২২৪ বছরের প্রাচীন নয়াবাদ মসজিদ

প্রাচীন নয়াবাদ মসজিদ

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

২২৪ বছরের প্রাচীন নয়াবাদ মসজিদ

  • দিনাজপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৪ জুলাই, ২০১৮

প্রত্নতত্ত্বের এক অনুপম নিদর্শন দিনাজপুরের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ। স্থাপত্য শিল্পের ঐতিহ্য ধারণ করে আছে ২২৪ বছরের এই মসজিদ। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়াবাদ গ্রামের ঢেপা নদীর উত্তর-পশ্চিম তীরে ঐতিহ্যবাহী নয়াবাদ মসজিদ অবস্থিত। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার অদূরে ১ দশমিক ১৫ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদটি সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংস্কার করা হয়। মসজিদের সামনে রয়েছে মাদরাসা।  

মসজিদের প্রবেশদ্বারে স্থাপিত ফার্সি ভাষার এক শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের শাসনকালে মসজিদটি নির্মিত হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, ১৮ শতকের মধ্যভাগে বিখ্যাত কান্তজিউ মন্দির নির্মাণের জন্য স্থাপত্যকর্মী ও শ্রমিকরা সুদূর আরব থেকে এসেছিলেন। তারা মন্দিরের অদূরে নয়াবাদে মোকাম তৈরি করে বসবাসকালে নিজেদের ইবাদত বন্দেগির জন্য নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণ করেন।  

অনুপম ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের সমুজ্জ্বল মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। এর চার কোনায় রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির টাওয়ার। বাইরের দিক থেকে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৪৫ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার। দেয়ালের প্রশস্ততা ১ দশমিক ১০ মিটার। মসজিদে প্রবেশের পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি খিলান। মাঝের খিলানের উচ্চতা ১ দশমিক ৯৫ মিটার ও প্রস্থ ১ দশমিক ১৫ মিটার। পাশের খিলান দুটি সমমাপের ও উচ্চতায় অপেক্ষাকৃত ছোট।  

মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি জানালা রয়েছে। প্রবেশদ্বার ও জানালার খিলানগুলো বহু খাঁজবিশিষ্ট। মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দিকে রয়েছে তিনটি মিহরাব। মাঝের মিহরাবের উচ্চতা ২ দশমিক ৩০ মিটার ও প্রস্থ ১ দশমিক ০৮ মিটার। দুই পাশের মিহরাব দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট। মসজিদের অর্ধগোলাকৃতির তিনটি গম্বুজের মধ্যে মাঝেরটি অন্য দুটির চেয়ে কিছুটা উঁচু। মসজিদটির কার্নিস ও পেরাপিট সমান্তরাল। মসজিদের চার কোণের টাওয়ারের মধ্যে দুটির উপর কুবল রয়েছে। বাকি দুটির উপর রয়েছে ছোট গম্বুজ। টাওয়ারগুলো সাধারণ ইট ও পলেস্তারা দিয়ে নির্মিত। সমস্ত দেয়ালজুড়ে বহু পোড়ামাটির ফলক রয়েছে। তবে পোড়ামাটির নকশাগুলো দেয়ালের অনেক জায়গায় ক্ষয় হয়েছে। এর ফলে দেয়ালের ফলকগুলোর মধ্যে জমেছে ময়লা। অধিকাংশ ফলকে রয়েছে ফুল ও লতাপাতার নকশা। মোট ফলকের সংখ্যা ১০৪টি। তবে এসব ফলকের অলঙ্করণ অনেকটাই নষ্টের পথে।  

২২৪ বছরের প্রাচীন ও স্থাপত্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন নয়াবাদ মসজিদ পরিদর্শনে আসেন দেশ-বিদেশের অগণিত পর্যটক। এখনো নয়াবাদ মসজিদ পুরাকীর্তির অনুকরণীয় দর্শনীয় নিদর্শন হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে সঠিক ও উপযোগী সংস্কার করে মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন নয়াবাদ মসজিদকে আরো যত্নের মাধ্যমে ধরে রাখার দাবি রয়েছে সবার। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads