ৭ একর জায়গা এ প্রকল্পের জন্য স্থান বরাদ্দ করা হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং যৌথভাবে ডাটা সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ই-সেবার মাধ্যমে উন্নত জনসেবা প্রদান করা যাবে। আধুনিক ডিজিটাল কার্যক্রম, সেবা প্রদান ও ই-বিজনেসের মূল ভিত্তি হবে এই ডাটা সেন্টার। এর মাধ্যমে বছরে আনুমানিক ১৬৮০ কোটির টাকারও বেশি রিটার্ন আসবে বলে ধারণা হয়।
জানা গেছে, শিগগিরই এখান থেকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও বিভিন্ন হার্ডওয়্যার পণ্য উৎপাদিত হবে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি থেকে আইটি পণ্য রফতানি শুরু হয়ে গেছে।