টাঙ্গাইলে মধুপুরে চলন্ত বাসে কলেজ ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপাকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার দুই বছর পাঁচ মাসেও শেষ হয়নি। ২৪ মাস ধরে হাইকোর্টে ঝুলে আছে মামলাটির আপিল শুনানি। চাঞ্চল্যকর ওই হত্যা মামলার দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষে অভিযুক্তদের ফাঁসি কার্যকর দেখতে চায় রুপার পরিবার।
২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ঠ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে মেধাবী রুপাকে গণধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। রুপা সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ী গ্রমের প্রয়াত জেলহক প্রামানিকের মেয়ে।
পরের বছর ১২ফেব্রুয়ারী টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে চার আসামির ফাঁসি, একজনের সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেক আসামিকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই বছর ১৮ ফেব্রুয়ারী সাজাপ্রাপ্ত সব আসামি খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করে। মামলার বাদী রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান প্রামানিক জানান, এরপর ২৪ মাস ধরে ঝুলে আছে আপিল শুনানি।
তিনি আরো জানান, টাঙ্গাইলের আদালতে মামলার রায়ে তারা সন্তষ্ট হয়েছিলেন। রুপার মা হাসনা হেনা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মেয়েকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় জরিতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছিলাম। নিম্ন আদালতে তা পেয়েও যাই। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচারের দীর্ঘসূত্রতার অবসান চাই।
রুপাকে হত্যার পর সেদিন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পচিঁশমাইল এলাকায় বনের মধ্যে তার মরদেহ ফেলে রেখে যায় পরিবহন শ্রমিকরা। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা করে। পরদিন পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে রুপার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় যান এবং মরাদেহ শনাক্ত করেন।
২০১৭সালের ২৮আগষ্ট এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কের ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর এবং চালক হাবিবুর ও সুপারভাইজার সফর আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা প্রত্যেকই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এর নিম্ন আদালতে চার আসামি ময়মনসিংহের ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর ও চালক হাবিবুরকে ফাঁসি এবং সুপারভাইজার সফর আলীকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ক্ষতিপুরন হিসেবে ছোঁয়া পরিবহনের ওই বাসটি রুপার পরিবারকে দেওয়ার রায় দেন আদালত।
রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, জানিনা কবে বোন হত্যার বিচার পাব, দেশে আর কোন বোনের যেনস এরকম মৃত্যু না হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের নির্মমতা এড়াতে রুপার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।





