১৫ বছর পেরিয়ে গ্যালারি কায়া

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

১৫ বছর পেরিয়ে গ্যালারি কায়া

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই, ২০১৯

গ্যালারি কায়া তার পথচলার ১৫তম বর্ষ পার করল। এ দীর্ঘ পরিক্রমায় বাংলাদেশে চিত্রশিল্পীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে গ্যালারি কায়া। পুরনো গুণী চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে নবীন শিল্পীদের সেতুবন্ধন তৈরি করেছে কায়া। এত বছরে শিল্পরসিকদের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করেছে এই গ্যালারি। যে ১০৮টি প্রদর্শনী সেখানে হয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটি ছিল বৈচিত্র্যময়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রদর্শনীতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কায়া সব সময়ই তারুণ্যের জয়জয়কার তুলেছে। তরুণ ও জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে করেছে প্রদর্শনী। সেখানে আমিনুল ইসলাম থেকে শুরু করে শাহনূর মামুন, মুর্তজা বশীর থেকে সোহাগ পারভেজের ছবি গুরুত্ব পেয়েছে। পাশাপাশি তারা করেছে বেশ কিছু আর্ট ক্যাম্প ও আর্ট ট্রিপ। সেসব ট্রিপে অল্প কজন শিল্পী মিলে গিয়েছেন বিশ্বের ঐতিহাসিক বা মনোরম কোনো প্রাকৃতিক অঞ্চলে। কখনো কম্বোডিয়ার আঙ্কর ওয়াট বা ভুটানের প্রাকৃতিক কোনো জায়গায় একাত্ম হয়ে তারা এঁকেছেন। সেসব ছবি নিয়ে পরে হয়েছে প্রদর্শনী।

গ্যালারি কায়ার ১৫তম বর্ষ পাড়ি দেওয়া নিয়ে প্রথিতযশা ভাস্করশিল্পী হামিদুজ্জামান বলেন, ‘গ্যালারি কায়া ১৫ পেরিয়ে ১৬-তে পড়ল। আমার মনে হয়, বাংলাদেশে কোনো গ্যালারি এত দিন এভাবে চলেনি। আমি এদিক দিয়ে দেখি গৌতম খুবই সিসটেমেটিক। দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখেছি গ্যালারি কায়ার কারণে বেশ কিছু তরুণ চিত্রশিল্পীরা উঠে আসছে। নতুন জেনারেশনে যারা ভালো কাজ করছে তাদের এই গ্যালারি বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সেদিক থেকে গ্যালারিটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে গ্যালারিটি ঠিকই এগিয়ে চলেছে।

খেয়াল করলে দেখবেন গ্যালারি কিন্তু রাজধানীর একটি পাশে অবস্থিত। উত্তরা শহরের একপাশে অবস্থিত। সেই জায়গা থেকে গ্যালারি কায়া চিত্র শিল্পের যে আলাদা আবহ তৈরি করতে পেরেছে এটাকে আমি অনেক বড় অর্জন বলে মনে করি। এ জন্য আমি গৌতমকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ও গ্যালারির শিল্পীদের সামঞ্জস্য বজায় রেখেছে। মানের ক্ষেত্রে এ গ্যালারি কখনই আপস করেনি।

আমি গৌতমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মিশেছি। আসলে একটি গ্যালারি চালানো নেহাত সহজ বিষয় নয়। এটি অনেক কঠিন। তার ওপর আবার দীর্ঘদিন ধরে চালানো। অবশ্যই গৌতমের অনেক ধৈর্য আছে। টানা ১৫ বছর ধরে কাজ করছে ও। নতুন চিত্রশিল্পীদের উৎসাহ জোগাচ্ছে। বলে, আমি আছি, তোমরা কাজ শুরু কর। আমি কোরিয়ায় একটি এক্সিবিশনে গিয়েছিলাম। সেই গ্যালারিটি ছোট হলেও কিন্তু মানে আভিজাত্য চিল। গ্যালারি বড় হলেই যে ভালো হয় তা কিন্তু নয়। ছোট গ্যালারিতে যদি ভালো ভালো কাজ থাকে তাহলে ওই গ্যালারিরও আভিজাত্য ফুটে ওঠে।  কায়া এই ধরনের গ্যালারি। আমি চাই, তারা অনেক দূর এগিয়ে যাক।

তরুণ চিত্রশিল্পী শাহনূর মামুন বলেন, ‘গ্যালারি কায়া একটি স্বচ্ছ গ্যালারি। স্বচ্ছ তাদের চিন্তাভাবনা। তারা পুরনো শিল্পীদের সঙ্গে নতুনদের মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। দেশীয় চারুকলার অগ্রযাত্রায় তাদের অগ্রগামী ভূমিকা রয়েছে। আমি মুর্তজা বশির স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। তাদের মতো সিনিয়রদের নিয়ে একসঙ্গে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছি। তাদের কাজকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তারা আমাদের কাজ সম্পর্কে সুপরামর্শ দিয়েছেন। এই যে সিনিয়র শিল্পীদের এত কাছে যাওয়ার এ সুযোগ পুরোটাই করে দিয়েছে গ্যালারি কায়া। তাদের সঙ্গে একই এক্সিবিশনে আমার ছবি থাকায় আমি নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি। কর্মশালায় থাকাকালে সিনিয়রদের সম্পর্কে জানা, চিত্রশিল্পের ইতিহাস, গল্পসহ সার্বিক বিষয় উঠে আসে। গ্যালারি কায়া জলরঙের ওপর বেশি জোর দেয়। গৌতমদা অসাধারণ শিল্পমনা একজন মানুষ। তিনি যা করেন মন থেকে করেন। এভাবেই গ্যালারি কায়া আরো এগিয়ে যাবে।

কায়ার পরিচালক শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘যখন গ্যালারিটা শুরু করি, তখন জানতাম না কত দিন এটা চালাতে পারব। ১৫ বছরে অনেক কাজ করেছি। অনেক স্বপ্ন ছিল, যা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই স্বপ্নগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে। এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে যে বিগত দিনে যাদের সঙ্গে চলেছি, যাদের সহযোগিতা পেয়েছি, সেই শিক্ষক, শিল্পী, বন্ধুরা সবাই আজ পর্যন্ত আমাকে সহযোগিতা করে চলেছেন।

তিনি বলেন, ‘গ্যালারি কায়া সবসময় অঙ্কন শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। আমরা আমাদের গ্যালারি কখনই চিত্রপ্রদর্শনীর জন্য ভাড়া দেইনি। যখন আমাদের গ্যালারিতে চিত্রপ্রদর্শনী থাকে না তখনো আমরা গ্যালারি খোলা রাখি। আর আমরা যেসব প্রদর্শনী করেছি প্রায় প্রত্যেক প্রদর্শনী লক্ষ করলে দেখবেন সেখানে সিনিয়র শিল্পীদের সঙ্গে জুনিয়র শিল্পীদেরও প্রাধান্য দিয়েছি। আমরা মনে করি, সিনিয়রদের সঙ্গে জুনিয়রদের কাজে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তাদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। কারণ তাদের সুযোগ না দিলে তারা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে না। আমি মনে করি, বাংলাদেশে আরো পরিচ্ছন্ন আর্ট মার্কেটের প্রয়োজন। শুধু বাণিজ্যিকভাবে নয়। চিত্রশিল্পীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ছাপচিত্রকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন তারা। ছাপা স্টুডিও বলে একটা উদ্যোগ নিয়েছেন তারা, যেখানে ইতোমধ্যে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করেছেন শিল্পীরা।

প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর উদযাপনে যৌথ প্রদর্শনীতে রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতিমান ৪৩ জন আধুনিক ও সমসাময়িক শিল্পীর ৭২টি চিত্রকর্ম। ভারতের মকবুল ফিদা হুসেন, গণেশ হালুই, কে জি সুব্রামানিয়াম, এম এফ হুসেইন, এস এইচ রাজা, অমিতাভ ব্যানার্জিসহ আছেন বাংলাদেশের সফিউদ্দিন আহমেদ, মুর্তজা বশীর, আমিনুল ইসলাম, দেবদাস চক্রবর্তী, রফিকুন নবী, জামাল আহমেদের ছবি। গ্যালারি ঘুরে আসা যাবে ২০ জুলাই পর্যন্ত। কায়ার দরজা খোলা থাকে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads