‘হিন্দু আছে লাখে লাখে নাইরে মুসলমান, সিলেট মোকামে এসে কে দিল আজান’

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

‘হিন্দু আছে লাখে লাখে নাইরে মুসলমান, সিলেট মোকামে এসে কে দিল আজান’

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৮ মে, ২০১৮

হজরত শাহজালাল (র.) বাংলাদেশে এসেছিলেন ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে।  সেই ইরান-তুরান-দিল্লি ঘুরে তারপর তিনি সিলেট পৌঁছেছিলেন। সিলেটে আগে থেকেই কিছু মুসলমানের বসবাস ছিল। কিন্তু স্থানীয় হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দের অত্যাচারে তারা খুব অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। ছেলের জন্মোৎসবে গরু জবাই করার কারণে স্থানীয় মুসলমান বুরহান উদ্দীনের ছেলেকে হত্যা করে গৌড় গোবিন্দ। তখন তিনি সিলেট ছেড়ে দিল্লি চলে যান। সেখানে হজরত শাহজালাল (র.)-এর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বুরহান উদ্দীন তার নিজের এবং বাংলার মুসলিমদের দুর্দশার কথা বলেন হজরত শাহজালালকে (র.)। অন্যদিকে, প্রাচ্যে বা ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচার করার জন্যই সুদূর ইয়েমেন থেকে এসেছিলেন হজরত শাহজালাল (র.)। বুরহান উদ্দীনের কথা শুনে তিনি ২৪০ সঙ্গীকে নিয়ে শ্রীহট্টের দিকে রওনা দেন। পথে তার অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬০ জনে। এই ৩৬০ অলি-আউলিয়া নিয়ে তিনি সুরমা নদী পার হন অলৌকিক উপায়ে। তারপর তিনি রাজা গৌড় গোবিন্দকে পরাজিত এবং ধর্মপ্রচার শুরু করেন। তার উদারতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবতাবোধে মুগ্ধ হয়ে নিম্নবর্গের হিন্দুরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। একসময় তিনি তার সহচরদেরও চারদিকে ছড়িয়ে দেন। তার সঙ্গীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে ধর্ম প্রচার করতে থাকে। এভাবেই হজরত শাহজালাল (র.) ও তার অনুসারীদের হাত ধরে বাংলাদেশের আনাচেকানাচে, শহরবন্দরে ইসলাম ধর্ম ও সূফীবাদ ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

হজরত শাহজালাল (র.) জন্মেছিলেন ১২৭১ খ্রিস্টাব্দে রোম সালতানাতের কোনিয়ায় (বর্তমান তুরস্কে)। এই কোনিয়ারই অধিবাসী ছিলেন বিখ্যাত সূফীসাধক মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি। ধারণা করা অত্যুক্তি হবে না যে, হজরত শাহজালাল (র.)-এর নাম হয়তো রাখা হয়েছে জালালউদ্দিন রুমির সঙ্গে মিলিয়েই। কারণ হজরত শাহজালাল (র.)-এর মামা সৈয়দ আহমদ কবীর, যার কাছে তিনি লালিতপালিত হয়েছেন, তিনি তাকে ছোটবেলা থেকে সূফীসাধকই বানাতে চেয়েছিলেন। মাত্র তিন মাস বয়সেই হজরত শাহজালাল (র.)-এর মা মারা যান। পৈতৃকভাবে তারা ছিলেন হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর (কোরাইশ) বংশধর। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলায় এসে হজরত শাহজালাল (র.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং তার সঙ্গে তিন দিন ছিলেন। ইবনে বতুতা তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, তিনি অতিবৃদ্ধ এবং অতি দয়াশীল একজন মানুষ। তার পুরো নাম শায়খ জালালউদ্দীন।

মৃত্যুর পর হজরত শাহজালাল (র.)-কে সিলেটেই সমাহিত করা হয়। এখানেই তার মাজার। যে মাজার আজো হাজারো মুসলমানের জিয়ারতের স্থান। দিল্লিতে হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল হজরত শাহজালাল (র.)-এর। নিজামউদ্দিন আউলিয়া তাকে সুরমা রঙের দুটি কবুতর উপহার দিয়েছিলেন। এখনো সেই কবুতরগুলো মাজারে উড়তে দেখা যায়। জালালী কবুতর নামেই এগুলো এখন পরিচিত। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তার নামে, সিলেটের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তার নামে। এ ছাড়া আরো অসংখ্য সড়ক, ইমারত ও দর্শনীয় স্থান এ পুণ্যবান মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনার্থে রাখা হয়েছে। তিনি শুধু বাংলাদেশের নন, সারা উপমহাদেশেরই একজন প্রখ্যাত সূফী-দরবেশ এবং অলিদের শিরোমণি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads