‘দুই পয়সা নিয়ে হামলা আমি চার পয়সা দেব’

ছবি : সংগৃহীত

রাজনীতি

ড. কামালের গাড়িবহরে হামলা

‘দুই পয়সা নিয়ে হামলা আমি চার পয়সা দেব’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় গতকাল শুক্রবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ড. কামাল হোসেন জোটের অস্থায়ী কার্যালয়ে গতকাল বিকাল ৩টায় সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ‘ভাড়াটিয়ারা’ হামলা করেছে। তার অভিযোগ, দুই পয়সা নিয়ে হামলাকারীরা এগুলো করেছে। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের চার পয়সা দেব, তোমরা ওখান থেকে সরে যাও।’

মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফেরার পথে নিজের গাড়িবহরে হামলার এ ঘটনা নিয়ে চিন্তা করছেন না বলে মন্তব্য করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক। তবে তিনি বলেন, এই হামলায় শহীদদের প্রতি অবমাননা হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। হামলায় জোটের অন্যতম নেতা জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিকের গাড়িসহ ৬-৭টি যানবাহন ভাঙচুরের শিকার হয়। এতে ঢাকা-১৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক সাজু, আ স ম আবদুর রবের গাড়ি চালকসহ ১০-১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা দাবি করেন।

গণফোরামের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর লতিফুল বারী হামীম বলেন, গতকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কামাল হোসেনসহ জোট নেতারা বেরিয়ে এসে মূল ফটকের সামনে গাড়িতে ওঠার পর হামলার ওই ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা নিয়ে এই হামলা চালায়। তারা স্যারের গাড়িতের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ফ্রন্টের নেতা আ স ম আবদুর রবের গাড়িচালক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেন, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সামনের রাস্তায় তাদের নেতাকর্মীদের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এ সময়ে নেতাকর্মীরা এদিক ওদিক ছোটোছুটি করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু করলে হামলাকারীরা সরে যায়।

শাহ আলী থানা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে কেউ তাদের কাছে আসেনি।

সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম। আমাদের প্রতি কী হয়েছে, তা চিন্তা করি না। কিন্তু শহীদদের তারা অবমাননা করেছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ শহীদদের আত্মা এতে কষ্ট পেয়েছে বলে তিনি জানান।

ড. কামাল বলেন, পয়সা নিয়ে ‘ভাড়াটিয়ারা’ এ হামলা করেছে। দুই পয়সা নিয়ে তারা এগুলো করেছে। আমি তোমাদের চার পয়সা দেব। তোমরা ওখান থেকে সরে যাও। কয় পয়সা পেয়ে তোমরা এগুলো করছো? এটা কোনো সুস্থ দেশপ্রেমিকের কাজ হতে পারে না। ক্ষোভের সঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এটা কি ভুলে গেছে তারা?’

আজকের (শুক্রবারের) ঘটনা নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি পাঠাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের আইজির কাছে অনেক কিছু আশা করা যায়। কিন্তু পুলিশদের সম্পর্কে যেসব কথা শোনেন, তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। আইজিপির উদ্দেশে বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, আমাদের কথাগুলো খুব গুরুত্বসহকারে দেখবেন। আপনার কাছে তথ্য দেওয়া হবে। বিশ্বস্ত লোক দিয়ে তদন্ত করাবেন। তদন্তে আমরা সাহায্য করব।’

বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার নিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ কার আদেশে অ্যারেস্ট করে? আমি প্রত্যেকটা অ্যারেস্টের বিস্তারিত তথ্য চাই।’ বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছেন, এ দেশের প্রতিটা মানুষ আইনের আশ্রয় পাবে। কিন্তু পুলিশ বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করছে।

পুলিশকে যারা ‘বেআইনি’ আদেশ দিচ্ছেন, তারা চিরস্থায়ী নয়, উল্লেখ করে ঐক্যফ্রন্টের এই আহ্বায়ক বলেন, বিনা অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করলে সংবিধান ভঙ্গ করা হয়। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও হয়রানি দেখতে হচ্ছে, জানিয়ে ড. কামাল বলেন, যারা দেশ শাসন করছে তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। তাদের তিনি মুখ ঢেকে চলতে বলেন।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবও হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে রব বলেন, নির্বাচন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেন সরে দাড়ায়, তাই ভয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু ভয় দেখিয়ে মাঠ থেকে আমাদের তাড়ানো যাবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার ও তার দলের লোকেরা এ হামলা করেছে। নির্বাচন কমিশনকে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আপনাদের তো বিব্রত হওয়ার কথা নয়, ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু তারা পারছে না। ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।’

২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকার কথা বলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। বলেন, ৩০ ডিসেম্বর জনগণ ব্যালট বিপ্লব করবে। ইসির কাছে কোনো রকম প্রতিকার পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, ইসি তাদের বিরুদ্ধে ও সরকারের পকেটে চলে যাওয়ার মতো আচরণ করছে। প্রধানমন্ত্রী প্রটোকল নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও মান্না অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মোহসীন মন্টু, জাফরউল্লাহ চৌধুরী, আবদুল মালেক রতন, রেজা কিবরিয়া প্রমুখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads