কোরবানির পশুর চামড়ার দর ও বেচাকেনা নিয়ে বিশৃঙ্খলা হওয়ার কথা স্বীকার করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, এবার তিন কারণে কাঁচা চামড়ার দরপতন হয়েছে। শিগগিরই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরো জানান, ঈদের আগে চামড়ার দাম কমানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা সঠিক ছিল। কাঁচা চামড়া রফতানির কোনো পরিকল্পনাও নেই সরকারের।
গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, গত তিন দশকের মধ্যে এবার সর্বনিম্ন দাঁড়িয়েছে কোরবানির পশুর চামড়ার দর। এমনকি অনুনয় করে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আসলে পত্র-পত্রিকায় দেখলাম চামড়া নিয়ে একটা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমি যখন দামটা কমালাম, তখন সাংবাদিকদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া দেখেছি দাম কেন কমালাম। তিনি বলেন, দাম কমানোর পরও কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে না। এর এক নম্বর কারণ হলো গতবারের চামড়া রয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, যারা ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের মালিক তারা বলছেন ব্যাংকের ঋণ সঠিক সময়ে পাননি। আর তিন নম্বর কারণ হচ্ছে সাভারে যে শিল্পগুলো হওয়ার কথা সেগুলো গড়ে ওঠেনি। নানা কারণে চামড়া কেনাবেচা নিয়ে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তবে ব্যবসায়ীরা গতকাল রোববার আশ্বাস দিয়েছেন- এটা থাকবে না, ঠিক হয়ে যাবে। আমরা যে দামটা কমিয়েছিলাম সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।’ কাঁচা চামড়া রফতানির কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কারণ, কাঁচা চামড়া রফতানি করলে দেশের চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকার এ খাতের উন্নয়নে সবকিছু করবে।
গত ৯ আগস্ট কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য গত বছরের চেয়ে কম দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম পাঁচ টাকা কমিয়ে ধরা হয় ৪৫-৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা।
ব্যাংকঋণের বিষয় ব্যবসায়ীদের সহায়তা করা হবে কি না- জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকঋণ নেওয়া-পাওয়া নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো হাত নেই। এটি গ্রাহক ও ব্যাংকের মধ্যকার বিষয়। গতকাল ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেছেন, যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা থাকবে না। দুয়েক দিনের মধ্যে অবসান হবে। আজ (গতকাল) থেকে ব্যাংক খোলা। আমার মনে হয়, সঙ্কটের সমাধান হবে। তিনি বলেন, সাভারে চামড়া কারখানাগুলো ঠিকভাবে চালু হয়নি। সেখানকার কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারও চালু হয়নি। মালিকরা জমির মালিকানার দলিলও পায়নি। মূলত এসব কারণেই কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আগামী নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তিন মাস আগে যে সরকার আসবে সে সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। আশা করি সব দল এ নির্বাচনে আসবে। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা এখন তৎপর রয়েছে।’ নির্বাচন কারো জন্য থেমে থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে বিএনপি নামক দলটি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। একটি দল তাদের বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমি মনে করি না।’