‘এখনো কিছু করতে পারিনি আমরা’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

কোটা নিয়ে পর্যালোচনা কমিটির বৈঠক

‘এখনো কিছু করতে পারিনি আমরা’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ অগাস্ট, ২০১৮

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা জানাতে এখনো পর্যালোচনা করছে এ সংক্রান্ত কমিটি। গতকাল রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের কক্ষে দুপুর ১২টায় বৈঠকে বসলেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কোটা পর্যালোচনা কমিটি।

বৈঠক শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিধি) ও কমিটির মুখপাত্র আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আমরা এখনো পর্যালোচনার মধ্যে আছি। বিভিন্ন দেশের রিপোর্ট দেখলেও আমরা কোনো কনক্রিট ডিসিশনে আসতে পারিনি। কোটা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন আরো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি। এর আগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া বাকিগুলো বাতিল হচ্ছে, এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও। আর মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে কি না, সে বিষয়ে আদালতের মতামত নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে মতামত দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কোটা কমিটির মুখপাত্র বলেন, কী কী দরকার সবকিছু তো পাইনি। যেটা যেটা পাচ্ছি, সেগুলো পর্যালোচনা করছি। কবে নাগাদ সিদ্ধান্ত আসবে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, দেখা যাক, এই মুহূর্তে বলা যাবে না। আপনারা দেখেছেন পর পর কয়েকটি মিটিং আমরা করেছি। আপনারা কী এখন আদালতেরও মতামত নেবেন- এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব বলেন, দেখা যাক। তিনি বলেন, আমাদের আরো অনেক রিপোর্ট পর্যালোচনা করার বাকি আছে।

কমিটি প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনো কিছু হয়নি, কোনো ইয়েই আমরা করতে পারিনি।’ কমিটির সদস্য ও সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব আকতারী মমতাজ বলেন, কোনো সিদ্ধান্ত আজো আসেনি।

এর আগে গত ১৩ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, কোটা নিয়ে সুপারিশ প্রায় চূড়ান্ত। আমরা মেধাকে প্রাধান্য দিয়ে অলমোস্ট (প্রায়) কোটা উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করব। তবে আদালতের একটা রায় রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। এ ব্যাপারে আদালতের মতামত চাইব, আদালত যদি মুক্তিযোদ্ধা কোটা উঠিয়ে দেয় তবে এ কোটাও থাকবে না। সরকারি চাকরিতে বাংলাদেশে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, জেলা ও নারী কোটা ১০ শতাংশ করে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা ৫ শতাংশ এবং ১ শতাংশ আছে প্রতিবন্ধী কোটা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এই কোটার সুবিধা সন্তানদেরও দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা নাতি-নাতনিদেরও দেওয়া হয়। আর সে সময় থেকেই প্রধানত জামায়াতপন্থিরা এই কোটা বাতিলের দাবিতে একাধিকবার আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়। তবে এবার কোনো বিশেষ কোটার কথা না বলে শুধু সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে গত ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলন শুরু হয়। তারা সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছে। গত ৮ থেকে ১১ এপ্রিল নানা ঘটনার পর ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কোটা থাকবে না। তবে গত ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। এখন এটি বাতিল হলে তিনি আদালত অবমাননায় পড়বেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সুপারিশ দিতে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি ৮ জুলাই বৈঠক করে। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে না পারার পর তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।

কোটা পর্যালোচনা কমিটির অন্য সদস্য হিসেবে আরো আছেন- লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব শহিদুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ, অর্থ বিভাগের সচিব মুসলিম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব অপরূপ চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads